নয়া দিল্লি: গরু পাচার মামলায় জামিন পেলেন মহম্মদ এনামুল হক। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। সিবিআই এই মামলার তদন্ত করছে। এনামুল সিবিআই হেফাজতেই ছিলেন। এর আগে একাধিকবার আসানসোল সিবিআই আদালতে তিনি জামিনের আবেদন করেন। কিন্তু বারবারই তা খারিজ হয়ে যায়। কলকাতা হাইকোর্টেও জামিন পাননি তিনি। এরপরই সুপ্রিম কোর্টে যান এনামুল হক। সূত্রের খবর, আদালতের পর্যবেক্ষণ এই যে, তদন্তের জন্য সিবিআইকে এই মুহূর্তে এনামুলকে হেফাজতে রাখা অত্যাবশ্যক নয়।
বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরীর বেঞ্চ এনামুল হকের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। ২০২০ সালের ১১ ডিসেম্বর আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এনামুল। ২০২১ সালের কলকাতা হাইকোর্ট এনামুলের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর থেকে সিবিআই হেফাজতে ছিলেন তিনি।
গত বিধানসভা ভোটের আগে কয়লাকাণ্ড ও গরু পাচার কাণ্ড নিয়ে জোর কদমে তদন্তে নামে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। গরু পাচারে নাম জড়ায় এনামুল হক নামে মুর্শিদাবাদের এক ব্যবসায়ীর। এই এনামুলকে এর আগেও সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর কমান্ডান্টকে ঘুষ দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার করেছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। গ্রেফতারের পরে জামিনও পেয়েছিলেন তিনি।
এদিকে গরু পাচারের তদন্তে নেমে বিএসএফ জওয়ান সতীশ কুমারকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সেখান থেকে এনামুল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কয়েক কোটি টাকার লেনদেনে তিনি যুক্ত বলেই দাবি সিবিআইয়ের। তারা যে চার্জশিট দিয়েছে সেখানেও নাম রয়েছে এনামুলের। যদিও এনামুলের দাবি, তাঁকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। গত নভেম্বর মাসে তাঁর জামিনের আবেদন পুনরায় খারিজ করে হাইকোর্ট।
সেদিন এজলাসে এনামুলের জামিনের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়। এনামুলের আইনজীবীর তরফে বলা হয়, গরুপাচারকাণ্ডে এনামুল ছাড়া আর যাঁরা অভিযুক্ত ছিলেন, তাঁরা সকলেই নিম্ন আদালতে জামিনপ্রাপ্ত। তাহলে এনামুল কেন জামিন পাবেন না? বিশেষ করে যখন এনামুল সিবিআইকে তদন্তের জন্য সবরকমভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে নিজে জানিয়েছেন। কিন্তু সিবিআইয়ের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, গোটা গরু পাচারকাণ্ড পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। এই চক্রের জাল ছড়িয়ে রয়েছে অনেক গভীরে। ফলে, মূল অভিযুক্ত এনামুলকে জামিন দিলে তদন্ত বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে এবং অভিযুক্ত সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন। তাতে এত বড় চক্রটির শিকড় পাকড়াও করতে তদন্তকারীদের সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
ইতিমধ্যেই এনামুলের কলকাতার বেশ কয়েকটি ঠিকানা এবং মুর্শিদাবাদের কয়েকটি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি ছিল, এনামুল গরু পাচারের পাশাপাশি চাল কল, আবাসন ও নির্মাণ শিল্প, পাথর খাদান, বালির কারবার-সহ একাধিক বেআইনি কারবারে যুক্ত। তাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ১০০ কোটির বেশি টাকা পাওয়া গিয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। এছাড়াও তাঁর নামে-বেনামে বহু সম্পত্তিরও খোঁজ মেলে।
আরও পড়ুন: রেড রোডের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি, সেজে উঠছে ৫২ ফুট লম্বা নেতাজির ট্যাবলো