জহর রায়ের মৃতদেহে চুমু খেলেন সুচিত্রা সেন, তারপর কানে কানে যা বলেছিলেন তাতে গায়ে কাঁটা দেয়
সেই নিয়ম মেনেই জহর রায়কে কখনও ভাইয়া, কখনও আবার চার্লি বলে ডাকতেন, কেননা, নিজের অভিনয়কে ধার দিতে চার্লি চ্যাপলিনকে অনুসরণ করতেন জহর রায়।

সুচিত্রা সেন ও জহর রায়ের বন্ধুত্বের মধ্যে এক অদ্ভুত টান ছিল। যে টান পদ্মা নদীর স্রোতের মতোই। সুচিত্রা ছিলেন ওপার বাংলার পাবনা জেলার, আর জহর রায় ছিলেন বরিশাল। ওপার বাংলার প্রতি তাঁদের মনের টানই, দুজনের বন্ধুত্বের সাঁকো ছিল। আর তাই তো যখনই জহর রায়ের বাড়িতে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল বা শুটকি মাছ হত, এক বাটি অবশ্যই যেত মহানায়িকার কাছে। এ যেন অলিখিত এক নিয়মকানুন। আর সেই নিয়ম মেনেই জহর রায়কে কখনও ভাইয়া, কখনও আবার চার্লি বলে ডাকতেন সুচিত্রা। কেননা, নিজের অভিনয়কে ধার দিতে চার্লি চ্যাপলিনকে অনুসরণ করতেন জহর রায়। আর সেই কারণেই ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর নাম ছিল চার্লি। সেই প্রিয় ভাইয়া, প্রিয় চার্লিকেই যে এভাবে হারাতে হবে, মহানায়িকার তা ভাবতেই পারেননি।
দিনটা ১১ আগস্ট, ১৯৭৭। কলকাতা মেডিক্য়াল কলেজের সামনে দিয়ে একটা শোক মিছিল এগিয়ে চলেছে। মিছিল বেথুন কলেজের সামনে যেতেই একটা গাড়ি এসে থামল। আলুথালু বেশে গাড়ি থেকে নামলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। চোখের কোলে জল। সুচিত্রা জহর রায়ের নিথর দেহর সামনে এসে চুপ করে দাঁড়ালেন। অপলক দেখতে লাগলেন লিভারের অসুখ, তিনবার জন্ডিসে ঝাঁঝরা হয়ে যাওয়া চার্লির মরদেহ। ডুকরে উঠলেন মহানায়িকা। এগিয়ে গেলেন জহর রায়ের মরদেহর সামনে। প্রথমে তাঁর প্রিয় ভাইয়ার কপালে হাত বোলালেন, তারপর চুমু খেলেন। জহর রায়ের নিথর দেহের কানের কাছে মুখ নিয়ে সুচিত্রা বললেন, তুমি চলে গেলে চার্লি! এভাবে? ঠিক করলে না। মৃত্যুর ওপারে নিশ্চয়ই তোমার সঙ্গে ফের দেখা হবে। হাসি-ঠাট্টাও হবে।
সেদিন মহানায়িকা তাঁর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতেই গাড়ি উঠে যান। এরপর বেশ কিছুদিন সিনেমার শুটিং থেকেও বিরতি নিয়েছিলেন সুচিত্রা। মহানায়িকার ঘনিষ্ঠরা বলেন, স্টুডিওপাড়ায় পা রাখলে, নাকি প্রিয় চার্লির কথা মনে পড়ত মহানায়িকার।
