Amit Shah: ১৫০ বছর পর ৩ আইনে বদল! কী প্রয়োজন ছিল? ব্যাখ্যা দিলেন শাহ
Amit Shah explains 3 new criminal law bills: বিরোধী-শূন্য লোকসভাতেই এই বিলের বিষয়ে আলোচনা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, এই তিনটি নয়া বিল ভারতকে দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি দাবি করেন, ন্যায়বিচার, সমতা ও নিরপেক্ষতার ধারণার ভিত্তিতেই এই তিন নয়া বিধি তৈরি করা হয়েছে।
নয়া দিল্লি: বুধবার (২০ ডিসেম্বর), লোকসভায় পাশ হল ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত তিনটি বিল। ফলে, ১৫০ বছরের পুরোনো ভারতীয় দণ্ডবিধি, ভারতীয় ফৌজদারি আইন এবং ভারতীয় সাক্ষ্য আইনের বদলে, এই তিনটি বিল আনা হচ্ছে। এদিন, লোকসভায় এই তিন বিলের উপর বিতর্ক হয়। যদিও, গণহারে সাসপেন্ড করার জেরে, বিরোধী আসনে প্রায় কোনও সাংসদ ছিলেন না বললেই চলে। বিরোধী-শূন্য লোকসভাতেই এই বিলের বিষয়ে আলোচনা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানান, এই তিনটি নয়া বিল ভারতকে দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে। তিনি দাবি করেন, ন্যায়বিচার, সমতা ও নিরপেক্ষতার ধারণার ভিত্তিতেই এই তিন নয়া বিধি তৈরি করা হয়েছে। এই বিল তিনটি আইনে পরিণত হলে সারা দেশে এক ধরনের বিচার ব্যবস্থা চালু হবে। সমতা আসবে বিচার ব্যবস্থায়।
দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি
তিনি বলেন, লাল কেল্লা থেকেই প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছিলেন, দেশকে ঔপনিবেশিক আইন থেকে মুক্ত করতে হবে। এরপর ২০১৯ সাল থেকে এই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অমিত শাহ বলেন, ব্রিটিশ আমলের আইনগুলি প্রজাদের শাসন করার জন্য তৈরি করেছিল বিদেশি শাসকরা। এই আইনগুলি দেশের মানুষের জন্য করা হয়নি, ব্রিটিশ রাজত্ব কায়েম রাখার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছিল। স্বাধীনতার পর সেই আইনের বদলের প্রয়োজন ছিল। নয়া তিনটি আইন আমাদের দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তি দেবে। সংবিধানের চেতনায় এই আইনগুলি তৈরি করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “যারা বলে এই তিনটি নয়া বিল আনার প্রয়োজন কী, তারা বোঝে না। তাদের বলব, খোলা মন রাখলে, ভারতীয় মন রাখলে, এর প্রয়োজন বুঝবেন। কিন্তু, আপনার মন যদি ইতালির হয়, তবে এর প্রয়োজন আপনি কখনই বুঝতে পারবেন না।”
মানবিক হবে ফৌজদারি বিচার
তিনি আরও বলেন, সংবিধানের চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, এই আইনগুলি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে ব্যক্তি স্বাধীনতা বজায় থাকে এবং সবাই যাতে আইনের চোখে সমান আচরণ পায়। অমিত শাহ জানান, ব্রিটিশ শাসনের অনেক আগে থেকেই ভারতীয় সমাজে ন্যায়বিচারের ধারণা প্রচলিত ছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন, বহু ভারতীয় দর্শনকে এই তিন বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ন্যায়বিচার থেকেই শাস্তির ধারণা এসেছে। শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্য হল নির্যাতিতকে ন্যায়বিচার দেওয়া এবং মানুষ যাতে আর অপরাধ না করে, তা নিশ্চিত করা। শাস্তিদানের মাধ্যমে সমাজের একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়। এই নয়া বিলগুলি ভারতীয় ন্যাবিচারের ধারণা প্রতিফলিত হবে। স্বাধীনতার পর এই প্রথমবার ফৌজদারি বিচারের আইন মানবিক হয়ে উঠবে।
প্রথমবার সন্ত্রাসবাদের ব্যাখ্যা
অমিত শাহ আরও জানিয়েছেন, এই প্রথম ভারতীয় আইনে সন্ত্রাসবাদের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে, এই ক্ষেত্রে যে সকল আইনের ফাঁক ছিল, কেউ আর তার সুযোগ নিতে পারবে না। রাজদ্রোহিতাকে, রাষ্ট্রদ্রোহিতায় পরিণত করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ব্যক্তির জায়গায় দেশকে জায়গা দেওয়া হয়েছে। যারা দেশের ক্ষতি করবে, তাদের কখনই রেহাই দেওয়া হবে না।
মব লিঞ্চিংয়ের শাস্তি ফাঁসি
দেশে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন জায়গায় মব লিঞ্চিং, অর্থাৎ গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে, নয়া বিলগুলিতে মব লিঞ্চিং-এর অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেওয়া হয়েছে। অমিত শাহ বলেছেন, “মব লিঞ্চিং এক জঘন্য অপরাধ। এই আইনে আমরা মব লিঞ্চিং-এর অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান দিয়েছি। গত ৭০ বছরের মধ্যে ৫৮ বছর দেশ শাসন করেছে কংগ্রেস। তারা ক্ষমতায় থেকেও এই আইন বদলায়নি কেন? প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
ভবিষ্যতের আইন
অমিত শাহ আরও জানিয়েছেন, আগামী ১০০ বছরে গোটা বিশ্বে অনেক প্রযুক্তিগত পরিবর্তন ঘটবে। নয়া তিন বিলে, সেই ভবিষ্যতের কথা ভেবেও আইনের বিধান রাখা হয়েছে। সাইবার অপরাধের জন্যও অনেক বিধান রাখা হয়েছে।
পুলিশ এবং নাগরিক অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য
অমিত শাহ আরও দাবি করেছেন, নয়া তিন বিলে, পুলিশ ও নাগরিকের অধিকারের মধ্যে ভারসাম্য রাখা হয়েছে। এর ফলে শাস্তি প্রদানের সংখ্যা বাড়বে। ন্যায়বিচার, সমতা এবং নিরপেক্ষতার ধারণাকে বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ফরেনসিক বিজ্ঞানও।
এক নজরে ফৌজদারি বিল
এই তিনটি আইনই ১৫০ বছর পর বদলানো হচ্ছে। তিনটি বিল আইনে পরিণত হলে, সেই আইনের ভিত্তিতেই বিতার ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। এর আগে ভারতীয় ফৌজদারি বিধিতে ৪৮৪টি ধারা ছিল। এর বদলে যে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা বিল আনা হচ্ছে, তাতে থাকছে ৫৩১টি ধারা। এর ১৭৭টি বিভাগে অদলবদল করা হয়েছে। ৯টি নতুন বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে, ৩৯টি নতুন উপ-বিভাগ যুক্ত করা হয়েছে। ৪৪টি নতুন বিধান যোগ করা হয়েছে।