সিপিএম-এ বিজেপির রূপা, অনিন্দ্য!… ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ত্যাগের কথা রাহুল-শ্রীলেখার মুখে

শ্রীলেখা-রাহুল এই পোস্ট দিলেও সিপিএমের যুবনেতা শতরূপ ঘোষকে যদিও এ দিন রূপা ও অনিন্দ্যর সঙ্গে ছবি শেয়ার করতে দেখা যায়। তাঁর কমেন্ট বক্সে প্রযোজক রানা সরকার জিজ্ঞাসা করেন, রূপা সিপিএমে যোগদান করেছেন কিনা। উত্তরে শতরূপ জানান, 'হ্যাঁ'।

সিপিএম-এ বিজেপির রূপা, অনিন্দ্য!... ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ত্যাগের কথা রাহুল-শ্রীলেখার মুখে
ক্ষোভ উগরে দিয়ে দল ত্যাগের কথা রাহুল-শ্রীলেখার মুখে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 16, 2021 | 11:30 PM

এ যেন উলটপূরাণ। বিজেপি’র হয়ে ক’দিন আগেই প্রচার করেছেন ওঁরা। কটাক্ষ করেছেন বিরোধী শিবিরকে। করেছেন চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ। এ বার টলিপাড়ার দুই অভিনেতা ও বিজেপি কর্মী রূপা ভট্টাচার্য ও অনিন্দ্য পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখা গেল সিপিএম-এর এক মিছিলে। সোমবার যাদবপুরে সিপিএম-র শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ৫০০ দিন উদযাপন উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল তাতেই হাজির ছিলেন তাঁরা। আর এখানেই বিপত্তি। অনিন্দ্য-রূপাকে নিজের দলের মিছিলে অংশ নিতে দেখে ক্ষোভ উগরে দিলেন দুই বাম সমর্থক অভিনেতা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রীলেখা মিত্র।

অনিন্দ্য ও রূপার এ দিনের কর্মকাণ্ডে যোগদানের পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন রাহুল। রূপা-অনিন্দ্যর এই হঠাৎ আগমনকে কটাক্ষ করে রাহুল লেখেন, “আমি কোনো প্রলোভন বা ক্ষমতার কারণে রাজনীতি করিনা|আমার রাজনীতি একান্তই আদর্শগত| সিপিএমের মঞ্চে যদি টিকিট না পাওয়া হতাশ বিজেপি জায়গা পায় তাহলে আমি আজ এই মুহূর্ত থেকে এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলাম|

সিপিএম ছাড়ার কথা ঘোষণা করে তিনি আরও যোগ করেন, “আমার বামপন্থা সিপিএম মুখাপেক্ষী নয়|যে একবারের জন্য ও সাম্প্রদায়িক দলের সাথে জড়িয়েছে,বিশেষত সে যদি সেলিব্রিটি হয়,তার সাথে কোনোদিন এক মঞ্চে আমি থাকব না| সিপিএম ভেবে দেখুক আমাদের প্রয়োজন,না তাদের|”

অন্যদিকে অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও রাহুলের কথার সমর্থনে নিজের প্রোফাইল থেকে পোস্টে লেখেন, “নিজেকে কমিউনিস্ট বলার সাহস আমার নেই, কিন্তু সারাজীবন বাম মতাদর্শ অনুসরণ করে এসেছি আমি। আপনার কী মনে হয় অন্যান্য দলের থেকে আমার কাছে অফার আসেনি? যদি সেই অফার গ্রহণ করতাম তবে জীবন আরও ভাল হত। কিন্তু আমি আমার মতাদর্শের পাশে দাঁড়িয়েছি। যখনই দরকার পড়েছে দলের জন্য সারা রাজ্যে প্রচার করেছি। কখনও কিছু বলিনি।” শ্রীলেখা যোগ করেন, ” আমরা লিবারাল এই মর্মে যদি ‘মানুষের জন্য কাজ করতে চাওয়ার দল’ যারা বিজেপিতে যোগদান করেছিল তাঁদের সিপিএমের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে দেখা যায় তবে অনেক অপমান আর কষ্ট নিয়ে বলছি সিপিএমের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করছি।” বিধানসভা নির্বাচনের সময় যেভাবে তাঁর নামকে বিকৃত করে ‘ছিলেখা’ ‘ছিপিএম’ বলা হয়েছে তা নিয়েও সরব হয়ে অভিনেত্রী বলেন, “ওঁদের সঙ্গে একই মঞ্চ শেয়ার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি।”

শ্রীলেখা-রাহুল এই পোস্ট দিলেও সিপিএমের যুবনেতা শতরূপ ঘোষকে যদিও এ দিন রূপা ও অনিন্দ্যর সঙ্গে ছবি শেয়ার করতে দেখা যায়। তাঁর কমেন্ট বক্সে প্রযোজক রানা সরকার জিজ্ঞাসা করেন, রূপা সিপিএমে যোগদান করেছেন কিনা। উত্তরে শতরূপ জানান, ‘হ্যাঁ’।

প্রসঙ্গত, এ বছর বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের হয়ে শুধু ডিজিটাল প্রচারই নয়, মাঠে-ঘাটে-ব্রিগেডে যে মুষ্টিমেয় সেলেবকে প্রচারে অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল তাঁদের মধ্যে শ্রীলেখা ও রাহুল অন্যতম। টলিপাড়ায় ভোটের ঠিক আগে যখন বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক উঠেছিল তখন খোলাখুলি নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে সরব হয়েছিলেন ওঁরা। যাঁদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তাঁদেরকেই একমঞ্চে দেখে ক্ষুব্ধ রাহুল-শ্রীলেখারা।

কেন হঠাৎ বিজেপি ছেড়ে সিপিএমের মিছিলে? এ প্রশ্নের উত্তরে এ দিন টিভিনাইন বাংলাকে অনিন্দ্য বলেন, “সিপিএমই একমাত্র বিকল্প। যে কাজটা এরা করেছে ঠিক জায়গায় ঘা টা দিয়েছে। বুদ্ধিভিত্তিক যুদ্ধের নিয়ম হচ্ছে সব সময় শত্রুপক্ষের শক্ত জায়গায় ঘা দিতে হয়।” পাশাপাশি তাঁর মুখে রেড ভলেন্টিয়ারসদের প্রশংসায় শোনা যায়। অন্যদিকে রূপা বলেন, ” কোভিড-লকডাউনের সময় প্রত্যেক মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার যে চেষ্টা সেটিকে আমি কোনও রাজনৈতিক রঙে মেপে দেওয়ার ভীষণ বিরোধী। যারা এই অন্নটা তুলে দিচ্ছেন তাঁরা কি ভাত দেওয়ার সময় জিজ্ঞাসা করেছেন আপনাকে ভাতটা দিচ্ছি, আমাকে কি ভোটটা দিয়েছেন? বিধানসভায় আসনসংখ্যা শূন্য হয়ে যাওয়ার পরেও যে স্পিরিটে ওঁরা কাজ করেছে সেই কাজকে কেউ সমর্থন জানাবে না এমন মানুষ বোধহয় নেই। সেই কারণেই এসেছি।”