বর্তমানে সমগ্র পৃথিবী লড়াই করছে করোনা ভাইরাসের সঙ্গে। পৃথিবী জুড়ে গবেষণায় দেখা গিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে নষ্ট করে দেয় শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ, শরীরের একাধিক কার্য সম্পাদনে প্রভাব ফেলে এই ভাইরাস। ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ ছাড়িয়েছে করোনা আক্রান্তে মৃতের সংখ্যা। কিন্তু করোনায় সুস্থ হওয়ার পর মৃতের সংখ্যা ঠিক কত দাঁড়িয়েছে তার হিসাব হয়তো কারোর কাছেই নেই।
একজন ৩৫ বছরের যুবক করোনায় আক্রান্ত হলেন এবং কয়েক সপ্তাহ পরে একদম সুস্থ হয়ে উঠলেন। কিন্তু তার এক মাসের মাথায় তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। অনেকের ধারণা কম বয়সিদের মধ্যে হার্ট অ্যার্টাকের সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যদিও কম বয়সিদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ দায়ী। কিন্তু করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর হার্ট অ্যার্টাকে মৃত্যুর পিছনে করোনা ভাইরাস দায়ী।
সম্প্রতি অক্সফোর্ডের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে ১০ জনের মধ্যে ৫ জন ব্যক্তি কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর হার্ট অ্যার্টাকে মারা গেছেন। এমনকি, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগে যাদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই ছিল না, তারাও কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়ার পর একাধিক হৃদ সংক্রান্ত রোগে অভিযোগ জানিয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, করোনা ভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়ার এক থেকে চার মাসের মাথায় হার্ট অ্যাটাক হয়। এর কারণ SARS-CoV-2 ভাইরাস শরীরে ফুসফুস থেকে শুরু করে মস্তিষ্কে অবধি প্রভাব ফেলে। এই ভাইরাস রক্তনালীর সঙ্গে শরীরে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর ফলে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এর ফলেই করোনার সময় বা করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর একাধিক হৃদ রোগের সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণভাবে, করোনারি ধমনির মধ্যে যদি ব্লকেজ তৈরি হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। অর্থাত্ যখন হৃদপিণ্ডের কোনও শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে হৃদপিণ্ডে রক্ত প্রবাহে বাঁধার সৃষ্টি করে তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়।
চিকিৎসকরা হৃদযন্ত্রের সমস্যা এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার কিছু উপসর্গ উল্লেখ করেছেন। হঠাৎ বুকে ব্যথা, অত্যধিক পরিমাণে ঘাম, কাঁধ বা চোয়ালের চারপাশে ব্যথা, অ্যারিথমিয়াস অর্থাৎ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, হঠাৎ বুক ধড়ফড়, রক্ত জমাট বাঁধা এই ধরনের একাধিক উপসর্গ লক্ষ্য করা যায়।
করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের অসন্নের খবর আমরা জানি। এই ক্ষেত্রে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আরও বিপদজনক। এটি শরীরে আরও প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় এই ডেল্টা ভেরিয়েন্ট শিশুদের ওপরও প্রভাব ফেলবে বলে জানা গিয়েছে। সুতরাং, শুধু কম বয়সি বা প্রবীণ নয়, গবেষণায় দেখা গিয়েছে শিশুদের ফুসফুসেও প্রভাব ফেলবে করোনা ভাইরাস। মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লেমাটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন অর্থাৎ এমআইএস-সি থেকে বেঁচে যাওয়ার পর শিশুদের মধ্যেও দেখা দেবে হৃদরোগের সমস্যা। শক্ত হৃদযন্ত্রের পেশী এবং পালস রেট কমে যাওয়ার মত একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন: সিদ্ধার্থের মতো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে আপনারও! পুরুষ-মহিলার রয়েছে ভিন্ন লক্ষণ, সেগুলি কী কী?