মহারাষ্ট্র, গুজরাটেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের হানা, করোনা রোগীরাই কেন শিকার হচ্ছেন প্রাণঘাতী সংক্রমণের?

ইতিমধ্যেই দিল্লিতে কমপক্ষে আটজন রোগী এই ছত্রাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কেবল দিল্লিই নয়, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেও দেখা দিচ্ছে এই মারণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

মহারাষ্ট্র, গুজরাটেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের হানা, করোনা রোগীরাই কেন শিকার হচ্ছেন প্রাণঘাতী সংক্রমণের?
করোনা রোগীর উপসর্গ পরীক্ষা করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ছবি:PTI
Follow Us:
| Updated on: May 09, 2021 | 10:55 AM

মুম্বই: গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই করোনার পাশাপাশি চিকিৎসকদের চিন্তার কারণ বাড়িয়ে তুলছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকোরমাইকোসিস। ইতিমধ্যেই দিল্লিতে কমপক্ষে আটজন রোগী এই ছত্রাক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। কেবল দিল্লিই নয়, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেও দেখা দিচ্ছে এই মারণ ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।

ডিরেক্টর অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান ডঃ তত্বরাও লাহানে জানান, কেবল মহারাষ্ট্রেই কমপক্ষে ২০০ জন রোগীর মিউকোরমাইকোসিসের চিকিৎসা চলছে।

মিউকোরমাইকোসিস কী?

এটি একধরনের অতি ভয়ঙ্কর ছত্রাক সংক্রমণ, যা মূলত কম রেগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের মধ্যে ধরা পড়ে। মূলত করোনা রোগীদের মধ্যেই এই সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। এর আগে নীতি আয়োগের সদস্য ভিকে পালও জানান, ভেজা জায়গা থেকেই নাম এসেছে মিউকর।

কোভিড রোগীরা কেন এই সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন?

করোনাকালেই যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের উৎপত্তি হয়েছে, তা নয়। আগেও এই সংক্রমণ ছিল,তবে তা অতি বিরল ও সম্পূর্ণভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন রোগীদের দেহে দেখা দিত। তবে করোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর এই ফাঙ্গাসের পরিবর্তন এসেছে এবং স্বয়ং কোভিড, তার সঙ্গে ডায়েবেটিস বা মধুমেহ ও স্টেরয়েডের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে এই সংক্রমণ করোনা রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে।

ডঃ লাহানে জানান, করোনা চিকিৎসায় স্টেয়রেডের ব্যবহারের ফলে বেশকিছু ক্ষেত্রে রোগীর রক্তে সুগার লেভেল বৃদ্ধি পায়, যারফলে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা ধামাচাপা পড়ে যায়। এই ক্ষেত্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস রোগীদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি সংক্রমণ মস্তিষ্ক অবধি পৌঁছে যায়, তবে তা প্রাণঘাতী পরিণত হতে পারে। বহু ক্ষেত্রেই রোগীর প্রাণ বাঁচাতে একটি চোখ অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হয়।

রোগের লক্ষণ-

এই সংক্রমণ সাধারণত নাক বা চোয়াল থেকেই শুরু হয়, যা পরবর্তী সময়ে মস্তিষ্কে পৌঁছয়।

  • চোখের নীচে ব্যাথা হলে
  • মুখের এক পাশ ফুলে গেলে
  • মাথা ব্যাথ্যা, জ্বর
  • নাক বন্ধ হয়ে থাকা
  • নাকে কালো দাগ
  • সামান্য দৃষ্টিশক্তি হারানো
  • এই সমস্ত কিছুই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের লক্ষণ। এটি একবার মস্তিষ্কে পৌঁছে গেলে কার্যত বাঁচানোর কোনও উপায় থাকে না।

দ্বিতীয় ঢেউতেই কী ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেখা দিয়েছে?

প্রথম ঢেউয়েও মিউকোরমাইকোসিস বা ব্ল্য়াক ফাঙ্গাসের কেস দাখিল হলেও, তা ব্যাপক মাত্রায় ছিল না। গতবছর মূলত রোগীর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কয়েক সপ্তাহ পর উপসর্গ দেখা দিচ্ছিল। বর্তমানে করোনার জন্য চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই এই সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে।

দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের হার বৃদ্ধির ফলে কোভিডযোদ্ঝধাদের দেহে এই ছত্রাক বাসা বাঁধার হারও বেশি। বিগত দুই-তিন সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিনই কমপক্ষে ২-৩জন রোগী আসছে মিউকোরমাইকোসিস সংক্রমণ নিয়ে।

আপাতত দিল্লি, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটেই এই সংক্রমণে আক্রান্তদের খোঁজ মিলেছে।

চিকিৎসা-

মিউকোরমাইকেসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ওষুধ অত্যন্ত সীমিত ও দামী হওয়ায় চিকিৎসা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত এক ধরনের ইঞ্জেকশন টানা ২১দিন ধরে দিতে হচ্ছে রোগীদের। এক একটি ইঞ্জেকশনের দাম প্রায় নয় হাজার টাকা। এছাড়াও ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য ওষুধও ব্যবহার করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন: এখনও ভয়াবহ রূপ নেয়নি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস, সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় জানালেন নীতি আয়োগের সদস্য