ইউরোপীয়ান স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (ইএসও) সম্মেলনে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের সংখ্যা বাড়ছে। এটি নানান ধরনের অপ্রচলিত ঝুঁকি যেমন কাজের চাপ, যথেষ্ট ঘুম না হওয়া, ক্লান্তির মতো কারণগুলির জন্য হচ্ছে। মূলত মানসিক চাপকেই হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
যদিও ডায়াবেটিস, রক্তচাপের বৃদ্ধি, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি, ধূমপান, মোটা হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য বিশেষ করে দায়ী হয়। কিন্তু সম্প্রতি, এটি লক্ষ্য করা গেছে যে কাজের চাপ এবং ঘুমের সমস্যাগুলি উল্লেখযোগ্যভাবে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
চিরাচরিত ধারণা অনুযায়ী পুরুষরা নারীদের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু, জুরিখ হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডঃ মার্টিন হ্যানসেল এবং তাঁর দল দাবি করেন, “গবেষণায় দেখা গেছে যে পুরুষদের ধূমপানের সমস্যা এবং মোটা হওয়ার সমস্যা মহিলাদের তুলনায় বেশি থাকলেও মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। এর কারণ ছিল কাজের চাপ, অপর্যাপ্ত ঘুম এবং ক্লান্ত বোধ করা।”
হ্যানসেল যোগ করেছেন, “এই হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি দেখা গেছে যেসব মহিলারা ফুল টাইম জব করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে। বাড়ির কাজের পাশপাশি অফিসের কাজ সামলে ওঠা এই ধরনের সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সেইসঙ্গে মহিলাদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য চাহিদার দিকে ব্যস্ত জীবনে নজর না দিতে পারাও একটা প্রধান কারণ।”
গবেষকরা ২০০৭, ২০১২ এবং ২০১৭ সালের সুইস স্বাস্থ্য সমীক্ষায় করা ২২,০০০ পুরুষ ও মহিলার তথ্য মিলিয়ে দেখেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্য অপ্রচলিত ঝুঁকির কারণগুলি রিপোর্ট করা মহিলাদের সংখ্যা মারাত্মক বৃদ্ধি পেয়েছেন। এই প্রবণতা ২০০৭ সালে ৩৮ শতাংশ ছিল। ২০১৭ সালে ফুল টাইম কাজ করা মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা ৪৪ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
সামগ্রিকভাবে, উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রে, কর্মস্থলে স্ট্রেসের বৃদ্ধির পরিমাণ ২০১২ সালে ৫৯ শতাংশ ছিল। তা ২০১৭ সালে বেড়ে ৬৬ শতাংশে হয়েছে। যারা ক্লান্ত বোধ করছেন তাঁদের পরিসংখ্যান ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ (মহিলাদের মধ্যে ৩৩ শতাংশ এবং পুরুষদের মধ্যে ২৬ শতাংশ) হয়েছে।
একই সময়ের মধ্যে, ঘুম জনিত সমস্যার কারণে ভোগা মানুষের সংখ্যা ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ২৯ শতাংশ হয়েছে। তীব্র ঘুমের সমস্যাগুলিও পুরুষদের (৫ শতাংশ) তুলনায় মহিলাদের (৮ শতাংশ) বেশি তাড়াতাড়ি বেড়ে গিয়েছে।
যদিও, গবেষণায় দেখা গেছে যে কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিকাশের জন্য প্রচলিত ঝুঁকির কারণগুললির মাত্রা একইরকম রয়েছে। যার মধ্যে ২৭ শতাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিল, ১৮ শতাংশ কোলেস্টেরল বেড়েছিল এবং ৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছিল। মোটা হয়েছে ১১ শতাংশ এবং ধূমপান প্রতিদিন প্রায় ১০.৫ থেকে কমে ৯.৫ সিগারেটে নেমেছিল। তবে, হৃদরোগের প্রচলিত এই কারণগুলি মূলত পুরুষদের মধ্যেই বেশি দেখা গেছিল।
আরও পড়ুন: পেটের সমস্যায় ভুগছেন? গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার সম্পর্কে আগেই সচেতন হয়ে যান!