তাপমাত্রা ৪০ ছুঁইছুঁই। আগামী তিন দিনেও দেখা মিলবে না বৃষ্টির। সেই সঙ্গে চলছে তাপপ্রবাহ। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রামের মতো জেলাগুলিতে ইতিমধ্যেই পারদ ৪৩ ছুঁয়েছে। কলকাতাতেও কিছু জায়গায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলেছে পারদ। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়েছে রাজ্যবাসীর। বেলার দিকে বাড়ির বাইরে পা রাখা যেখানে কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানেই খুদেদের স্কুলে গরমের ছুটি কবে পড়বে তা এখনও জানা যায়নি। প্রখর তাপপ্রবাহের (Heatwave) মধ্যেও পিঠে ব্যাগ নিয়ে স্কুল যেতে হচ্ছে। এই সময় বাড়ির বাইরে বেরোলে যে কোনও মানুষই অসুস্থ বোধ করতে পারেন, সেখানে ছোটদের কষ্ট আরও বেশি। হিট ওয়েভের হাত থেকে কীভাবে খুদেকে (Child Health) রক্ষা করবেন? এই বিষয়ে TV9 বাংলার মাধ্যমে পরামর্শ দিলেন শিশু বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সুমন পোদ্দার।
এই মুহূর্তে এই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হাত থেকে আমরা বাচ্চাদের কীভাবে বাঁচাব? ডাঃ সুমন পোদ্দার এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্রথম করণীয় হল স্কুলের সময়টায় যদি একটু পরিবর্তন আনা যায়। অর্থাৎ যদি স্কুলের সময়টা একটু কমিয়ে দেওয়া হয় কিংবা একদম সকালের দিকে যদি স্কুল শুরু করা যায়, তাহলে ভাল। প্রয়োজনে গরমের ছুটি এগিয়ে নিয়ে আসা দরকার।” কিন্তু এই বিষয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ বা রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও বিজ্ঞপ্তি এখনও অবধি আসেনি। তাহলে এর মধ্যে কীভাবে খেয়াল রাখবেন খুদেদের?
ডাঃ পোদ্দার জানিয়েছেন, জল ভীষণভাবে জরুরি। মাঝে মাঝে বাচ্চাকে নুন চিনির জল দিতে হবে। কিংবা ওআরএস-এর জলও খাওয়াতে পারেন, যাতে শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় থাকে। এর পাশাপাশি ডায়েটে রাখতে হবে প্রচুর পরিমাণে মরসুমি ফল। তবে বাইরের কাটা ফল একদম নয়। যে সব ফলে জলের ভাগ বেশি যেমন তরমুজ, শসা, পেঁপের মতো ফলগুলো বেশি করে খাওয়ান বাচ্চাকে।
প্রয়োজন না থাকলে দুপুর ১১-৪ টের মধ্যে বাড়ির বাইরে বেরোতে মানা করছেন বিশেষজ্ঞরা। যদি বাড়ির বাইরে বের হতে হয়, বিশেষত এখন যেহেতু স্কুলে যেতে হচ্ছে, এই সময় চোখে সানগ্লাস আর মাথায় টুপি যেন অবশ্যই ব্যবহার করে বাচ্চারা। সঙ্গে সুতির হালকা রঙের এবং ঢিলে জামাকাপড় পরতে হবে। এর সঙ্গে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা আবশ্যিক। এর জন্য সঠিক এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন বেছে নিন। মাস্ক ব্যবহার করলেও এর পাশাপাশি ভেজা রুমাল দিয়ে ঘনঘন নাক মুখ মুছতে হবে।
গরমে বাচ্চা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে তার জন্য খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিশেষ যত্ন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন ডাঃ পোদ্দার। তাঁর কথায়, “প্রচণ্ড গরম হচ্ছে, রাস্তায় বের হয়ে কোল্ড ড্রিঙ্ক খেয়ে নিলেন- এই ভুল ছোট থেকে বড় কারোরই করা উচিত নয়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ড্রিঙ্কগুলির পাশাপাশি জাঙ্ক ফুডও এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত তেল, ঝাল, মশলা জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। বাচ্চার ডায়েটে টক দই রাখুন।”
ডাঃ পোদ্দার আরও বলেন, “রোদ থেকে বেড়িয়ে এসে বাড়ি ঢুকে ঠাণ্ডা জল নিজেও খাবেন না এবং বাচ্চাকেও খেতে দেবেন না। একই ভাবে, কোনও গরম জায়গা থেকে এসেই কোনও এসি রুমে ঢুকতে দেবেন না বাচ্চাকে। এতে সর্দি-গর্মি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রচণ্ড গরম থেকে প্রচণ্ড ঠান্ডা- এই ট্রানজ়িশনের মধ্যে কিছু সময় নিন যাতে শরীরটা আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। আর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকার অর্থ এই নয় যে আপনি গরমকালে শীতকালের মতো আবহাওয়া তৈরি করবেন। বরং গরম আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন। এতেই সর্দি-গর্মির ঝুঁকি এড়াতে পারবেন।”
এই হিট ওয়েভের কবলে যদি কোনও শিশু পড়ে, কোনও ভাবে যদি লু লেগে যায় তাহলে সেক্ষেত্রে কী করণীয়? এই প্রসঙ্গে সুমনবাবু জানিয়েছেন, তৎক্ষণাৎ তাকে কোনও ছায়ায় বসিয়ে জামাটা হালকা করে খুলে দিন। যতটা শোভনীয় ততটাই খুলে দিন। এর পাশাপাশি সাধারণ জলে রুমাল ভিজিয়ে গা, হাত-পা মুছে দিন। সেই সঙ্গে ওআরএস কিংবা নুন, চিনির জল খাওয়ান।
আরও পড়ুন: তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি! কোন পানীয়তে ভরসা রাখবেন?