শরীরে একটি প্রয়োজনীয় ভিটামিন হল ভিটামিন বি। এর মধ্যে আটটি গ্রুপ রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ভিটামিন বি১২। আমরা যে খাবার খাই, সেটাকে শক্তিতে রূপান্তর করার জন্য এই ভিটামিন বি১২ (Vitamin B12) অত্যন্ত জরুরি। কার্বোহাইড্রেট থেকে শক্তি উৎপাদন করে শরীরকে সহায়তা করার পাশাপাশি, এই বি ভিটামিনগুলি অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে ফ্যাট এবং প্রোটিন ব্যবহার করতে সহায়তা করে। যদিও ভিটামিন বি১২ শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলির (Essential Nutrition) মধ্যে একটি, তবে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এই পুষ্টির ঘাটতিতে (Deficiency) ভুগছেন। যার প্রভাব ভারতেও দেখা যায়। তার কারণ আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ নিরামিষভোজী, এবং এমনকি যাঁরা আমিষ খাবার খান, তাঁদের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি রয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৭ শতাংশ মানুষ ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতিতে ভুগছেন।
ভিটামিন বি১২-এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল স্বাস্থ্যকর রক্ত এবং স্নায়ু কোষ বজায় রাখা। পুষ্টি আপনার সমস্ত কোষে ডিএনএ এবং জেনেটিক উপাদান তৈরিতে একটি ভূমিকা পালন করে। এটি মেগালোব্লাস্টিক রক্তাল্পতা প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রেও প্রয়োজন, যার মধ্যে অস্বাভাবিক অস্থি মজ্জা গঠন, অপরিপক্ক লোহিত রক্ত কণিকা ইত্যাদি রয়েছে।
হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্যও পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি১২ গ্রহণ করা প্রয়োজন। শরীরে যখন এই প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়, তখন অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। শুধু আপনার শারীরিক স্বাস্থ্যই নয়, এই ভিটামিনের ঘাটতি আপনার মেজাজকেও প্রভাবিত করতে পারে এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি আরও খারাপ করে তুলতে পারে। উপরন্ত, স্বাস্থ্যকর চুল, ত্বক এবং নখের জন্যও শরীরে এই পুষ্টির প্রয়োজন।
ভিটামিন বি-১২ একটি দ্রবণীয় ভিটামিন যা জলে দ্রবীভূত হওয়ার পরে রক্ত প্রবাহের মধ্য দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণ ক্ষেত্রে, আমাদের শরীর জল-দ্রবণীয় ভিটামিন সংরক্ষণ করে না। একবার এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়ে গেলেই সমস্ত অতিরিক্ত পুষ্টি প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু ভিটামিন বি১২-এর ক্ষেত্রে, শরীর কয়েক বছরের জন্য এই পুষ্টির কিছু অংশ সংরক্ষণ করে রাখতে পারে।
সাধারণত নিরামিষভোজী এবং ভেগানদের মধ্যে ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়। কারণ উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য পণ্যগুলিতে এই পুষ্টি থাকে না। ভিটামিন বি১২-এর প্রাকৃতিক উৎসগুলির বেশিরভাগই প্রাণী-ভিত্তিক খাদ্য। নিরামিষভোজীদের জন্য, এই পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর একমাত্র উপায় হল পরিপূরক খাবার গ্রহণ করা। নিরামিষভোজী এবং ভেগান ছাড়াও, যাঁদের খাওয়ার অভ্যাস কম, যাঁরা ফ্যাট ডায়েট অনুসরণ করেন এবং যাঁরা নির্দিষ্ট ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের মধ্যে এই পুষ্টির ঘাটতি দেখা যায়।
এই পুষ্টির পরিমাণ বাড়ানোর জন্য, প্রথমে, ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ প্রাকৃতিক খাবারগুলি ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন। যদি প্রতিদিনের প্রয়োজন খাদ্য দ্বারা পূরণ করা সম্ভব না হয়, তবে আপনি আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার পরে পরিপূরকগুলি বেছে নিতে পারেন। ভিটামিন বি১২ -র কিছু সাধারণ উৎস হল দুধ, ডিম, দই, স্যামন, টুনা, বিফ, মাংসের লিভার এবং কিডনি, মাশরুম, গাঁজন করা খাদ্য, নিউট্রিশন্যাল ইস্ট।
আরও পড়ুন: গাঁটের ব্যথায় জেরবার? আয়ুর্বেদে রয়েছে ব্যথা থেকে উপশম পাওয়ার সহজ উপায়