দেহরাদুন: একটানা বৃষ্টিতে ধ্বংসলীলা জারি দেবভূমিতে (Uttarakhand)। দুদিনেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৪২-এ। মঙ্গলবারই প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে একাধিক জায়গায় ভূমিধস (Landslide) শুরু হয়েছে। প্রবল জলের স্রোতেও বাড়ি সহ ভেসে গিয়েছেন বহু মানুষ। শেষ খবর অনুযায়ী, এখনও অবধি মোট ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ৪২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে মঙ্গলবার অবধি, তার মধ্যে ২৮ জনেরই মৃত্যু হয়েছে নৈনিতালে (Nainital)। এছাড়াও আলমোড়া ও চাম্পায়তে ৬ জন করে এবং পিথোরাগড় ও উধম সিং নগর জেলায় একজন করে মৃত্যুর খবর মিলেছে। ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের রাজ্য সরকারের তরফে পরিবার পিছু ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। যাঁরা বাড়ি-ঘর হারিয়েছেন তাঁদের ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, বিপর্যয়ে যাঁরা গবাদি পশু হারিয়েছেন, তাঁদেরও সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি।
তিন দিন ধরে এক নাগাড়ে বৃষ্টির কারণেই লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে দেবভূমি উত্তরাখণ্ড। একাধিক এলাকায় জলের তোড়ে ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে সেতু। উদ্ধারকার্যে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের পাশাপাশি, এনডিআরএফ (NDRF), সেনাবাহিনী(Indian Army)-ও হাত লাগিয়েছে। ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডে ১৫টি এনডিআরএফের দল পাঠানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এখনও অবধি প্রায় ৩০০-রও বেশি মানুষকে বন্যাদুর্গত ও বিপর্যয়স্থল থেকে উদ্ধার করেছেন তারা। ভারতীয় বায়ুসেনার তরফেও উদ্ধারকার্যে সাহায্য়ের জন্য তিনটি কপ্টার দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হেলিকপ্টারকেই নৈনিতালে পাঠানো হয়েছে।
মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও ধসের জেরে উত্তরাখণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র নৈনিতালের সঙ্গে উত্তরাখণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। যে তিনটি সড়কপথে নৈনিতাল যাওয়া যেত, সবকটিই ভূমিধসের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই একাঝিক জায়গায় বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবা বিপর্যস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে মল রোড ও বোট হাউস ক্লাবও অর্ধেক ডুবে গিয়েছে।
কাঠগোদাম, রুদ্রপুর ও লালকৌনের সমস্ত রাস্তা, সেতু এমনকি রেললাইনও ভারী বৃষ্টি ও ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃষ্টি থামলে তবেই সড়ক ও রেললাইন মেরামতির কাজ শুরু করা যাবে। কমপক্ষে চার থেকে পাঁচদিন লাগবে মেরামতি করতে।
মঙ্গলবারই আকাশপথে বন্য়া দুর্গত এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি। চারধাম যাত্রায় আসা পুণ্যার্থীদেরতিনি অনুরোধ করেন, তারা যেন এই দুর্যোগের মধ্যে বাইরে না বের হন এবং পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া অবধি সুরক্ষিত কোনও জায়গায় আশ্রয় নেন। গুজরাটের মন্ত্রী রাজেন্দ্র ত্রিবেদী জানিয়েছেন প্রায় ১০০ জন গুজরাটের বাসিন্দা, যারা চারধাম যাত্রায় গিয়েছিলেন, তারা আটকে পড়েছেন। একাধিক রাজ্য থেকে পর্যটক আটকে পড়ার খবরও মিলছে।