পটনা: চারদিন নিখোঁজ থাকার পর শুক্রবার রাস্তার ধার থেকে আধ পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছিল বিহারের এক তরুণ সাংবাদিকের (Journalist Murder)। পরিবারের দাবি ছিল, একের পর এক ভুয়ো ক্লিনিকের (Fake Clinic) পর্দাফাঁস করাতেই খুন করা হয়েছে ওই সাংবাদিককে। যদিও রবিবার মধুবনী পুলিশের তরফে জানানো হল, ত্রিকোণ প্রেমের (Love Triangle) সম্পর্কের জেরেই খুন হতে হয়েছে ২২ বছকের বুদ্ধিনাথ ওরফে অবিনাশ ঝাকে।
বুদ্ধিনাথ ঝা ওরফে অবিনাশ ঝা নামক ওই সাংবাদিক স্থানীয় একটি সংবাদ পোর্টালে কাজ করতেন। দুদিন আগেই তিনি ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ক্লিনিকের নাম উল্লেখ করে সেগুলিকে নকল বলে দাবি করেন। ওই ফেসবুক পোস্ট(Facebook Post)-টি করার পর থেকেই তিনি গায়েব হয়ে যান।
চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত ১০টা নাগাদ তাঁকে শেষবার দেখা গিয়েছিল। বাড়ির কাছেই বসানো একটি সিসিটিভি ফুটেজে (CCTV Footage) দেখা গিয়েছিল বাড়ি থেকে কারোর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতে সে রাত ন’টা নাগাদ বের হয়েছিল। বাড়ির গলিতেই অবস্থিত নিজস্ব অফিসেও ঢুকতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কেউ না আসায় পুলিশে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ দায়ের করে পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ মোবাইলের গতিবিধি শনাক্ত করে বুধবার বেতুন গ্রামে সকাল ন’টা নাগাদ শেষবার সিগন্যাল পাওয়া গিয়েছিল। তারপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় মোবাইলটি। বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে ওই গ্রামে কী করছিল বুদ্ধিনাথ, তা জানতে পুলিশ ওই গ্রামে গেলেও, সেখানে তার কোনও খোঁজ মেলেনি।
শুক্রবার বুদ্ধিনাথের এক মাসতুতো ভাইয়ের কাছে খবর আসে যে, বেতুন গ্রামের উপর গিয়ে যাওয়া হাইওয়ের পাশেই একটি আধ পোড়া দেহ উদ্ধার হয়েছে। সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তাঁর হাতের আংটি, পায়ের একটি দাগ ও গলার চেইন দেখেই তাঁকে চিহ্নিত করা হয়।
তদন্তে নেমে রবিবার মধুবনী পুলিশের তরফে ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের নাম রোশন কুমার, বিট্টু কুমার, দীপক কুমার, পবন কুমার, মনীশ কুমার ও পূর্ণকলা দেবী। পুলিশি জেরায় পূর্ণকলা দেবী জানান, তিনি বুদ্ধিনাথ ঝাকে ভালবাসতেন, তাঁকে নিজের মনে কথাও জানিয়েছিলেন। এদিকে, পবন কুমার নামক এক ব্যক্তি তাঁকে ভালবাসতেন।
পবন নামের ওই যুবক চাইতেন না যে, বুদ্ধিনাথ ঝা ও পূর্ণকলা দেবী একে অপরের সঙ্গে কথা বলুক। সেই কারণেই তিনি প্রায়সময়ই পূর্ণকলা দেবীর উপরে চাপ সৃষ্টি করতেন, যাতে তিনি বুদ্ধিনাথের সঙ্গে কথা না বলেন।
ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক থেকে যে ব্যক্তিগত শত্রুতা তৈরি হয়, তার জেরেই পবন কুমার রোশন কুমার নামক এক যুবকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে খুন করে বুদ্ধিনাথকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রোশন কুমারের বেণিপট্টিতে একটি ল্যাবরেটরি ছিল। বেআইনি ওই ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল বুদ্ধিনাথ।
যদিও বুদ্ধিনাথের পরিবারের দাবি, তাঁর খুনের পিছনে নার্সিং হোম ও হাসপাতাল পরিচালনকারীরা রয়েছে। সম্প্রতিই বুদ্ধিনাথ ওই এলাকার একাধিক বেআইনি নার্সিংহোম ও হাসপাতালের পর্দাফাঁস করেছিল। তারপর থেকেই তাঁকে খুনের হুমকি দিচ্ছিল ওই হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলির মালিকেরা।