কলকাতার আরুষি পেল ডায়না পুরস্কার

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস

Jun 30, 2021 | 6:13 AM

কলকাতার কন্যা আরুষি পন্থ। বয়স মাত্র ১৭। আজ থেকে ৭ বছর আগে কাজ শুরু করেছিলেন এই কিশোরী। তাঁর মত ৫০জন পড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেন ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’ নামের একটি সংগঠন।

কলকাতার আরুষি পেল ডায়না পুরস্কার
আরুষি পন্থ।

Follow Us

ব্রিটেনের যুবরানি ডায়নার স্মরণে চালু হওয়া ডায়না অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হলেন কলকাতার আরুষি পন্থ। ১৭ বছরের আরুষি কাজ শুরু করেন আজ থেকে ৭ বছর আগে। তাঁর মত ৫০জন পড়ুয়াকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করেন ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’ নামের একটি সংগঠন। কম সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদের ‘স্কুল ভিজিট’ করে তাদের মধ্যে আত্মরক্ষা, নাচ গান, নাটক ইত্যাদি দিয়ে কাজ শুরু হয় ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’-এর।

সেই সময়ের কথা আজ বেশি করে মনে পড়ছে আরুষির। একদিন শহরের একটি বস্তি অঞ্চলের স্কুলে গিয়ে গান গাইতে-গাইতে কাজ শুরু করেন তিনি। সামনে বসা ক্ষুদে ছাত্রছাত্রীরা ইংরেজি গানের সে লিরিকের আক্ষরিক মানে হুবহু বুঝতে না পারলেও যোগসূত্র স্থাপন করতে পেরেছিল সেই গান। একটা গান শেষ হলে অনুরোধ আসে আর একটা গানের। সঙ্গীতের নিজস্ব ভাষা, আবেগ যোগ স্থাপন করে সমাজের দুই প্রান্তে থাকা দু’টি শৈশবের। ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’ এখন কাজ করে অ্যাসোসিয়েশান ফর সোশ্যাল হেলথ অ্য়াণ্ড অ্যাডভান্সমেন্টের (Association for Social Health and Advancement) ‘আশা’র সঙ্গে যৌথ ভাবে।

কিশোরীদের সার্বিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ শুরু করে ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’। উল্টোডাঙ্গা অঞ্চলে একটি স্কুলের ঘটনা সমাজের ভ্রান্ত ধারনাগুলোকে আরও একবার প্রকাশ্যে আনে আরুষির সামনে। আরুষি বলছেন, “আশা-র সঙ্গে একটা পাবলিক ফোরামের অনুষ্ঠান ছিল। আমরা স্থানীয় মহিলা ও ছাত্রীদের স্যানিট্যারি ন্যাপকিন বিলি করছিলাম। দেখলাম মেয়েরা এসে স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটগুলো ছোঁ মেরে নিয়ে ওড়নার তলায় লুকিয়ে নিয়ে ছুটে পালাচ্ছে। আমি তখন আরও ছোট। ওদের এই আচরণ আমার মাথাটা খারাপ করে দিল। মেন্সট্রুয়াল হেলথের মত এমন একটি স্বাভাবিক অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই ধরনের আচরণ আমি মেনে নিতে পারিনি। একটা প্যাকেট থেকে ৫-৬টা ন্যাপকিন বার করে সেগুলো হাতে ধরে আমি বললাম – দেখো এগুলো খুব প্রয়োজনীয় একটা জিনিস আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য। আমি একজন মেয়ে, তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে কম আমার বয়স। আমি কিন্তু এটা লুকোচ্ছি না। বরং এগুলো ব্যবহার করে আমি গর্বিত আমার নারীসত্ত্বার জন্য।’’ তারপর ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মেয়েদের জড়তা কাটে। একটু-একটু করে এভাবেই ক্ষুদে এই মেয়ে ছড়িয়ে দিয়েছে তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা। পাশে পেয়েছে তার বন্ধুদের।

এই লকডাউনের মধ্যে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন দূরবর্তী অঞ্চলের স্কুল পড়ুয়া ও কম সুবিধাপ্রাপ্ত কিশোর-কিশোরীদের জন্য ফাণ্ড রেজ় করেছে ‘চিল্ড্রেন্স আর্মার’। আরুষি ‘আশা’র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে সাধ্যমতো পাশে থেকেছেন তাদের। বহু অনলাইন অনুষ্ঠানে ভরসা জুগিয়েছেন, ভুল ধারণাগুলো ভেঙেছেন।

আরুষিকে এই পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছেন ১২ সদস্যের একটি প্যানেল। এই পুরস্কারের তিনটি ক্যাটাগরি আছে- ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা নবীন ছেলেমেয়েদের মেনটরিং, ছোটদের দ্বারা পরিচালিত অ্যাণ্টি বুলিইং অ্যাম্বাসেডর ক্যাম্পেইন আর মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার, যা আরুষি পেয়েছেন। তিনি অবশ্য এসব ভাবতে চাইছেন না। পা তাঁর মাটিতেই আছে। তিনি ভাবছেন তাঁর মতো আরও অনেক ইউথ লিডারদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন এরপর। যে অভিজ্ঞতা তাঁকে পরবর্তী কাজগুলো করতে সাহায্য করবে।
প্রিন্সেস অব ওয়েলসের নাম, আর তাঁর দুই পুত্র কেমব্রিজ আর সাসেক্স এর ডিউকের সমর্থন সঙ্গে নিয়ে আরুষি আবারও ছুটবে সেই অন্ধকার কাটাতে যে অন্ধকার জীবনগুলোয় এখনও আলো আসে নি। মাঝে একটু খানি বিরতি একটুখানি সেলিব্রেশন, মন্দ কি!

আরও পড়ুন- পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে চান? এই ৬টি ঘরোয়া টিপস জেনে রাখা ভাল

Next Article