দেশে ওমিক্রনের সুনামি দেখা দিলেও গবেষণা বলছে, ওমিক্রনের ( Omicron) মাত্রা আগের তুলনায় অনেকটাই মৃদু বলে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অত্যন্ত সংক্রমণযোগ্য এই নয়া ভেরিয়েন্টটি শরীরে প্রবেশ করলেও দীর্ঘ কোভিড (long Covid conditions) পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে না বলে মনে করার যুক্তিসঙ্গত কোনও কারণ নেই। সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন অনুসারে, লং কোভিড হল এমন একটি উপসর্গ (symptoms ), যা প্রথমবার কোভিড ১৯ ভাইরাসে (Covid-19) আক্রান্ত হওয়ার কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস স্থায়ী হতে পারে। আবার সংক্রমণের কয়ে সপ্তাহ পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যাঁরা কোভিড ১৯ আক্রান্ত, তাঁদের অসুস্থতার মাত্রা হালকা হলে হালকা ভাবে নেবেন না। আবার অনেকেরই উপসর্গহীন দেখা যায়।
লং কোভিড ১৯-এর লক্ষণগুলি (Long Covid-19 Symptoms) কী কী
কোভিড ১৯ এর প্রায় ৫০টিরও বেশি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব সনাক্ত করা গিয়েছে। তবে তীব্র সংক্রমণের চার থেকে বারো সপ্তাহ পর কোভিড থেকে মুক্তি মেলে। সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি হল- মাথাব্যথা, ক্লান্তিভাব, ঘুমের ব্যাঘাত, পেটে ব্যথা ইত্যাদি। এমনকি মৃদু কোভিডে আক্রান্ত হলেও অনেকে রোগীর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষণ দেখা যায়। এমন প্রসঙ্গে সাতজনের মধ্যে একজন শিশু ও যুবককে বেছে নেওয়া হয়েছিল, যাঁরা SARS-CoV-2- আক্রান্ত। তাদের প্রায় তিনমাস পর বাইরাসের সঙ্গে যুক্ত লক্ষণগুলি দেখা গিয়েছিল। তবে ওমিক্রনের সঙ্গে লং কোভিডের ঝুঁকি আগের মতো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে না। কারণ হল, এই বিষয়ে সঠিক তথ্যের অভাব রয়েছে।
পিডি হিন্দুজা হাসপাতাল এবং এমআরসি, মুম্বই-এর কনসালট্যান্ট পালমোনোলজিস্ট এবং এপিডেমিওলজিস্ট ল্যান্সলট পিন্টো আইএএনএসকে জানিয়েছেন, ওমিক্রনের সাথে লং কোভিডের ঘটনা যে ডেল্টা বা আলফাতে রিপোর্ট করা হয়েছে তার চেয়ে কম হবে বলে বিশ্বাস করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই”। স্পেকট্রাম নিউজের সাথে একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে, শীর্ষ মার্কিন সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফৌসিকেও উদ্ধৃত করা হয়েছিল যে হালকা অসুস্থতা সৃষ্টি করার পরেও, ওমিক্রন দ্বারা সংক্রামিত লোকেরা দীর্ঘ কোভিড-এ ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি জানিয়েছিলেন, “ভাইরাস ভেরিয়েন্ট যাই হোক না কেন দীর্ঘ কোভিড ঘটতে পারে। ডেল্টা বা বিটা বা এখন ওমিক্রনের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে এমন কোন প্রমাণ নেই।”
তিনি আরও বলেছেন, ”আমাদের সর্বদা সচেতন হওয়া উচিত যেখানে মানুষের মঘ্যে সংক্রমণের উপসর্গ বেশি দেখা যাচ্ছে, সেখানে প্রায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি মানুষের মধ্যে উপসর্গ দেখা যায়। তবে বর্তমানে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ওমিক্রনের মাধ্যমে হালকা অসুস্থবোধ করলেও তা কয়েকদিনের মধ্যেই সেরে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, সুপার মিউট্যান্ট ওমিক্রন স্ট্রেন প্রথম আবির্ভূত হয় নভেম্বরের শেষ দিকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং বতসোয়ানায়। এরপর থেকে এটি ১০০ টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, অনেক দেশে ডেল্টা স্ট্রেনকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা গেছে যে ওমিক্রন হালকা অসুস্থতা বোধ তৈরি হয়। হাসপাতালে ভরতির হারও অনেক কম। তবে ওমিক্রন কতটা গুরুতর তা নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডিরেক্টর ড টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ওমিক্রন ডেল্টার তুলনায় কম গুরুতর বলে মনে হচ্ছে, এর অর্থ এই নয় যে এটিকে হালকা হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা উচিত। ঠিক আগের রূপগুলির মতো, ওমিক্রন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। প্রাণ হারাতে পারেন বহু মানুষ। তিনি আরও সতর্কতার সঙ্গে জানিয়েছেন যে ওমিক্রনের সুনামির বিস্তার এত বিশাল যে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য ব্য়বস্থাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে পারে। এর অর্থ হল , এই নয়া ভেরিয়েন্টটির ভয়ংকর রূপ শেষ হওয়ার পরেও মানুষকে আতঙ্ক গ্রাস করবে। সংক্রামিতও হবেন। ভ্যাকসিন, মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দুরত্বের উপর জোড় দেওয়াকে শিথিল করার প্রয়োজন নেই।