Cancer Care: ক্যানসারের লড়াইয়ে ভয় নয়, ‘জীবনের সাথী’র হাত ধরে শক্তিশালী হওয়ার বার্তা
চিকিৎসাবিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, মারণ রোগ নামে পরিচিত ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই আরও মজবুত হচ্ছে। এ বার ক্যানসারেরর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এবং এই রোগে আক্রান্তদের সাহস জোগানোর জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ নিল ক্যান্সার কেয়ার অ্যান্ড কিউর সোসাইটি অফ বেঙ্গল।

কলকাতা: ক্যানসার মানেই আর জীবন শেষ নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান যত উন্নত হচ্ছে, মারণ রোগ নামে পরিচিত ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই আরও মজবুত হচ্ছে। এ বার ক্যানসারেরর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য এবং এই রোগে আক্রান্তদের সাহস জোগানোর জন্য একটি সাহসী পদক্ষেপ নিল ক্যান্সার কেয়ার অ্যান্ড কিউর সোসাইটি অফ বেঙ্গল। কলামন্দিরে একটি সচেতনতামূলক সেশনের আয়োজন করা হয়েছিল। এই অনুষ্ঠানে একটি শক্তিশালী বার্তা তুলে ধরা হয়েছে। ক্যানসার মানে আর মৃত্যুদণ্ড নয়। এখন অনেক রোগী সফলভাবে এই রোগ থেকে মুক্ত হচ্ছেন এবং সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন। এই সেশনের থিম বলে উল্লেখ করা হয়েছে, “ক্যানসারই শেষ নয়, এটি নিরাময় করা যেতে পারে। এবং জীবন স্বাভাবিক অবস্থায় আবার ফিরতেও পারে।”
একাধিক বিশিষ্ট চিকিৎসক এই ক্যানসার সচেতনতামূলক প্রচেষ্টায় সামিল হয়েছিলেন। ডক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায়, ডক্টর সায়ন পাল, ডক্টর তন্ময় মণ্ডল এবং ডক্টর সৌমেন দাসের নেতৃত্বে এই অনুষ্ঠানটিতে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াইয়ে জিতে যাওয়া ব্যক্তিদের কথা তুলে ধরা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক ক্যানসার রোগী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ওই ক্যানসার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে প্যানেল ডিসকাশন হয়েছিল। যেখানে আলোচনা হয়েছে ক্যানসারের চিকিৎসা এবং চিকিৎসার পর দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসার পরবর্তী অবস্থা নিয়ে। ডক্টর গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ক্যানসার এখন আর কোনও গল্পের সমাপ্তি নির্ধারণ করে না। তবে হ্যাঁ এটা একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। প্রাথমিকস্তরে শনাক্তকরণ এবং উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব। এর মাধ্যমে আমরা কেবল জীবনকে আরও ত্বরান্বিত করছি না, আমরা এও আশা করছি, এই রোগের সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে চিন্তা ও ভয় ছাড়াই যে কেউ মন খুলে বাঁচবে, সহজ জীবনযাপনের আনন্দ খুঁজে বের করবে।’
কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ ব্রেস্ট ডিজিজ আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জীবনের সাথী’ নামে এক উদ্যোগ চালু করেছে। যা ভারতের প্রথম কাঠামোগত ক্যানসার নেভিগেটর প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের অন্যতম লক্ষ্য ক্যানসারকে হারিয়ে জীবনের মূলস্রোতে ফেরা ব্যক্তিদের প্রশিক্ষিত লেভেল ১ ন্যাভিগেটরে রূপান্তরিত করা। যারা নতুন রোগীদের তাঁদের ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করার সময়ের কথা শেয়ার করবেন। সেই সময়ের মানসিকতা তুলে ধরবেন। যাতে নতুন করে যিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি ভেঙে না পড়েন। চিকিৎসায় বিশ্বাস রাখেন।
প্রাথমিকভাবে স্তন ক্যানসার নিয়ে কাজ করার পর, ‘জীবনের সাথী’ চিকিৎসাধীন রোগীদের যোগাযোগ এবং নির্দেশনার ক্ষেত্রে বিশেষ ট্রেনিং দেয়। যা নতুন রোগ নির্ণয়কারীদের জন্য এক বিশ্বাসযোগ্য সম্পদ হিসেবে কাজ করতে পারে। এই প্রোগ্রামটির মূল লক্ষ্য স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা। উল্লেখ্য, যেসব স্বেচ্ছাসেবক ক্যানসারের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়েছেন এবং অন্যদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তাঁদের এই প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রটি ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে অথবা সরাসরি ইনস্টিটিউট থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা সকল চিকিৎসকদের মুখে একটাই কথা, ক্যানসার নিয়ে সকলকে লড়াইয়ে আরও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ডক্টর সায়ন পালের কথায়, ‘ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা যখন এই লড়াইয়ে জিতে যাওয়া ব্যক্তিদের গল্প বলতে দেখে, তখন অনেকে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করা সম্ভব এবং জেতাও সম্ভব।’ তাঁর পাশাপাশি ডক্টর তন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘সম্প্রদায় থেকে পাওয়া সাহায্য বরাবর অপরিহার্য। আমরা এমন একটি নিরাপদ স্থান তৈরি করতে চাই, যেখানে রোগী এবং তাঁদের পরিবার অনুভব করবে যে তাঁরা আর একা নন।’ ডক্টর সৌমেন দাসের কথায়, ‘ক্যানসার নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি আমাদের ধারণা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
