নয়া দিল্লি: যৌন নির্যাতন নিয়ে বিতর্ক হয়েছে আগেও। ঠিক কতটা অশ্লীলতাকে ‘যৌন নির্যাতন’ হিসেবে গণ্য করা হবে, সেই সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদও রয়েছে। তবে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ আইন বা পকসো আইন নিয়ে পরপর দুটি ‘বিতর্কিত’ রায় দেওয়ায় এ বার কোপ পড়ল খোদ বিচারপতির উপর। ওই বিচারপতিকে বম্বে হাইকোর্টে স্থায়ী পদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এল সুপ্রিম কোর্ট।
বম্বে হাইকোর্টের বিচারপতি পুষ্প গনেড়িওয়ালার নাম সম্প্রতি পরপর দু’বার সংবাদ শিরোনামে উঠে আসতে দেখা গিয়েছে। এরপরই শীর্ষ আদালতের কোপে পড়তে হল তাঁকে। বম্বে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি পুষ্প গনেড়িওয়ালাকে স্থায়ী বিচারপতির পদ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে সুপারিশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ১৯ জানুয়ারি একটি মামলায় তাঁর মন্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক সিদ্ধান্ত নিল শীর্ষ আদালত।
আরও পড়ুন: দিল্লি যাচ্ছেন রাজীব-বৈশালী, বিজেপিতে যোগদানের জল্পনা
নাগপুর বেঞ্চের বিচারপতি গনেড়িওয়ালা বলেছিলেন, “ত্বক স্পর্শ না করে কোনও নাবালিকার বুকে হাত দেওয়া হলে তা নাকি পকসো আইনে যৌন নিগ্রহ হিসাবে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ ত্বকে-ত্বকে সংস্পর্শ না হলে তা পকসো আইনে বিচারাধীন নয়।” বম্বে হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। পর্যবেক্ষণের জেরে পকসো আইনের শাস্তি থেকে অব্যাহতি পায় ৩৯ বছর বয়সী অভিযুক্ত। তবে, কয়েকদিনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট নাগপুরের পর্যবেক্ষণে স্থগিতাদেশ জারি করে। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেছিলেন, “হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণ বিপজ্জনক নজির সৃষ্টি হতে পারে।”
সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের কলেজিয়াম হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ-সহ অন্যান্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, যার মাথায় রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে। বিতর্কিত রায়ের পরও ওই বিচারপতিকে বম্বে হাইকোর্টে স্থায়ী পদ দেওয়ার সুপারিশ করে সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম। এরপর বিরোধিতা শুরু হয়। বিচারপতি খানউইলকর ও বিচারপতি চন্দ্রচূড় কলেজিয়ামের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও ওই সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন: ভাগলপুর থেকে কলকাতা হয়ে অস্ত্র যাচ্ছিল বারুইপুরে, ভোটের আগে কোন নয়া ছক?
শুধুমাত্র ১৯ জানুয়ারিই নয়, ২৮ জানুয়ারি ফের একটি মামলার শুনানিতে বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায় বিচারপতি পুষ্প গনেদিওয়ালা। এক কিশোরীর যৌন নির্যাতনের মামলায় বিচারপতির মন্তব্য নিয়ে ঘিরে তৈরি হয় বিতর্ক। বিচারপতি পুষ্প গনেদিওয়ালা বলেছিলেন, “পকসো আইনে যৌন নিগ্রহের সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে যদি যৌন ইচ্ছা নিয়ে শিশুদের গোপনাঙ্গ স্পর্শ করা হয় তবেই তা যৌন নির্যাতনের আওতায় পড়বে। ” তাঁর মতে, সংজ্ঞা অনুযায়ী যৌন উদ্দেশ্যে শারীরিক স্পর্শ করলে তবেই তা যৌন নিগ্রহের আওতায় পড়বে। এক্ষেত্রে যেহেতু কেবল অভিযোগকারীর হাত ধরা হয়েছে বা প্যান্টের চেন খোলা হয়েছে, কোনও শারীরিক স্পর্শ হয়নি, তা পকসো আইনে যৌন নির্যাতনের অধীনে পড়ে না। তাঁর এই পর্যবেক্ষণের পর চাপ বাড়ে আরও। অবশেষে বিচারপতির বিরুদ্ধে কড়া সিদ্ধান্ত নিতে হল সুপ্রিম কোর্টকে।