Dengue Diet: প্লেটলেট বাড়ছে, ডেঙ্গি আক্রান্তের খাদ্যতালিকা নিয়ে পরামর্শ বিশিষ্ট পুষ্টিবিদের
Dengue Fever: অনেকেই ডেঙ্গি হলে পেঁপে পাতার রসকে বেছে নেন ঘরোয়া টোটকা হিসেবে। এটা কতটা কার্যকর? TV9 বাংলার মাধ্যমে উত্তর দিলেন শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ।
পুজো শুরু হতে বাকি আর মাত্র ৭ দিন। কিন্তু গত ৭ দিনের চিত্রটা দেখলে বদলে যেতে পারে আপনার পুজোর প্ল্যান। গত এক সপ্তাহে রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হু-হু করে বেড়ে গিয়েছে। বর্তমানে ৬৩০ ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি সরকারি হাসপাতালে (২৪ সেপ্টেম্বর, শনিবার পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী)। কলকাতা-সহ রাজ্যের ১০টি জেলা দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে চলেছে। জ্বরের সঙ্গে দেখা দিচ্ছে গলা ব্যথা, গা-হাত-পায়ে যন্ত্রণা। ৭ দিনের মধ্যেই কমে যাচ্ছে প্লেটলেটের সংখ্যা। অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত ভর্তি করতে হচ্ছে হাসপাতালে। কিন্তু প্রাথমিক অবস্থাতেই যদি সর্তক হওয়া যায় তাহলে এড়ানো যাবে বড় বিপদ—এমনটাই মনে করে চিকিৎসকমহল। তবে অনেকেই ডেঙ্গি হলে পেঁপে পাতার রসকে বেছে নেন ঘরোয়া টোটকা হিসেবে। এটা কতটা কার্যকর? পাশাপাশি প্লেটলেট বাড়ায় ডেঙ্গি আক্রান্তের খাদ্যতালিকার উপর কতটা জোর দেওয়া উচিত? TV9 বাংলার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের উত্তর দিলেন শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ অরিজিৎ দে।
তিনি যা যা বললেন…
ডেঙ্গির ডায়েটকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়। এক, যখন রোগী ডেঙ্গি আক্রান্ত। ডেঙ্গি আক্রান্তের রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যাটা দ্রুত কমে যায়। এ বছর দেখছি, রোগী প্লেটলেটের সংখ্যাটা ৫০-৩০ হাজার অবধি কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় পেঁপে পাতার রস ভীষণ কার্যকর। কিন্তু পেঁপে পাতার রস সরাসরি খেতে নেই। পেঁপে পাতাটা ভাল করে ধুয়ে নিয়ে জলে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ওই সেদ্ধ পেঁপে পাতাটা মিক্সিতে দিয়ে তার রস বের করে নিতে হবে। সারাদিনে দু’বার ৫০ মিলি করে পেঁপে পাতার রস পান করতে হবে। এতে প্লেটলেটের সংখ্যা ধীরে-ধীরে স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। কিন্তু পেঁপে পাতার রস স্বাদের কারণে অনেকেই খেতে চায় না। এই ক্ষেত্রে পাকা পেঁপে খেতে পারেন। পাকা পেঁপের রসও পান করতে পারেন।
ডেঙ্গি আক্রান্তের রোগীর ডায়েটে প্রোটিনের উপরও নজর দেওয়া দরকার। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। তখন শরীর নেগেটিভ ব্যালেন্সে চলে যায়। তখন শরীরে ক্যালোরির পরিমাণটা বাড়ানো দরকার হয়ে পড়ে। শরীরে ক্যালোরির চাহিদা পূরণ করার জন্য প্রোটিনযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া হয়। যেমন সকালের একটা করে ডিম খান। দুপুরের খাবারে ডালের পরিমাণটা বাড়িয়ে দিন এবং সঙ্গে দু’টো করে মাছ খান। বিকেলের জলখাবারে ছোলা ভাজা কিংবা ছোলা সেদ্ধ রাখুন। সন্ধ্যেবেলা দুগ্ধজাত প্রোটিন খান। এক্ষেত্রে ছানা কিংবা টক দই সবচেয়ে বেশি। আর রাতে ভাত খান। ভাতের সঙ্গে ডাল ও যে কোনও একটি প্রাণীজ প্রোটিন রাখুন। অর্থাৎ মাছ, মাংস, ডিম। অনেকেই রাতে এই ধরনের খাবার খেতে চায় না, সেই ক্ষেত্রে সোয়াবিন খেতে পারেন।
প্লেটলেট স্বাভাবিক মাত্রায় আসার পরও সঠিক ডায়েট মেনে চলতে হবে। ডেঙ্গি আক্রান্তের প্রায় ১৪ দিন পর জ্বর না আসলেও শরীর দুর্বল থাকে। এই সময় প্রোটিন যুক্ত খাবার তো খাবেনই, পাশাপাশি ভিটামিন ও মিনারেল-সমৃদ্ধ খাবারও ডায়েটে রাখবেন। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবারও খেতে হবে। যে সব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি, সেগুলো এই সময় খেতে পারেন। এর জন্য আমন্ড, আখরোটের মতো খাবারকে ডায়েটে রাখতে পারেন। এছাড়াও এই সময় দিনে দু’টো করে তাজা ফল খান। পেঁপের পাশাপাশি আপেল, সবেদা, বেদানা, পেয়ারার মতো যে কোনও তাজা ও মরশুমি ফল খেতে পারেন। কিন্তু দ্বিগুণ পরিমাণে খান।
ডেঙ্গি কাটিয়ে সুস্থ হতে মোটামুটি ২০ দিন সময় লাগে। কিন্তু এরপরেও শরীরে দুর্বলতা থেকে যায়। এই সময় সঠিক খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। এই সময় ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে হবে। এর জন্য ফলের পরিমাণটা আরেকটু বাড়িয়ে দিতে পারেন। এই পর্যায়েও প্রোটিনের পরিমাণটা বেশি থাকবে। আর স্বাস্থ্যকর ফ্যাটযুক্ত খাবার খাবেন। তবে, ডেঙ্গির কারণে যদি শরীরে কোনও জটিলতা তৈরি হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। এসব ক্ষেত্রে শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ডায়েট চার্ট তৈরি করা হয়।