করোনার (covid 19) দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে। কোথাও হাসপাতালে বেড নেই। কোথাও নেই অক্সিজেন। কোথাও বা গৃহবন্দি করোনা আক্রান্তকে খাবার তৈরি করে দেওয়ার মতো কেউ নেই। এই পরিস্থিতিতে বহু মানুষ নিজের সাধ্যমতো এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু সর্বস্তরে করোনা-স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য় গবেষক-কর্মী থেকে চিকিৎসকেরা। করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেই কিন্তু সুস্থ হওয়া নয়। সেটাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। তাই পোস্ট-করোনা ডায়েট খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন বয়সীদের জন্য পোস্ট-করোনা ডায়েট (food) কেমন হবে, তার হদিশ দিলেন নিউট্রিশিয়ানিস্ট অ্যান্ড ডায়েটিশিয়ান মিতালি পালোধি।
কোভিড রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পরেও দুর্বলতা থেকে যাচ্ছে বহুদিন। কে কতদিন দুর্বল থাকছেন, তা-ও আগে থেকে বোঝা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে পোস্ট-কোভিড ডায়েট কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
করোনা আক্রান্ত রোগীদের অনেকের ক্ষেত্রে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। নার্ভ, কিডনি, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের মতো বহু কেস পাচ্ছি আমরা। ফলে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসা মানেই সুস্থ হয়ে যাওয়া নয়। এর এফেক্ট থাকছে ছ’ থেকে আট মাস। ফলে ততদিন ডায়েট মেনে চলতে হবে। করোনা কিন্তু এক-একজনের দেহে এক-একরকম ক্ষতি করছে। সেটাও মনে রাখতে হবে।
শিশু জন্মের পর থেকে দু’ বছর বয়স পর্যন্ত ডায়েট?
গতবারে বাচ্চারা সিকিওর ছিল। এবার বাচ্চাদের করোনা অ্যাটাক করছে। ছোটদের ভ্যাকসিন দেওয়াও যাবে না। ন্যাচারাল ইমিউনিটি বুস্ট-আপ করতে হবে। শিশুর জন্মের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে শুরু করবেন, তত ভাল।
এই পরিস্থিতিতে মা কোভিড আক্রান্ত বলে হ্যান্ড হাইজিন মেনে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। পরিস্কার পোশাক পরে, হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে শিশুকে দুধ খাওয়ান। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে খাওয়াতে শুরু করতে পারলে ভাল। মায়ের দুধে বিভিন্ন রকম অ্যান্টিবডি থাকে। সেগুলো বাচ্চাকে নানা সংক্রমণের থেকে রক্ষা করে। এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। ব্রেস্ট মিল্ক খাওয়ালে করোনা হতে পারে এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ফলে এটা সুরক্ষিত এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ খাবার।
ছ’মাস পর্যন্ত শিশু শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাবে। এক ড্রপ জলও নয়। কারণ এটা ন্যাচারাল প্রোডাক্ট। নিউট্রিশানালি পারফেক্ট, ওয়েল ব্যালান্সড। মায়ের দুধে প্রচুর জল থাকে। ২৪ ঘণ্টায় আট থেকে ১০ বার খাওয়ান। মায়ের দুধে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি উপাদান একেবারে যথাযথ পরিমাণে থাকে। এছাড়াও শিশুর সংক্রমণ প্রতিরোধকারী নানা উপাদানও থাকে।
ছ’মাস পর থেকে মায়ের দুধও কমে যাবে। তখন কলা, পেঁপে, আম, ডালসেদ্ধ, গাজর চটকে দিতে পারেন। বাড়িতে তৈরি খাবার দিন। মুড়ি গুঁডো করে, চিঁড়ে গুঁড়ো করে, তার সঙ্গে ফল মিশিয়ে দিন। ডিম দিতে পারেন। কুসুম দিয়ে শুরু করুন। ডিমের সাদা অংশ অনেক শিশুর ক্ষেত্রে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে। মাংস দিতে পারেন, মাছ দিতে পারেন সেদ্ধ করে। শিশুকে দু’-তিন চামচ করে খাওয়ান। বারেবারে খাওয়ান। আগে মায়ের দুধ খাইয়ে পরে পায়েস দিন। ধীরে-ধীরে পাকা কলা, আম, পেঁপে, সবেদা চটকে খাওয়ান।
এছাড়া সুজির পায়েস, মুড়ি, ছোলা, ছাতু, ঘি বা মাখন দিন। সাদা তেল দিয়ে করা রান্নাও দিতে পারেন। এতে ক্যালোরি থাকবে। এনার্জি গেইন করবে। ছ’ থেকে আট মাস পর্যন্ত বয়সের শিশুকে আগে ব্রেস্ট মিল্ক খাইয়ে তারপর অন্য খাবার খাওয়ান। কারণ মায়ের দুধে অ্যান্টি-ইনফেকটেড প্রপার্টি রয়েছে। যা যে কোনও ইনফেকশনের হাত থেকে রক্ষা করবে।গাজর বা আলু সেদ্ধ করে মাখন লাগিয়ে শিশুর হাতে দিন আট মাস বয়সে। এতে শিশু নিজে খেতে শিখবে। ওর হ্যান্ড টু মাউথ কোওর্ডিনেশন হবে।
আট মাসের পরে খিচুড়ি, পায়েস দিতে পারেন। শস্য জাতীয় এবং ডাল জাতীয় খাবারের কম্বিনেশন দিতে পারলে ভাল। তিন ভাগ শস্য, এক ভাগ ডাল জাতীয় খাবার দিলে প্রোটিন ব্যালান্স হবে। দু’বার স্ন্যাক্স দিতে পারেন। এই সময় দাঁত উঠতে শুরু করে। পাঁউরুটি কড়কড়ে করে সেঁকে মাখন দিয়ে দিতে পারেন। নিজে হাতে খেতে শিখবে। শিশুকে সঙ্গে করে নিয়ে খেতে বসুন। কুমড়ো, গাজর, শাক দিন। বিভিন্ন রকম রং খাবার থালায় শিশুরা পছন্দ করে। এর মধ্যে প্রচুর মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট থাকে। ছোট থেকে অভ্যস্ত হলে ভবিষ্যতে শিশু এই খাবারগুলো খেতে রিফিউজ় করবে না।
এক বছর বয়স হয়ে গেলে বাড়ির সকলে যা খাবেন, শিশুও তাই খাবে। তবে শিশুর খাবারে ঝাল কম দেবেন। এর মধ্যে বাচ্চার করোনা হলে ব্রেস্ট ফিডিং বন্ধ করবেন না। তার সঙ্গে প্রোটিন বাড়াতে হবে। ক্যালোরি বাড়াতে হবে। বারেবারে অল্প পরিমাণে খাওয়ান।
তিন-চার বছর বয়সে হেলদি স্ন্যাক্স দিন। চিপসের প্যাকেট বা কেক দেবেন না। এর মধ্যে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। বরং বাড়ির খাবার দিন। ছাতু দিয়ে সবজি দিয়ে রুটি করে দিন। পরোটা, সবজি। আলুকাবলি করুন। ফ্রুট স্যালাড করুন। ঘরে তৈরি তিলের লাড্ডু দিতে পারেন। এতে হেলদি ফ্যাট থাকে।
মা কোভিড আক্রান্ত হলে, প্রসবের পর মা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়ার পর হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুয়ে মুখে মাস্ক পরে শিশুকে খাওয়াবেন। মায়ের ত্বকের সঙ্গে যেন শিশুর ত্বক স্পর্শ করে। শিশুকে অন্তত দু’বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ অবশ্যই খাওয়ান।
যাঁরা প্রতিদিন কাজের প্রয়োজনে বাইরে বেরচ্ছেন, কোভিড সেরে যাওয়ার পর তাঁদের ডায়েট কেমন হবে?
করোনা হলে শরীরে অসম্ভব দুর্বলতা তৈরি হচ্ছে। অনেকেরই শরীরে—বিশেষ করে যাঁদের কোমর্বিডিটি আছে যেমন ডায়েবিটিস, হাই প্রেশার ও হার্টের সমস্যা রয়েছে—তাঁদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই করোনা মারাত্মক আকার ধারণ করছে। শরীরের নানা গুরুত্বূপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে পেশী বা মাসলেরও ক্ষয় হচ্ছে। বর্তমানে যেটা দেখা যাচ্ছে যে কোভিড প্রত্যেকের শরীরে আলাদা-আলাদা রকমভাবে প্রভাব ফলছে। অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া, খাবার ইচ্ছে না-থাকা, খাবারের গন্ধ না-পাওয়া, দুর্বলতা সব মিলিয়ে একটা গুরুতর অবস্থা তৈরি হচ্ছে। শরীরের ইমিউনিটি কমে যাওয়ার ফলে অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে।
প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে কোভিড আলাদা প্রভাব ফেলছে। রোগীদের দু’ভাগে ভাগ করছি আমরা। প্রথম, অ্যাকিউট ফেজ়। দ্বিতীয়, রিকভারি ফেজ়। দুই ক্ষেত্রে রোগীর সমস্যা অনুযায়ী ডায়েট ঠিক হয়। তবুও জেনারেল গাইডলাইনের ক্ষেত্রে বলব, অ্যাকিউট ফেজ়ের ক্ষেত্রে উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার বারে বারে অল্প পরিমাণে দিতে হবে। শরীরে এই সময় সংক্রমণের কারণে প্রোটিন, এনার্জি, ভিটামিন, মিনারেলের চাহিদা বেড়ে যাচ্ছে। কারণ মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলা। যাতে মারাত্মক ভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করা যায়। রোগীর অবস্থাবিশেষে তাঁর ডায়েট ঠিক করতে হবে। অনেক সময় তাঁকে ড্রিপ দেওয়া বা টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো—এ সবই করতে হতে পারে।
অবস্থার একটু উন্নতি হলে অর্থাৎ রোগী নিজে খেতে শুরু করতে পারলে এবং রিকভারি ফেজ়েও নিউট্রিয়েন্ট রিচ ফুড দিতে হবে। প্রথমেই প্রোটিনের কথা বলব। যেহেতু প্রোটিন শরীরে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং মাসল লসকে প্রতিরোধ করে, তাই দিনে মোটামোটি ৭৫ গ্রাম প্রোটিন বা রোগীর প্রতি কিলোগ্রাম আইডিয়াল বডি ওয়েটের হিসেবে ১.২ থেকে ১.৩ গ্রাম প্রতি কিলোগ্রামের জন্য প্রতিদিন প্রোটিন দিতে হবে। অ্যানিম্যাল প্রোটিন যুক্ত খাবার মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পনিরের মধ্যে উচ্চ গুণসম্পন্ন প্রোটিন থাকে। এছাড়াও ডাল, সোয়াবিন, বাদাম এগুলো দেওয়া যেতে পারে। ভাল করে সেদ্ধ করা ডিম, প্রো-বায়োটিক দই দিতে পারেন।
এরপর কার্বোহাইড্রেট। দিনে ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম মতো কার্বোহাইড্রেট দেওয়া যেতে পারে। কারণ বেশি শ্বাসকষ্ট থাকলে কার্বোহাইড্রেট কম দেওয়া ভাল। ওটসস, কর্নফ্লেক্স, পাঁউরুটি, ভাত বা রুটি দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ক্যালোরির মাত্রা ঠিক রাখতে মাখন, ভাল ঘি, আমন্ড দেওয়া যায়। এছাড়া ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের ইমিউনিটি বুস্ট আপ করতে সাহায্য করে যেমন কুমড়োর বীজ, তরমুজের বীজ দেওয়া যায়। খাবারে অবশ্যই ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি-র জন্য ডিম, সামুদ্রিক মাছ দেওয়ার যেতে পারে।
খাবারের মধ্যে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি-এ প্রয়োজন। যা আমরা নানা রকমের মরসুমি শাকসব্জি থেকে পেতে পারি। এছাড়া আমলকি, পেয়ারা, লেবু, টোম্যাটোর থেকেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। জিঙ্ক, সিলেনিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হলে ডাল, সোয়াবিন, মুরগির মাংস, কালো তিল, ওয়ালনাট, কুমড়োর বীজ দিতে পারেন। প্রি-বায়োটিক ও প্রো-বায়োটিক যুক্ত খাবার দিন। রসুন, পেঁয়াজ, কলা, ওটস, আপেল (প্রি-বায়োটিক) দিতে পারেন। প্রো-বায়োটিক দই অবশ্যই দিতে হবে। ঘরে পাতা দইয়ে ব্যাকটেরিয়াল কাউন্টটা জানতে পারি না আমরা। প্রো-বায়োটিকে সেটা বোঝা যায়।
প্রচুর পরিমাণে জল বা শরবৎ খাবেন রোগী। ছানা, দুধ, দই, ম্যাঙ্গো শেক খেতে পারেন। প্রোটিন মাসল লস হওয়া প্রিভেন্ট করবে। ইমিউন সিস্টেম বুস্ট আপ করতেও সাহায্য করবে। পেশেন্টের বডি ওয়েট দেখে ডায়েট দেওয়া হয়। সহজপাচ্য প্রোটিন দিতে হবে। কারণ বডি সিস্টেম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেটা রিগেইন করতে হবে। ডাল দিতে পারেন। ১০০ গ্রাম ডালে ২৫ গ্রাম প্রোটিন থাকে। সোয়াবিন, ডিমসেদ্ধ ২টো করে, মাছ, মাংস। সব মিলিয়ে দিনে ৭৫ গ্রাম প্রোটিন দিলে ভাল হয়। ছোলা, পনির, ছাতুর শরবৎ দিন। ডালের স্যুপ করে দেওয়া যায়। কার্বোহাইড্রেট বেশি দিলে ব্রিদিং প্রবলেম থাকলে সমস্যা হতে পারে। কলা দিন। ভিটামিন সি ইমিউনিটি বুস্ট-আপ করতে সাহায্য করে। লেবু, পাইনাপেল দিতে পারেন। টাটকা খাবার দেব।
করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে গ্রিন টি-ও খুব ভাল ফল দিচ্ছে। পলিফেনাল বলে একটা উপাদান থাকে এর মধ্যে। সেটা লাং ফাংশন ভাল করে। কালো জিরেও খুব উপকারী। কোভিডের এফেক্ট শরীরে ছ’ থেকে আট মাস থাকে। ফলে এই ডায়েটটা অন্তত কোভিড সেরে যাওয়ার পরে আট মাস মেনে চলতে হবে। ঘি, বাদাম, মাখন, সরষের তেল দিতে পারেন ফ্যাটের জন্য। কুমড়োর বিজ, তরমুজের বিজ, আমন্ডে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা ইমিউনিটি বুস্ট-আপ করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ডি করোনা থেকে ভাল হতে খুব সাহায্য করছে। মূলত রোদ্দুর থেকে পাওয়া যায় ভিটামিন ডি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টার মধ্যে যে সূর্যের আলো তাতে আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি থাকে। যা শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি করে। প্রতিদিন কিছুটা সময় পাঁচ মিনিট করে বিরতি নিয়ে রোদ্দুরে দাঁড়ানো গেলে সেটা উপকারি।
ভিটামিন সি-এর কথা বলছিলাম। তার জন্য পাতিলেবু, আমলোকি, টোম্যাটো, মুসাম্বি খাওয়া প্রয়োজন। জ়িঙ্ক, আয়রনও ঠিক ভাবে দিতে হবে। হলুদ, জিরে, রসুন, আদা, তুলসী, নিম প্রতিদিন খাওয়া দরকার, যা ইমিউনিটি বুস্ট-আপ করবে। পোস্ট কোভিডে অনেক রোগীর ইউটিআই-এর সমস্যা হচ্ছে । ফলে হাইড্রেশন মেনটেইন করতে হবে। সেটা ইমিউনিটিও ঠিক রাখে। হার্ট বা কিডনির সমস্যা না থাকলে ৮-১০ গ্লাস জল খেতে হবে। দইয়ের ঘোল, ডাবের জলও খাওয়া যেতে পারে।
কোভিড কিন্তু মুডও সুইং করছে। সেক্ষেত্রে রোগীকে ডার্ক চকোলেট দেওয়া যেতে পারে। যেটা মুড ঠিক করতে সাহায্য করে। যাঁরা খেতে পারছেন না, খেতে বসার আগে বারবার মুখ ধোবেন। যা খাওয়ার ইচ্ছে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। একটু ফ্লেভার্ড খাবার দিন। রান্নায় গরমমশলা ব্যবহার করুন। গোবিন্দ ভোগ চালের খিচুড়ি করে দিন। অথবা ভ্যানিলা দিয়ে কাস্টার্ড করুন। ফ্লেভার্ড খাবার হলে খাওয়ার ইচ্ছে থাকবে। একই সঙ্গে প্রাণায়াম বা শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
বয়স্ক অর্থাৎ সিনিয়র সিটিজ়েনদের পোস্ট কোভিড ডায়েট?
বয়স্কদের শরীর এমনিতেই ক্ষয় হতে থাকে। কোভিড আরও বেশি কাবু করে দিচ্ছে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে দেখে নিতে হবে ডায়াবেটিস, হার্টের সমস্যা, সিওপিডি আছে কি না। তারপর ডায়েট দিতে হয়। অনেকের আর্থারাইটিসও থাকে। সাধারণ গাইডলাইন হল, বয়স্কদের ব্যালেন্সড ডায়েট হবে। প্রোটিনের জন্য ডাল, সোয়াবিন, দুধ, ছানা, দই একটু বেশি পরিমাণে দিন। মশলা কম দেওয়া খাবার খেতে হবে। ফল এবং সবজি খেতে হবে প্রতিদিন। ৫০০ গ্রাম ফল এবং সবজি মিলিয়ে দিতে পারলে ভাল। অনেকের কনস্টিপেশনের সমস্যা। সেক্ষেত্রে ফাইবার বেশি দিতে হবে। ক্যালোরি কম থাকবে। সহজপাচ্য খাবার দিন বয়স্কদের। প্রত্যেকটা গ্রুপ থেকে খাবার নিতে হবে। নুনটা কখনও যেন তিন গ্রামের বেশি না হয়। হাইড্রেশনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিডনি বা হার্টের সমস্যা আছে কি না দেখে নিতে হবে। ইসবগুলের ভুষি দিতে পারি কনস্টিপেশনের জন্য। তুলসীপাতা, কাঁচা হলুদ, আমলকি দিন নিয়মিত।
সিনিয়র সিটিজ়েনদের অবশ্যই এক্সসারসাইজ় দরকার। এর ফলে ইমিউনিটি বেটার হয়। প্রাণায়াম করুন। বাড়ির বাইরে বেরতে হবে না। ছাদে গিয়েও হাঁটতে পারেন। দিনে আধ ঘণ্টা শরীরচর্চা করুন। এতে খিদেও হবে। আর ঘুম অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা জরুরি।
আরও একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। ডিপ্রেসড হলে শরীরে হরমোনের তারতম্য হয়। যা ইমিউনিটি নষ্ট করে। ফলে মন খারাপ করবেন না। গান শুনুন, বই পড়ুন, গল্প করুন। আত্মীয়দের সঙ্গে ফোনে কথা বলুন। অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করুন। সঠিক মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহার করুন।
অলঙ্করণ: অভীক দেবনাথ
আরও পড়ুন, World Hand Hygiene Day 2021: করোনা আবহে এই বিশেষ দিনে কী বার্তা দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?