AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘‘আপনাদের কাছে যিনি উত্তমকুমার, তিনি আমার ‘জ্যাজান’, সম্পর্কে আমার জ্যাঠামশাই’’, TV9-এর জন্য লিখলেন ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায়

Uttam Kumar Birthday: TV9 বাংলার কাছে স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন তরুণকুমার এবং সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলম ধরলেন তাঁর ‘জ্যাঠামশাই’কে নিয়ে। যিনি আম-বাঙালির মহানায়ক।

‘‘আপনাদের কাছে যিনি উত্তমকুমার, তিনি আমার ‘জ্যাজান’, সম্পর্কে আমার জ্যাঠামশাই’’, TV9-এর জন্য লিখলেন ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায়
| Edited By: | Updated on: Sep 03, 2021 | 3:22 PM
Share

মহানায়ক উত্তমকুমারের আজ জন্মদিন। কোথাও মাল্যদান। কোথাও মহানায়কের ছবি দেখানো, কোথাও বা স্মৃতিচারণ। দিনভর স্মরণ চলছে নানা ভাবে। ভবানীপুরের বাড়িতে এক সময় জন্মদিন পালন করতেন উত্তম কুমার। কিন্তু তা পালন হত সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ। কেন? বাড়ির ছোটদের কাছে কেমন ছিলেন তিনি? TV9 বাংলার কাছে স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন তরুণকুমার এবং সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা ঝিমলি বন্দ্যোপাধ্যায়। কলম ধরলেন তাঁর ‘জ্যাঠামশাই’কে নিয়ে। যিনি আম-বাঙালির মহানায়ক।

‘জ্যাজান’। আপনাদের কাছে যিনি উত্তমকুমার, তিনি আমার ‘জ্যাজান’। সম্পর্কে আমার জ্যাঠামশাই। আমি আপনাদের মহানায়ককে ‘জ্যাজান’ বলেই ডাকতাম। আজ ‘জ্যাজান’-এর জন্মদিন।

আমার নাম ঝিমলি। আমাকে ‘জ্যাজান’ ঝিমি বলে ডাকত। পুজোর সময় শাড়ি কিনে দিত। অনেক ছোট বয়স থেকেই শাড়ি পরতাম আমরা। মনে আছে, ১২ বছর বয়স থেকেই শাড়ি পরতাম। লক্ষ্মীপুজো হয় আমাদের বাড়িতে। ১৯৭৯-এ আমার জন্মদিনের দিন—নিউ মার্কেটে ‘বন্দনা’ নামে একটা দোকান আছে—অবশ্য এখনও আছে কি না, জানি না, তখন ছিল, সেখান থেকে শাড়ি কিনে এনে উপহার দিয়েছিল ‘জ্যাজান’। সব সময় নিজে তো যেতে পারত না। জেঠিমাকে বলে দিত। জেঠিমা নিয়ে আসত। কিন্তু ১৯৭৯-এ নিজেই আমার জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েছিল। ওটা মাড়োয়ারিদের দোকান ছিল। মূলত অভিজাতরাই যেতেন ওই দোকানে। তারপরের বছরই তো চলে গেল ‘জ্যাজান’। তখন আমার ১৬ বছর বয়স।

Uttam-Web-inside-1

‘জ্যাজান’ বা আমার বাবা (তরুণকুমার), আমাদের বাড়ি থেকে যাঁরা অভিনয় করতে গিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু সেটি চাকরি হিসেবেই দেখতেন। চাকরি সূত্রে ওঁদের ফিল্মে যাওয়া। আমাদের বাড়ি অত্যন্ত কনজারভেটিভ। বাড়িতে ‘জ্যাজান’, বাবা সকলেরই একটা অনুশাসন ছিল। খুব কড়া শাসন নয়। কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের মানুষ যেমন হয়। ‘একা কোথাও বেরবে না’, ‘কারও সঙ্গে যাও’ অথবা বাড়ির বাইরে গেলে গুরুজনেরা জানতে চাইতেন, ‘কোথায় যাচ্ছ?’ এখনকার দিনের মেয়েরা যেমন, আমরা তেমন ছিলাম না। আগেকার দিনেও ‘মর্ডান’ যদি বলা হয়, আমরা তেমনও নই। আমরা অতি ঘরোয়া। হ্যাঁ, এটা ঠিক, পার্টিতে গেলে আমরা সেখানকার মতো, সে ভাবেই সেজেগুজে যেতাম। তার মানে উগ্র কিছু নয়। এক্সপোজড কিছু পছন্দ করতেন না গুরুজনেরা। আমার মা (সুব্রতা চট্টোপাধ্যায়) বলতেন, ‘‘শাড়ি পরেও মর্ডান হওয়া যায়, স্টাইল করা যায়।’’ কোনও উগ্র সাজপোশাক আমরা করিনি কখনও।

‘জ্যাজান’-এর কাছে আদরও পেয়েছি, আবার শাসনও করত। আমার বাবাও শাসন করত, আদরও দিত। বাড়িতে উত্তমকুমার বা তরুণকুমার একেবারে ঘরোয়া মানুষ। কাজের জায়গায় কাজ। ওঁরা বলতেন, ‘‘কাজের জায়গায় বাড়িটা এক্সপোজ করবে না।’’ কাজটা কাজের জায়গায় ফেলে আসতেন। কাজ নিয়ে বাড়িতে আলোচনা হত না। অন্তত আমাদের সামনে হত না। বড়রা আলোচনা করলেও, সে জানার অধিকার আমাদের ছিল না। আমরা, এই বাড়ির ছেলে-মেয়েরা অনেক বেশি বয়সেই ইন্ডাস্ট্রিকে জানতে পেরেছি। বাড়িতে কেউ এলেন, আমাদের বলা হল, ‘অমুক কাকু এসেছেন, নমস্কার করো’ অথবা, ‘অমুক পিসি, নমস্কার করো।’ তখন বুঝতাম, আরে! এঁদের তো ফিল্মে দেখেছি। ওই নমস্কার করা পর্যন্ত আমাদের অ্যালাউ করা হত। তারপর ওঁরা যখন আড্ডা মারতেন, তখন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার অনুমতি ছিল না।

‘জ্যাজান’ আর বাবার মধ্যে একটা অন্যতম পার্থক্য ছিল, ‘জ্যাজান’ রাগলে চিৎকার করত না। বডি মুভমেন্টে বোঝা যেত, রেগে গিয়েছেন। হয়তো বসে আছেন। কোনও কথা পছন্দ না-হলে উঠে বেরিয়ে যেতেন। অথবা আস্তে কোনও কথা বলে নিজের বিরক্তি বুঝিয়ে দিতেন। আর বাবা উল্টো ছিল। রাগ হলে তুঙ্গে উঠে গেল, চিৎকার করল। আবার রাগ কমেও যেত তাড়াতাড়ি।

Uttam-Web-inside-2

জেঠিমাকে আমি ‘মামি’ বলে ডাকতাম। এরও একটা গল্প আছে। দাদা, মানে উত্তম কুমার এবং গৌরীদেবীর ছেলে গৌতম, বাবাকে ‘বাবি’ বলত। মাকে ‘মামি’ বলত। ইংরেজিতে ‘মাম্মি’ বলে। ও সেটা থেকেই ‘মামি’ বলত। সেটা দেখে আমিও ‘মামি’ বলতাম। দাদা আমার থেকে ১৩ বছরের বড় ছিল।

মামি কিন্তু আমাকে খুব ভালবাসত। মামির মেয়ে ছিল না। মেয়ের শখ ছিল। আমি আর মৌসুমি, মানে বরুণকুমারের মেয়ে, মৌসুমি, ওর নাম কুমকুম। বাড়িতে আমরা দু’টোই মেয়ে। মামি সব সময় বলত, ‘‘আমার দুটো মেয়ে।’’ আমাদের দু’জনকেই খুব ভালবাসত। হ্ঠাৎ করেই প্ল্যান করে বলত, ‘‘চল সিনেমা দেখে আসি’’। অমিতাভ বচ্চনের সেই সময়ের সিনেমা, ‘কভি কভি’, ‘অভিমান’… মামি আমাদের দেখাতে নিয়ে যেত। বাবা রাগ করত। বলত, ‘‘ওদের অভ্যেস খারাপ হয়ে যাবে।’’ মামি বলত, ‘‘না, না। এই তো ছুটি আছে ওদের, যাবে আমার সঙ্গে।’’ হয়তো নাইট শোয়ে সিনেমা দেখাতে নিয়ে গিয়েছে। বাড়ি ফেরার পর ঘরে পৌঁছে দিয়ে যেত। যদি বাবা রাগ করে, তাই ওই ব্যবস্থা…। গড়িয়াহাটে পুরনো দোকান ‘ঢাকেশ্বরী’ ওখান থেকে বেনারসি কিনে দিত মামি। তখন তো ফাঁকা ছিল গড়িয়াহাট, আমাদের সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে শাড়ি কিনে দিত। খুব হুল্লোড়ে মানুষ ছিল।

সেপ্টেম্বরে ওঁদের তিন জনেরই জন্মদিন। ৩ তারিখ ‘জ্যাজান’-এর। ৭ তারিখ দাদার। আর ২৭ তারিখ মামির। গৌরির ‘গৌ’ আর উত্তমের ‘তম’ দিয়ে দাদার নাম গৌতম রাখা হয়েছিল। ২৭ তারিখ একসঙ্গে তিন জনের জন্মদিন পালন হত বাড়িতে। আমরা বাচ্চারা সন্ধেয় থেকে যেতাম। রাত ন’টার পর বড়দের পার্টি শুরু হয়ে গেলে, ওঁরা এসি ঘরে ঢুকে গেলে, আমাদের ছুটি হয়ে যেত। তারপর আর আমাদের থাকার অনুমতি ছিল না। লেট নাইট পার্টিতে আমরা থাকতাম না। এখন যেমন বাবা, মা, বাচ্চারা একসঙ্গে পার্টি করে, আমাদের তা ছিল না।

Uttam-Web-inside-3

বছর শেষের পার্টিতেও ‘জ্যাজান’, বাবা, মা যেত। আমরা যেতাম না। বাবাদের ৩১ ডিসেম্বর রাতে ক্লাবে যাওয়ার অভ্যেস ছিল। ২৪, ২৫ ডিসেম্বর ক্লাবে আমাদের, মানে বাচ্চাদের, ক্লাব পার্টি হত। ক্রিসমাসের দিন। ৩১-এ আমরা যেতাম না। আমরা দেখতাম, ওঁরা বাড়ি থেকে স্যুট পরে বেরিয়ে যাচ্ছেন। সকালে উঠে দেখতাম বেলুন, বাঁশি নিয়ে এসেছেন অনেক…। কিন্তু পার্টিতে আমরা যেতাম না।

‘জ্যাজান’-এর গার্ডিয়ানশিপ বাড়ির বাইরে, শুটিংয়ে একবারই দেখার সুযোগ হয়েছিল আমার। ‘অগ্নিশ্বর’-এর শুটিংয়ের তোপচাঁচিতে সাত বছর বয়সে গিয়েছিলাম, মায়ের সঙ্গে। মা-ও অভিনয় করেছিলেন। সেখানে ‘জ্যাজান’-এর গার্ডিয়ানশিপও দেখেছি, পার্সোনালিটিও দেখেছি। আমি যখন ছোট, তখন ওঁর গোল্ডেন সময়। ফলে ‘জ্যাজান’ যে মহানায়ক, সেটা বড় হয়ে বুঝেছি। কারণ বাড়িতে তো উত্তম কুমার নন, বাড়িতে তো ‘জ্যাজান’ হয়েই থাকতেন…