আহমেদাবাদ: দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মামলা চলার পর অবশেষে রায়দান হল আহমেদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ (Ahmedabad Serial Blast) মামলার। গুজরাটের বিশেষ আদালতের (Gujarat Special Court) তরফে এদিন রায়দান করা হয়। ২০০৮ সালে আহমেদাবাদে যে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ হয়েছিল, তাতে মৃত্যু হয়েছিল ৫৬ জনের, আহত হয়েছিলেন কমপক্ষে ২০০ জন। ওই ঘটনাতেই এদিন ৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এরমধ্যে ৩৮ জনকে ফাঁসির সাজা (Death Sentence) দেওয়া হয়েছে। বাকি ১১জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত সপ্তাহেই ২৮ জনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছিল। দেশে এই প্রথম কোনও মামলায় একসঙ্গে এতজনকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হল।
গত ৮ ফেব্রুয়ারিই গুজরাট আদালতের তরফে ৪৯ জনকে অভিযুক্ত বলে ঘোষণা করা হয়। বাকি ২৮ জনকে বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে মামলা চলার পর গত বছর সেপ্টেম্বর মাসেই এই মামলার শুনানি শেষ করা হয়। এরপর আজ মামলার চূড়ান্ত রায়দান করা হয়।
২০০৮ সালের ২৬ জুলাই গুজরাটের আহমেদাবাদে ৭০ মিনিটের মধ্যেই গোটা শহরজুড়ে পরপর ২১টি বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল এবং ২০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন। বিস্ফোরণের কয়েকদিন পরে সুরাট শহরের বিভিন্ন অংশ থেকে বোমা উদ্ধার করা হয়। আহমেদাবাদে মোট ২০টি এফআইআর ও সুরাটে ১৫টি এফআইআর দায়ের করা হয়। মোট ৩৫টি এফআইআর মিলিয়ে গুজরাট বিশেষ আদালতে শুনানি শুরু হয়। উল্লেখ্য, সেই সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি সেই সময় বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছিল, এই বিস্ফোরণের পিছনে হাত ছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিন নামক জঙ্গি সংগঠনের। এছাড়াও নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ইসলামিক মুভমেন্ট অব ইন্ডিয়া ও হরকত-এ-জিহাদি নামক সংগঠনের হাতও ছিল। ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা ও গোধরা বিস্ফোরণের বদলা নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানা যায়। আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, বিস্ফোরণ ঘটানোর আগেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে ইমেল করে হামলার কথা জানিয়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিন। পশ্চিমবঙ্গের এক কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাবুভাইও এই হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানা গিয়েছিল।
২০০৯ সালে এই মামলার শুনানি শুরু হয়। ইন্ডিয়ান মুজাহিদ্দিনের সঙ্গে যোগসাজস থাকার সন্দেহে মোট ৭৮জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। পরে একজন রাজসাক্ষী হয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তের সংখ্যা কমে ৭৭ করা হয়। অভিযুক্তদের ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা ছাড়াও ইউএপিএ আইন, বিস্ফোরক দ্রব্য় আইন ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে।