ডায়াবিটিস কখনই সম্পূর্ণ ভাবে সেরে যায় না। কিন্তু চেষ্টা করলেই এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আর রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার একমাত্র উপায় হল জীবনযাত্রায় পরিবর্তন। সময়মতো ঘুম, খাওয়া, শরীরচর্চা সবটাই গুরুত্বপূর্ণ ডায়াবিটিস রোগীদের জন্য। এছাড়াও এই রোগের অন্যতম কারণ হল স্ট্রেস। মানসিক চাপ বাড়লে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। বিশ্ব জুড়েই এখন নিঃশব্দ ঘাতকের মত থাবা বসাচ্ছে ডায়াবিটিস। আট থেকে আশি আক্রান্ত হচ্ছেন সকলেই। সেখান থেকেই বাড়ছে হার্ট, স্নায়ুতন্ত্রের নানা সমস্যাও।
আজকাল প্রত্যেকের জীবনেই মানসিক চাপ যথেষ্ট বেশি। অতিরিক্ত রাগ, ক্রোধ, হতাশা এসবও কিন্তু ডায়াবিটিসের জন্য দায়ী। কম ঘুম হলে কিংবা অতিরিক্ত অ্যাংজাইটিতে ভুগলে শরীর থেকে কর্টিসোল হরমোন বেশি পরিমাণে উৎপন্ন হয়। আর যার জন্য রক্তকোশও অতিরিক্ত পরিমাণ শর্করা তৈরি করে। আর সব মিলিয়ে বাড়তে থাকে ব্লাডসুগারের মাত্রা।
সমস্যার সমাধানে ওষুধ অবশ্যই আছে, কিন্তু সব সময় ওষুধের ভরসাতে থাকলে চলবে না। ওষুধের পাশাপাশি নিয়মমাফিক ডায়েট, শরীরচর্চা এ সবও প্রয়োজন টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে। প্রত্যেকের জন্যই এই স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা খুব জরুরি, কিন্তু যাঁরা টাইপ ২ ডায়াবিটিসে ভুগছেন, নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন তাঁদের জন্য আরও বেশি জরুরি। ডায়াবিটিস নিঃশব্দেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করে। এর সঙ্গে যদি মানসিক চাপও বাড়ে তাহলে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্যই প্রথম থেকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়াও ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আরও যা কিছু অবশ্যই মেনে চলবেন-
প্রয়োজনীয় শরীরচর্চা অবশ্যই করবেন- ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও কিন্তু জরুরি। সেই সঙ্গে মানসিক চাপ, সুগার লেভেল এসবও নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এই সবকিছুর জন্য কিন্তু শরীরচর্চা করতেই হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করলে আমাদের মন ভালো থাকে, শরীর থেকে Feel good- হরমোন নির্গত হয়। তাঈই এমন কিছু শরীরচর্চা বেছে নিন যা আপনার পছন্দের। হতে পারে সাঁতার কিংবা মিউজিকের সঙ্গে ডান্স এক্সসারসাইজ। নিয়মিত এই সব শরীরচর্চায় ওজন যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকে সেই সঙ্গে ব্লাড সুগারও সহজে আয়ত্তে রাখা যায়। শরীরচর্চার পর সুযোগ হলে অবশ্যই ব্লাড সুগার মেপে নেবেন।
আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন- হঠাৎ করেই খুব রেগে যাওয়া, মাথা গরম করা কিংবা কেঁদে ফেলা এসব কিন্তু নিজেকেই নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে। ডায়াবিটিসে যাঁরা ভুগছেন তাঁদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কিন্তু একটু বেশিই হয় অনেক সময় তাঁরা অসহায় বোধ করেন। প্রয়োজনে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
খাওয়ার অভ্যাসেও পরিবর্তন আনুন– একই খাবার দীর্ঘদিন ধরে খেলে একটা এক ঘেঁয়েমি আসেই। সেই সঙ্গে যখন পছন্দের খাবার তালিকা থেকে বাদ পড়ে তখন বিরক্তি আরও চরম পর্যায়ে যায়। তাই মাঝে মধ্যেই খাবারে আনুন পরিবর্তন। অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে কিন্তু ভালো ফল পাবেন।
যোগাভ্যাস করতে পারেন- প্রতিদিন সকালে উঠে অন্তত ১৫ মিনিট যোগাভ্যাস করুন। লম্বা করে শ্বাস নিন, আবার ছাড়ুন। এই অভ্যাস করতে পারলে শরীর ভেতর থেকে সুস্থ থাকবে। পেশি রিল্যাক্স হয়। শ্বাস নিয়ে ৫ সেকেন্ড রাখুন তারপর ছাড়ুন।
বন্ধু আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন- লকডাউনে বন্ধু আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়মিত দেখা না হওয়ায় অনেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন। তাই চেষ্টা করুন বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে। সমস্যায় পড়লে তাঁদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলুন, পছন্দের রান্না করুন, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন বেই কিন্তু মন থেকে ভালো থাকবেন।
আরও পড়ুন- Weight Management: ওজন বেশি হলেও কি ফিট থাকা যায়? জেনে নিন