বহু মানুষেরই মাসিক (Periods) নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। বিশেষ করে কোনও দম্পতি যখন প্রেগন্যান্সির (Pregnancy) জন্য চেষ্টা করেন তখন এমন ধরনের মিথগুলি (Myths) সন্তানধারণের পথে বাধা সৃষ্টি করে! তবে হ্যাঁ, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে সন্তান আনার চেষ্টা করলে, কখন একজন নারীর দেহ সন্তানধারণের জন্য সবচাইতে বেশি উপযুক্ত থাকে তা জেনে নেওয়া দরকার! ফলে সেই সময়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে ওই মহিলার সন্তানসম্ভবা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশি। যখন একজন মহিলা ওভ্যুলেট করেন, সেই সময় একটি পরিপক্ব ডিম্বাণু ওভারি থেকে মুক্ত হয়। এই ডিম্বাণু বেঁচে থাকে মোটামুটি ২৪ ঘণ্টা। ফলে সেই সময় ওই ডিম্বাণুর আশপাশে স্পার্ম থাকলে খুব দ্রুত ওই স্পার্ম ওভামের সঙ্গে মিলিত হয়ে তৈরি হয় জাইগোট। এই প্রক্রিয়াকে বলে নিষেক। এই জাইগোট থেকেই পরবর্তী ৯ মাসে গঠিত হয় পূর্ণাঙ্গ বাচ্চা।
সাধারণত মাসিক শুরুর ১৪ দিন আগে থেকে ওভ্যুলেশন শুরু হয়। তবে প্রত্যেক মহিলার মাসিক চক্র সমান লম্বা হয় না। ফলে আলাদা আলাদা মহিলার ওভ্যুলেশনের দিনটিও হয় আলাদা। তাই ওই দিনটি আগে থেকে নির্ণয় করতে পারলে সুবিধা হয়। একটি মাসিক চক্র নির্ণয় করা হয় পিরিয়ড শুরুর প্রথম দিন থেকে পরবর্তী পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগের দিন পর্যন্ত। অতএব একজন মহিলার ওভ্যুলেশন কবে হবে তা নির্ভর করছে একজন মহিলার মাসিক চক্রের দৈর্ঘ্যের উপর।
ওভ্যুলেশনের পরে কয়েকটা দিন থাকে যে সময় সহবাস করলে সন্তান ধারণ করা সহজ হয়! ওই সময়কালকে বলে ‘ফার্টাইল উইন্ডো’। মোটামুটি ওভ্যুলেশনের দিন ও তার আগের পাঁচদিন হল ফার্টাইল উইন্ডো। ফার্টাইল উইন্ডো আরও ভালো কাজ করে যদি ওভ্যুলেশনের দিন ও তার দু’দিন আগে থেকে সেক্স শুরু করা যায়। কারণ ভ্যাজাইনার মধ্যে স্পার্ম বেঁচে থাকতে পারে মোটামুটি তিনদিন। যে মহিলার প্রতি ২৮ দিন অন্তর মাসিক চক্র হয় তাঁর ওভ্যুলেশন মোটামুটি ১৪ দিনের মাথায় ঘটা উচিত। ফলে তাঁর সন্তানধারণের সম্ভাবনাও বাড়বে যদি তিনি পিরিয়ড শেষ হওয়ার ১১ এবং ১৪ তম দিনের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেন। আবার যে মহিলার মাসিক চক্র ২৪ দিনের, তাঁর ওভ্যুলেশন ঘটা উচিত ১০ দিনের মাথায়। ফলে তাঁর সন্তানধারণের সম্ভাবনা বাড়বে যদি পিরিয়ড শেষ হওয়ার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তার ইন্টারকোর্স হয়। তবে কোনও কোনও মহিলার ৩৫ দিনের মাসিক চক্র হতে দেখা গিয়েছে। এই ধরনের মহিলার সন্তানধারণের সম্ভাবনা মাসিক শেষ হওয়ার ১৮ এবং ২১ দিনের মধ্যে সেক্স করলে বাড়ে।
খেয়াল রাখুন
প্রতিবার মাসিকের সময় একজন মহিলার শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে। তাই সেই পরিবর্তনগুলির দিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায় কখন সেক্স করার সময় আগত। সাধারণত ওভ্যুলেশনের কয়েকদিন আগে থেকে যোনি থেকে নির্গত মিউকাসের পরিবর্তন ঘটে। মিউকাস হয়ে ওঠে আরও স্বচ্ছ এবং পিচ্ছিল। অনেকটা ডিমের সাদা অংশের মতো দেখতে লাগে যোনি থেকে নিঃসৃত ফ্লুইডকে। আসলে সহবাসের সময় পুরুষসঙ্গীর স্পার্ম যাতে যোনিপথে অনায়াসে সাঁতার কেটে ডিম্বাণুর নিকটবর্তী হতে পারে সেই ব্যবস্থা পাকা করতেই মিউকাস ওমন পিচ্ছিল ও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। কোনও মহিলা যদি তাঁর যোনিতেও এমন পরিবর্তন দেখতে পান তাহলে তাঁর বোঝা উচিত, সেক্স করার জন্য এর চাইতে আর ভালো সময় হতে পারে না!
প্রযুক্তিকেও কাজে লাগান
অনেকেই নিজের কাজে নিখুঁত হতে চান। আপনিও এমন স্বভাবের হলে, যে কোনও ফার্মাসি থেকে কিনে নিতে পারেন ওভ্যুলেশন কিট। সেক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে ওভ্যুলেশনের আগে থেকেই নিয়ম মেনে সংগম করা যাবে।
এই কিট-এর সাহায্যে কী করা যাবে? একজন মহিলা যদি মনে করেন ওভ্যুলেশনের সময় কাছাকাছি চলে এসেছে, সেক্ষেত্রে তিনি ইউরিন টেস্ট করতে পারেন। ইউরিন টেস্ট-এর রিপোর্ট পজিটিভ এলে বুঝতে হবে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ওভ্যুলেশন হবে। সুতরাং সহবাস শুরু করার উপযুক্ত সময়ও শুরু হচ্ছে! এখন অনেকের কাছেই কিট ব্যবহারের বিষয়টি কঠিন বলে মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে সবচাইতে ভাল উপায় হল নিয়মিত পুরুষসঙ্গীটির সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া। প্রতি ২ থেকে ৩ দিন অন্তর যৌনতা উপভোগ করুন। তাতে সন্তানধারণের সম্ভাবনা বাড়বে। বিশেষ করে যে সকল মহিলার মাসিক চক্র নিয়মিত নয়, তাদের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশি ফলপ্রসূ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।