ঘুমন্ত সুচিত্রার সঙ্গে একী করেছিলেন দেব আনন্দ! যাঁর জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চাইতে হল মহানায়িকার কাছে?
ঠিক এমনই এক কাণ্ড ঘটেছিল বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দেব আনন্দের সঙ্গে। সুচিত্রার সঙ্গে রসিকতা করতে দিয়ে টের পেয়েছিলেন মহানায়িকার দাপট!

‘দেবদাস’ ছবির কল্যাণে বলিউডে ততদিনে নিজের জমি বানিয়ে ফেলেছিলেন সুচিত্রা সেন। তাই টলিউডের পাশাপাশি সেখানেও দাপট ছিল তাঁর মহানায়িকারই মতে। ফিল্মের শুটিংয়ে এদিক-ওদিক কিছু ঘটলেই ম্য়াডাম সেনের মুড চরমে চলে যেত। আর তাঁর রাগ কমাতে কালঘাম ছুটত পরিচালক-প্রযোজকের। ঠিক এমনই এক কাণ্ড ঘটেছিল বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা দেব আনন্দের সঙ্গে। সুচিত্রার সঙ্গে রসিকতা করতে দিয়ে টের পেয়েছিলেন মহানায়িকার দাপট! জল এতটাই গড়িয়ে ছিল যে, সিনেমার শুটিং বাকি রেখেই মুম্বই থেকে কলকাতা চলে আসছিলেন সুচিত্রা!
সময়টা ছয়ের দশক। মুম্বই থেকে ছবির অফার পেলেন সুচিত্রা। দেবদাস ছবিতে দিলীপ কুমারের পর এবার তাঁর নায়ক দেব আনন্দ। দেব আনন্দ তখন বলিউডের রোমান্স কিং। পর্দায় তাঁকে দেখে ঝড় বইত নারীমহলে। উল্টোদিকে দেবদাস ছবির পার্বতী চরিত্রে সুচিত্রা রূপ ও অভিনয় মুগ্ধ বলিউডের দ্বিগজরা। তাই দেব আনন্দের বিপরীতে একেবারে সঠিক পছন্দ ছিল সুচিত্রা, তা পরিচালক রাজ খোসলা স্বীকার করতে ভোলেননি। বাংলা ছবি এবং হিন্দি ‘দেবদাস’ ছবির থেকে একেবারেই আলাদা ছিল ‘বোম্বাই কা বাবু’। এই ছবিতে সুচিত্রাকে রোমান্টিক গানে নাচতেও হয়েছিল, যা কিনা প্রথমবার করেছিলেন মহানায়িকা। আর প্রথমবারে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, সেই সময়ের বলিউডে যেকোনও নৃত্যপটয়সী নায়িকাদের টেক্কা দিতে পারেন তিনি। এভাবেই ‘বোম্বাই কা বাবু’ ছবির প্রায় ৭০ শতাংশ শুটিংয়েই সুচিত্রা পুরো শুটিং ফ্লোরকে তাঁর ম্যাজিকে কাবু করে রেখেছিলেন। তবে সেই ম্য়াজিকই রাতারাতি যে ভয়ঙ্কর রূপ নেবে তা আন্দাজও করতে পারেননি দেব আনন্দ। কিন্ত এই দেবই বারুদে আগুন দিয়েছিলেন!
কাণ্ডটা একটু খোলসা করে বলা যাক। ‘বোম্বাই কা বাবু’ ছবির শুটিং সফল হওয়ায় দেব আনন্দ একটি ফিল্মি পার্টি আয়োজন করেছিলেন। তবে এই পার্টিতে একেবারেই অংশ নিতে চাননি সুচিত্রা। তিনি স্পষ্ট দেব আনন্দ জানান, ছবির শুটিং করে তিনি খুব ক্লান্ত। তাই রাতভর পার্টিতে হাজির থাকতে পারবেন না। দেব আনন্দের হাজার অনুরোধও মহানায়িকার সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি সেদিন। প্রায় মুখের ওপর দেব আনন্দকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সুচিত্রা সেন কতটা মুডি! কিন্তু বলিউডের এক নম্বর নায়ক বলে কথা। সুচিত্রার ব্যবহার সোজা গিয়ে ধাক্কা মারে দেব আনন্দের ইগোয়। আর তখনই এক দুষ্টু ফন্দি করে ফেলেন দেব আনন্দ।
পার্টির দিন মাঝরাতে সদল বলে ঢোল নিয়ে সুচিত্রার রুমের বাইরে হাজির দেব আনন্দ। হঠাৎ করেই উচ্চ তালে ঢোল বাজাতে শুরু করলেন নায়ক। ব্যস, ঢোলের আওয়াজের চোটে সুচিত্রার ঘুমের ব্যঘাত! ঠিক তখনই রীতিমতো রেগে লাল হয়ে রুমের দরজা খুলতেই দেব আনন্দের অবস্থা শোচনীয়। সুচিত্রার রক্তচক্ষু দেখেই দেব আনন্দ বুঝে গেলেন, মহানায়িকার ঘুম ভাঙিয়ে কী বড় ভুলটাই না করেছেন তিনি! ব্যস, সুচিত্রা সেই মুহূর্তেই ঠিক করে ফেললেন, কলকাতায় ফিরবেন। বোম্বাই কা বাবু ছবির বাদবাকি শুটিং আর করবেন না! আর দেব আনন্দ এতদিনে টের পেয়ে গিয়েছিলেন, সুচিত্রার যেটা সিদ্ধান্ত নেন, সেটা করেই ছাড়েন। রসিকতার ফল যে এমনটা হবে, তা বুঝতে পারেননি দেব আনন্দ। শেষমেশ বিপদ বুঝে, হাত জোড় করে সুচিত্রার কাছে ক্ষমা চাইলেন দেব আনন্দ। সেদিন মহানায়িকা ক্ষমাও করেছিলেন বলিউডের এই রোমান্টিক নায়ককে। তারপর ছবির শুটিং পুরো শেষ করেই, কলকাতায় ফিরলেন মহানায়িকা। ‘বোম্বাই কা বাবু’ মুক্তি পাওয়ার পর একসপ্তাহের মধ্যেই ছবি সুপারহিট।
