সম্মানহানি যখন আত্মহত্যার কারণ, NCRB-র ভয়াবহ তথ্য সম্পর্কে যা বললেন মনোচিকিৎসক
Student Suicide Prevention: 'পড়াশোনা করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে'—ছোট বয়স থেকে এটা মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে জীবন শেষ, এটা সবার আগে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কখনও বাবা-মা বোঝায়, কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাস্তবে ঘাঁটেও এই যুক্তি। কিন্তু এটাই যে একটা কিশোর প্রাণকে শেষ করে দিতে পারে, তা কখনও ভেবেছেন?

চায়ের আড্ডার ঠেক থেকে সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার-কমেন্টে চলছে ‘টুয়েলথ ফেল’-এর প্রশংসা। বিক্রান্ত ম্যাসি অভিনীত এবং বিধু বিনোদ চোপড়া পরিচালিত ‘টুয়েলথ ফেল’ অনেক ছাত্রছাত্রীকেই অনুপ্রাণিত করেছে। এ দিক থেকে পিছিয়ে নেই TVF-এর ‘অ্যাস্পির্যান্টস’-ও। কিন্তু সবার জীবনে ‘কোটা ফ্যাক্টরি’-এর জিতু ভাইয়া থাকে না, যে আপনাকে আইআইটি-তে চান্স পাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে। আর দিনে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পড়াশোনা করার পরও যখন আশানুরূপ ফল হয় না, অনেকের অবস্থাটা হয় ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ জয় লোবোর মতো। পরীক্ষায় ভাল ফল করতে না পারা, কেরিয়ারে সাফল্য না পাওয়ার মতো পরিস্থিতির ফলে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা এ সমাজে নতুন নয়। বরং, বছর-বছর নাবালক-নাবালিকাদের আত্মহত্যার সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। অর্থাৎ, সবাই মনোজের মতো ‘রিস্টার্ট’ করতে পারে না।
NCRB (ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো) ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ অ্যান্ড সুইসাইড ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার ফলে যে সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন, তার মধ্যে ৫০-৬০%-এর বয়স ১৮-এর কম। প্রেমের সম্পর্ক, সম্পর্কে বিচ্ছেদ—এই ধরনের ঘটনাগুলো কম বয়সিদের মধ্যে আত্মঘাতী হওয়ার প্রবণতা বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না করতে পারা অথবা অকৃতকার্য হওয়া, সঠিক কলেজে ভর্তি হতে না পারা, কেরিয়ারে সাফল্য না পাওয়ার মতো ঘটনাকেও সম্পূর্ণরূপে হাওয়ায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
‘পড়াশোনা করে যে, গাড়ি-ঘোড়া চড়ে সে’—ছোট বয়স থেকে এটা মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ম্যাধমিকে স্টার মার্কস হোক বা আইপিএস-আইএএস হওয়ায় লড়াই, অন্যদের থেকে বেশি নম্বর না পেলে কিংবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলে জীবন শেষ, এটা সবার আগে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কখনও বাবা-মা বোঝায়, কখনও শিক্ষক-শিক্ষিকা। বাস্তবে ঘাঁটেও এই যুক্তি। কিন্তু এটাই যে একটা কিশোর প্রাণকে শেষ করে দিতে পারে, তা কখনও ভেবেছেন? এই প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি (IPO)-র শিক্ষক-চিকিৎসক তথা ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটি-র সুইসাইড প্রিভেনশন সেল-এর কো-অর্ডিনেটর সুজিত সরখেলের সঙ্গে। তাঁর মতে, প্রথাগত চিন্তা, পরীক্ষার প্রতি ভয় এবং মনের মতো ফলাফল না হওয়া কমবয়সিদের মধ্যে আত্মহত্যা রূপে প্রকাশ পাচ্ছে।
সুজিত সরখেল আরও বলেন,
“যিনি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠছেন, তাঁর ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য বা অবসাদ একটা বড় ভূমিকা পালন করে। পরিস্থিতির চাপে সে আরেকটু দুর্বল বা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। কোনও মানসিক সমস্যা ছাড়া, একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, তখন তাঁর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে ‘loss of reputation’ অর্থাৎ সহজ বাংলায় সম্মানহানি। এই বিষয়টা কাজ করে একজন ছাত্রের ক্ষেত্রেও। যদি পরীক্ষায় ভাল ফল না করতে পারি, বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর সামনে গিয়ে কীভাবে দাঁড়াব—এটা একজন পড়ুয়ার মনে চলতে থাকে। এই চিন্তাটা সবসময় মনের ভিতর চলে। তখন এই লজ্জা, অপমানের হাত থেকে বাঁচার পথ খুঁজতে থাকে সে। এই বাঁচার পথটাই অনেকের ক্ষেত্রে সুইসাইড হিসেবে প্রকাশ পায়।”





