নয়া দিল্লি: কেউ রয়েছেন অফিসের পোশাকে, কেউ বা ঘরের। ওই অবস্থাতেই মুখে লাগানো রয়েছে অক্সিজেনের পাইপ, হাতে স্যালাইনের নল। কোনও রকমে এক বিছানায় গাদাগাদি করে শুতে হচ্ছে অপরিচিত আরেক ব্যক্তির সঙ্গে। আসলে আর কোনও উপায় নেই। করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ভারতকে এবং চতুর্থ ঢেউ রাজধানী নয়া দিল্লিকে এতটাই নাকাল করে দিয়েছে যে, এক বিছানায় দু’জন রোগী শুয়ে থাকাটাই এখন সেখানকার সরকারি হাসপাতালগুলির সাধারণ দৃশ্য হয়ে গিয়েছে।
রাজধানীতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ হাজারের কোঠা পেরিয়ে গিয়েছে। যত পরীক্ষা হচ্ছে, তার মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি শনাক্ত হচ্ছেন ভাইরাসে। এই অবস্থায় রোগীদের হাসপাতালে এবং মৃতদের শ্মশানের, দুই ক্ষেত্রেই জায়গা দেওয়া কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
দিল্লির যে হাসপাতালগুলি কেবলমাত্র কোভিড চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম লোক নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতাল। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় কোভিড চিকিৎসার হাসপাতাল হিসেবে পরিচিত। এখানে বেডের সংখ্যা ১,৫০০। সেখানেই ধরা পড়েছে এক বিছানায় দু’জন করে রোগী শুয়ে থাকার এই করুণ দৃশ্য। যেখানে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে, পাল্লা দিয়ে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পরপর বেরোচ্ছে শববাহী গাড়ি।
পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়ে উঠেছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অ্যাম্বুলেন্সেরও জোগান নেই। কেউ কেউ তাই বাস এবং অটোতে করেই আসছেন হাসপাতালে ভর্তি হতে। বৃহস্পতিবার এই হাসপাতালে যে কনিষ্ঠতম প্রাণে করোনা বাসা বেঁধেছে সে হল একটি সদ্যোজাত শিশু।
আরও পড়ুন: বেলাগাম করোনা, রাজ্যে দৈনিক আক্রান্ত সাড়ে ৬ হাজারের বেশি, পরীক্ষা কমলেও সংক্রমণ বাড়ছে
হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর সুরেশ কুমারের কথায়, “যতজনকে চিকিৎসা দেওয়ার সামর্থ্য আমাদের রয়েছে তার তুলনায় অনেক বেশি রোগী ভর্তি হয়ে রয়েছেন হাসপাতালে। সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা রোগীদের জন্য ৫৪ টি বেডের ব্যবস্থা থাকলেও রোগী রয়েছেন ৩০০-র বেশি।”
কিন্তু সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে রোগীদের। অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গেই ভাগ করতে হচ্ছে হাসপাতালের বিছানা। যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের মৃতদেহ ওয়ার্ডেই ফেলে রাখা হচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা তুলে নিয়ে চলে যাওয়া হচ্ছে শ্মশানে বা কবরস্থানে। চিকিৎসকের দাবি, কেউ কোভিড বিধি পালনই করছেন না। ন্যূনতম মাস্কটুকু পরার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না আমজনতার মধ্যে। ফলে পরিস্থিতি এর থেকেও গুরুতর হওয়া কেবল সময়ের অপেক্ষা বলে তাঁরা মনে করছেন।
আরও পড়ুন: ‘আমি মারা যাচ্ছি’, অক্সিজেনের ছেঁড়া নল নিয়ে ঘরে ফোন, এনআরএস-এ তিলে তিলে মৃত্যু বৃদ্ধের