COVID-19: ‘করোনার বাড়াবাড়ন্তে মদত জোগাতে পারে বায়ুদূষণ’, আসন্ন বিপদ নিয়ে কী বললেন এইমস প্রধান?
Air Pollution& COVID-19: দূষণের কারণ হিসাবে তিনি বলেন, "অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যেহেতু বাতাসের চলাচল খুবই কম হয়, সেই কারণে বাজি ফাটানো বা শুকনো খড় পোড়ানো থেকে উৎপাদিত দূষিত কণাগুলি ভূপৃষ্ঠের কাছেই অবস্থান করে। এরফলে ধীরে ধীরে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।"
নয়া দিল্লি: সতর্ক করা হয়েছিল বারংবার, তবুও যাবতীয় নিয়মবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই দিওয়ালি (Diwali) পালনে বাজি (Fire Crackers) হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাজধানীর এক অংশের বাসিন্দারা। সামান্য অসতর্কতার ফলও মিলেছে হাতেনাতেই। দিওয়ালির পরদিন থেকেই একাধিক দিল্লিবাসী চোখ ও গলা জ্বালার অভিযোগ জানিয়েছেন। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, বিগত পাঁচ বছরের দীপাবলি পরবর্তী সময়ে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান সবথেকে খারাপ ছিল শুক্রবারই। দিওয়ালি পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে বাতাসের গুণগত মানের সূচকের গড় পৌঁছে গিয়েছিল ৪৬২ তে।
দীপাবলির রাতে বাজি ফাটানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল রাজধানীতে। কিন্তু সে সব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই অনেকেই বাজি ফাটিয়েছেন। আর তার সঙ্গে ফসলের অবশিষ্ঠাংশ পোড়ানোর সমস্যা তো রয়েছেই। দক্ষিণ দিল্লির লাজপত নগর, উত্তর দিল্লির বুরারি, পশ্চিম দিল্লির পশ্চিম বিহার এবং পূর্ব দিল্লির শাহদারার বাসিন্দারা জানিয়েছেন সন্ধ্যে ৭ টা নাগাদ বাজার সঙ্গে সঙ্গে দিল্লির বিভিন্ন এলাকায় বাজি ফাটানোর শুরু হয়ে যায়।
দিল্লিবাসীদের অনেকেই কাল রাতে গলা ও চোখ জ্বালা অনুভব করেছেন বলে জানিয়েছেন। বিশেষ করে দিল্লি সংলগ্ন এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি ছিল ভয়ঙ্কর। এদিকে, এই বাজি পোড়ানো ও ফসলের অবশিষ্ঠ অংশ পোড়ানোর কারণে বাতাসে যে পরিমাণ দূষিত কণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে আরও বড় বিপদের সম্ভাবনার কথা জানালেন এইমস (AIIMS) প্রধান ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া (Randeep Guleria)। তিনি বলেন, “যেহেতু করোনা(COVID-19)-র মতোই দূষণ(Pollution)-ও শ্বাসযন্ত্রকেই প্রভাবিত করে, সেই কারণে অধিক মাত্রায় দূষণ করোনা সংক্রমণকে আরও গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে দিতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।”
এই দূষণের কারণ হিসাবে তিনি বলেন, “অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যেহেতু বাতাসের চলাচল খুবই কম হয়, সেই কারণে বাজি ফাটানো বা শুকনো খড় পোড়ানো থেকে উৎপাদিত দূষিত কণাগুলি ভূপৃষ্ঠের কাছেই অবস্থান করে। এরফলে ধীরে ধীরে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।”
করোনা সংক্রমণে শ্বাসযন্ত্র সর্বাধিক প্রভাবিত হয়, এ কথা বর্তমানে সকলেরই জানা। তবে যাদের শ্বাসকষ্ট ছাড়া অন্য কোনও শ্বাসন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তারাও বিপদমুক্ত নন বলেই জানান ডঃ গুলেরিয়া। এই বিষয়ে এইমস প্রধান বলেন, “যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, কেবল তাদের নিয়েই চিন্তা নয়, একইসঙ্গে যাদের ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস, সিওপিডি বা অ্যাজমা রয়েছে, তাদের অসুস্থ হওয়ার হার ক্রমশ বাড়তে থাকে। নেবুলাইজ়ার বা ইনহেলারের ব্যবহারও বাড়ে।” এককথায় বলতে গেলে, যাদের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, দূষণের কারণে তাদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
দুই ধরনের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ডঃ গুলেরিয়া দাবি করেন যে, করোকালে বায়ুদূষণ রোগীদের আরও বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “একটি গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে যে দূষিত বায়ুতে ভাইরাস সাধারণের থেকে বেশি সময় থাকতে পারে। ফলে এটি বায়ু দ্বারা সংক্রামিত রোগে পরিণত হতে পারে। ২০০৩ সালে সার্স সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর অপর একটি গবেষণার তথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, আমেরিকা, ইটালির মতো দেশ,যেখানে দূষণের মাত্রা বেশি, সেখানে যারা আগে করোনায় সংক্রমিত হয়েছিলেন, তাদের প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ফুসফুসে প্রদাহ থেকে শুরু করে চিরতরে ক্ষতি অবধি হতে পারে। করোনা সংক্রমণ ও দূষণ মিলিতভাবে মৃত্যুর হার আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।”
শিশুদের ক্ষেত্রে বায়ুদূষণ ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলেই জানান ডঃ গুলেরিয়া। তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমণের আগে দূষণের কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হওয়া নিয়ে একটি গবেষণা করা হয়েছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল যে যখনই দূষণের মাত্রা বেড়েছে, রোগী ভর্তির হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষত, শ্বাসকষ্ট নিয়ে শিশুদের জরুরি বিভাগে ভর্তির হার সর্বাধিক ছিল।”
আরও পড়ুন: Mukesh Ambani: লন্ডনে ৫৯২ কোটির প্রাসাদ কিনেছেন আম্বানী, সত্যিই কি দেশ ছাড়ছে পরিবার?