দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার: টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন রমরমা না হলেও মাদক সেবনে কম যায় না টলিউডও। গাঁজা তো চলেই। মাঝে মধ্যেই নাকি জায়গাই করে নেয় এলএসডি, কোকেনের মতো মাদকও। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যেই সেই কথা বলেছেন প্রযোজক রানা সরকার। শাহরুখ খানের পুত্র আরিয়ান খানের গ্রেফতারির পরেই রানা ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। সেই পোস্টে তিনি লিখেছেন, “কলকাতায় যেসব সেলিব্রিটিরা নেশার সঙ্গে জড়িত এখনই এসব ছেড়ে দিন…”
পোস্টে তিনি আরও লিখেছেন, “মেগা সিরিয়ালের ফ্লোরে, ফিল্মের মেকআপ রুমে , ফটোশুটে, পাবলিক প্লেসে সেলিব্রিটিরা বেপরোয়াভাবে নেশা করছে শোনা যাচ্ছে..”। রানার অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নাকি পরিচালক, প্রযোজক ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ এই কাজকে প্রশ্রয়ই দিচ্ছে। তাঁর সাবধানবাণী ও একই সঙ্গে অনুরোধ, “যেকোনো সময় ধরা পরে যাবেন…পরিবারের কথা ভাবুন…”
Tv9 বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও রানা বলেছেন, “দু-তিনটে গ্রুপ আছে। বড় স্টাররা জড়িত সেটা নয়। কিছু স্টার তো আছেন যাঁরা জড়িত। পরিচালক কিংবা অন্যান্য কলাকুশলীরা জড়িত বলে আমার যেটুকু মনে হয়। সবচেয়ে ক্ষতিকারক বিষয় একজন পরিচালক কিংবা একজন অভিনেতা যদি এরকম জিনিস শুরু করে দেন অন্যদের উপরও এক ধরনের প্রভাব চলে আসে। কীভাবে এই নেশার চক্র চলছে, খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রশাসনের।”
টলিউড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন তারকা মাদকের নেশায় জড়িয়ে ফিরে এসেছেন সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে। রানার আশঙ্কা তাঁরাও আবার এই নেশায় জড়িয়ে পড়তে পারেন, যদি সঠিক সময় রাশ না টানা হয়। তিনি বলেছেন, “যাঁরা মাদকের নেশা থেকে বেরিয়ে এসেছেন, তাঁর এখন ইন্ডাস্ট্রিতে ভাল কাজ করছেন। আমার মনে হয় আর্টিস্ট ফোরামের অ্যান্টি অ্যাডিকশন সেল তৈরি করা উচিত। কাজের জায়গায় কেন এই নেশা হবে? এটা যাতে না হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব দায়িত্বপ্রাপ্তদের।”
রানা সরকারের এই প্রকাশ্য মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ খুলেছেন। তিনি একটা সময় মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন। সেই নেশা থেকে তিনি বেরিয়ে এসেছেন। TV9 বাংলাকে তিনি বলেছেন, “টলিউডে আমি আজ পর্যন্ত এমন কোনও গ্যাদারিং দেখিনি, যেখানে ড্রাগসকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে কিংবা কোনওরকম নার্কোটিক্স দ্রব্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। আমি নিজে যখন জড়িয়ে পড়েছিলাম, তখন কিন্তু টলিউডের কোনও বৃত্তের সঙ্গে জড়াইনি। আমাদের এখানে বিষয়টি খুবই হাশহাশ। কোনও পার্টিতে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করা হচ্ছে, আমি কিন্তু দেখিনি। টলিউডের পার্টিতে মদ্যপান হয়। কিন্তু নার্কোটিক্স দ্রব্য সেবন করা হচ্ছে আমার এতদিনের কেরিয়ারে দেখিনি। আমি নিজে যেহেতু এটার শিকার হয়েছি, সেখান থেকে লড়াই করে বেরিয়ে এসেছি, সবার আগে বলব মাদক সেবন করা কোনও গর্বের বিষয় নয়। অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। যে এই নেশা করে, তাঁকে আগে বদলাতে হবে। মাদক সারা বিশ্বে মান্যতা পাওয়া একটা ব্যাধি।”
আরও একজন অভিনেতা-পরিচালক ও গায়ক মাদকের নেশায় জর্জরিত হয়েছেন পূর্বে। দীর্ঘ ৯ বছর ড্রাগের নেশা করেছেন তিনি। সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারপর ২৩ বছর একবারের জন্যেও ফিরে যাননি। তিনি দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত। ইন্ডাস্ট্রিতে সকলে তাঁকে তাজু নামেই চেনে। TV9 বাংলাকে দেবপ্রতিম বলেছেন, “রানাদা কী বলেছেন আমি জানি না। আমি সব ধরনের ড্রাগের নেশা করেছি। আমার বাবা শাহরুখ খান নন। ৯ বছর মাদকের নেশা আমাকে চেপে ধরেছিল। লড়াই করে ছাড়িয়েছি। ২৩ বছর আর আমাকে সেই নেশায় ফিরতে হয়নি। এখানে আমি একটাই কথা বলতে চাই। লুকিয়ে রেভ পার্টি করার বিষয়টা আইটি সেক্টরে বেশি হয়। এই নেশা করার জন্য যে টাকা প্রযোজন সেটা দেব, জিৎ কিংবা বুম্বাদা আয় করেন। টেলিভিশন সিরিয়ালে অভিনয় করে ওটা খাওয়া সম্ভব নয়। গাঁজা কে খায় কে খায় না সেটা আমরা টলিউডে দেখেছি।”
রবিবারই মাদককাণ্ডে গ্রেফতার হন শাহরুখ পুত্র আরিয়ান খান। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগ উঠেছে। কর্ডেলিয়া ক্রুজ নামক এক প্রমোদতরণীতে তিনদিন এক মিউজিক্যাল যাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। বলিউড, ফ্যাশন ও বাণিজ্যজগতের সদস্যরা ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিল। ক্রে’আর্ক নামক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফ্যাশনটিভি ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন: Drug Case: টলিউডেও বেপরোয়া ভাবে নেশা! ‘ছেড়ে দিন, ধরা পড়ে যাবেন…’, প্রযোজকের পোস্টে সাবধানবাণী
আরও পড়ুন: Drug Case: ‘বলিউডের ত্রাস’ এনসিবি কর্তা সমীর ওয়াংখেড়ের স্ত্রী-ও একজন বলি অভিনেত্রীই!