বাস্তবের কুম্ভকর্ণ! ৩৬৫দিনের মধ্যে মাত্র ৬৫ দিন জেগে থাকেন রাজস্থানের এই ব্যক্তি
ডাক্তারি ভাষায় ওই ব্যক্তির রয়েছে অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া। এই বিরল রোগ আদতে একপ্রকার মানসিক অসুস্থতা। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর এই রোগ ধরা পড়ে। একবার ঘুমিয়ে পড়লে টানা ২৫দিন ধরে তাঁর চলে নিদ্রাকাল।
ছুটির দিনগুলিতে একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমালেই মা-বাবার থেকে কুম্ভকর্ণের অপবাদ শুনতে হয়। এমনটা বাঙালির মধ্যবিত্ত পরিবারের চেনা ছবি। রামায়ণের পাতায় কুম্ভকর্ণের ঘুমভাঙানোর ঘটনা ও চরিত্র নিয়ে হাসি-ঠাট্টা লেগেই থাকে। তবে কুম্ভকর্ণের মতো একটি পার্শ্বচরিত্রটি শুধু একটি রঙ্গচরিত্র হিসেবেই মুখ্য হয়ে গিয়েছে। বছরের পর বছর ধরে ঘুমের মধ্যে ডুবে থাকা, কোনও স্বাভাবিক ঘটনা তো নয়ই। বরং বিষয়টি বেশ কৌতূহলেরও। ভাবছেন, এ সবই কাল্পনিক রূপরেখা! নাহ মোটেই না। বাস্তবের মাটিতেও এমন চরিত্র রয়েছে।
পশ্চিম রাজস্থানের যোধপুরের নাগৌর এলাকার এক বাসিন্দা বছরের ৩৬৫দিনের মধ্যে ৩০০দিনই ঘুমান! না , ভুল পড়েননি আপনি। ৪২ বছরের পুরখারাম বছরের মাত্র ৬৫দিন জেগে থাকেন, তাও খুব কষ্ট করেই। ডাক্তারি ভাষায় ওই ব্যক্তির রয়েছে অ্যাক্সিস হাইপারসোমনিয়া। এই বিরল রোগ আদতে একপ্রকার মানসিক অসুস্থতা। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তাঁর এই রোগ ধরা পড়ে। একবার ঘুমিয়ে পড়লে টানা ২৫দিন ধরে তাঁর চলে নিদ্রাকাল। বিচিত্র অসুখের জন্য গ্রামবাসীরা পুরখারামকে কুম্ভকর্ণ বলে ডাকেন।
নাগৌর জেলার পর্বতসার এলাকার ভাড়ওয়া গ্রামের বাসিন্দা পুরখারাম। একটি মুদির দোকান রয়েছে তাঁর। বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মাসে মাত্র পাঁচদিন দোকান খুলে ব্যবসা করতে পারেন। তাঁর এক আত্মীয়ের কথায়, একবার ঘুমিয়ে পড়লে এমন গভীর ঘুমের অতলে চলে যায়, যে ২০-২৫দিন ঘুম থেকে ওঠার কোনও নাম করে না সে। তবে সংসারের হাল ধরতে গিয়ে এখন সেই রোগকেও কিছুটা শায়েস্তা করার উপায় বের করেছেন পরিবারের লোকজন।টানা-৫-৬দিন পর তাঁকে ফের ঘুম থেকে ওঠানোর চেষ্টা করেন সদস্যরা।
ঘুম কাতরে পুরখারামের এমন অসুখ যে এতটা মারাত্মক তা প্রথমে জানা যায়নি। সময় অসময়ে পুরখারাম গভীর ঘুমের মধ্যে ডুবে গেলে আত্মীয়রা তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। কিন্তু ডাক্তার রোগ নির্ণয় করতে না পারায় পুরখারামের ঘুমের গভীরতা ও সময়সীমা বাড়তে থাকে। একটানা ২৫দিন ধরে সে ঘুমিয়ে থাকতে পারেন। ডাক্তারদের মতে, এই অসুখ অত্যন্ত বিরল। ঘুমের মধ্যেই এই রোগ আরও দ্রুত ছড়াতে শুরু করে। ফলে শরীরের সঙ্গে মস্তিষ্ক কোনওটাই একসঙ্গে কাজ করে না। ফলে কখন তাঁকে ঘুম থেকে উঠতে হবে, সেই ব্যক্তি নির্ণয় করতে পারে না। ২০১৫ সালে প্রথম এই রোগ সম্বন্ধে জানতে পারেন ডাক্তাররা। সেইসময় টানা ১৮ঘন্টা ঘুমিয়ে থাকতেন। বর্তমানে সঠিক চিকিত্সার অভাবে ঘন্টার হিসেবটি ২০ থেকে ২৫ দিনে গিয়ে ঠেকেছে।
অনেকেরই মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে, দীর্ঘ ২০-২৫ দিন যদি কোনও ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকেন, তাহলে সে এতদিন ধরে কি অভুক্ত থাকেন? জানা গিয়েছে, ঘুম আসার আগে পুরখারামের মাথায় তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয়। একবার যদি ঘুমিয়ে পড়েন, তাহলে তাঁকে জাগিয়ে তোলার সাধ্য কারোর নেই। তাই ঘুমের আগে তাঁকে খাইয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া এই রোগের কোনও সমাধান নেই। তাঁর মা কানওয়ারি দেবী স্ত্রী লিচ্ছমি দেবীর আশা, পুরখারাম একদিন সত্যিই সেরে উঠবে এবং আগের মতো স্বাভাবিক জীবন পরিচালনা করবেন।
আরও পড়ুন: জিভের রঙ নীল না কালো? জিভের রঙ দেখে বুঝে নিন আপনি কোন রোগে আক্রান্ত!