আমি ভীত। আমি শিহরিত। ঘটনার কথা ভাবলেই বারেবারে চমকে উঠছি। রাতের অন্ধকারে এমন ভয়াবহ ঘটনা আমারই বাংলার বুকে! এ কী অরাজকতা। এ কী অন্ধকার সময়!
তবে এই ভয় পাওয়ার শুরু কিন্তু এখন নয়… এর আগেও পুলিশ এবং দুষ্কৃতীদের নিয়ে যে কোনও অসামাজিক কাজকর্ম করা, ভোট লুট করা, যারা বিরোধী পক্ষ তাঁদের ভয় দেখানো, সেটা তো শাসকদলের অধিকারের মধ্যেই পড়ে গিয়েছিল। এবং পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ভয় বা আতঙ্কে বা পুলিশের মিথ্যে মামলার জন্য তাঁরা মুখ খুলতে পারছিলেন না। কিন্তু দেখা গেল বেশিরভাগ জায়গায় শাসকদলের লোকজন এতটাই বেশি ক্ষমতাভোগী ‘আর কে কী করতে পারে দেখি’, ‘পুলিশকে তো আমি থোড়াই কেয়ার করি…’ এই মানসিকতায় তাঁরা নিজেদেরও ইগোর জায়গায় লোক মারতে শুরু করেছে।
রামপুরহাটের এই ভয়ঙ্কর ঘটনার আগুনের আঁচ নিঃসন্দেহে সেই প্রতিবেশীর বাড়িতেও ছড়াবে, যারা নিরপেক্ষ। আপানাদের বলছি, একটু ভাবুন… একটা ঘটনা ঘটল, তৃণমূলের উপ-প্রধান মারা গেলেন, তারপর তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজন এভাবে অত্যাচার চালাল, নিরীহ মহিলা ও শিশুদের দরজা বন্ধ করে শিকল তুলে কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দিল, হঠাৎ করে সংঘটিত হওয়ার ঘটনা নয়। অপরাধটা অনেকক্ষণ ধরে অনুষ্ঠিত হল, অথচ পুলিশ এল না। যেখানে এই গ্রাম থেকে থানার দূরত্ব যা শুনলাম দশ মিনিটের মধ্যেই, আজকের মোবাইলের যুগে পুলিশ এসে পৌঁছতে পারল না, পুলিশ জানতে পারল না এটা কি বিশ্বাস করা সম্ভব?
মজার ঘটনা বীরভূমের শাসকদলের এই মুহূর্তে সর্বেসর্বা যার মাঝেমধ্যেই আবার শরীর খারাপ হয়, সেই অনুব্রত মণ্ডল তিনি বলেই দিলেন আগে থেকে যে শর্ট সার্কিট থেকে ঘটনা ঘটতে পারে। তারপর ঢোক গিলে বললেন, ‘আমি অবশ্য ওখানে ছিলাম না…’। অর্থাৎ আবার শাক দিয়ে মাছ ঢাকা দেওয়ার এক প্রচেষ্টা শুরু।
আমার মনে হয় পশ্চিমবঙ্গের যে কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক যে কোনও মানুষের তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত এই ঘটনার বিরুদ্ধে। অমুক রাজ্যে, তমুক রাজ্যে কী হচ্ছে দেখুন আর পশ্চিমবঙ্গ একেবারে ঠাণ্ডা, এই কথা একেবারেই মিথ্যে-তা আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। পুলিশ যে ব্যর্থ, পুলিশ যে দলদাস-তা সবার সামনে এসে গিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা কিছুই নেই। তা নগ্নভাবে দাঁত নখ বের করে বেরিয়ে পড়েছে।