ভারতে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ কি ৮-১২ সপ্তাহ পর? হু-র সুপারিশে জোর চর্চা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ ৮-১২ সপ্তাহের ফারাকে দিলেই ভাল। এর পরই জল্পনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি ভারতেও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়া হবে?

ভারতে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজ কি ৮-১২ সপ্তাহ পর? হু-র সুপারিশে জোর চর্চা
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 12, 2021 | 12:00 AM

কমলেশ চৌধুরী: করোনা টিকার প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় অর্থাৎ বুস্টার ডোজ চার সপ্তাহের ব্যবধানে নাকি তারও পরে, ডিসেম্বরেই বিতর্ক উস্কে দিয়েছিল ব্রিটেন। এ বার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) (হু)-ও বলল, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ ৮-১২ সপ্তাহের ফারাকে দিলেই ভাল। তাতেই বেশি মজবুত হবে রক্ষণ। হু-র এই রিপোর্টের পরই আলোচনায় কোভিশিল্ড (Covishield)। কারণ, অক্সফোর্ডের তৈরি এই ভ্যাকসিনের বুস্টার ডোজ ৪ সপ্তাহ পরই দেওয়ার কথা ভারতে। হু-র ফর্মুলার পর এ দেশও ব্রিটেনের নীতি নেয় কিনা, নজর এখন সে দিকেই।

গত ১৬ জানুয়ারি করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয় দেশে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭৪.৩ লক্ষ নাগরিক টিকা পেয়েছেন। প্রথম দিকে যারা ভ্যাকসিন পেয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই বুস্টার ডোজ পাওয়ার কথা তাঁদের। কিন্তু, ভারত যদি হু-র পরামর্শ মানতে রাজি হয় তবে তাঁদের অপেক্ষা লম্বা হতে পারে। তত দিন পর্যন্ত করোনা থেকে সাবধান থাকা খুবই জরুরি। কারণ, ভাইরাসের বিরুদ্ধে পুরোপুরি সুরক্ষা তৈরি হয় দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের আরও ৪ সপ্তাহ পর।

অক্সফোর্ডের টিকা নিয়ে শুরু থেকে বহু বিতর্ক। ট্রায়ালের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য সঠিকভাবে প্রকাশ্যে না আনার জন্য বারবার সমালোচিত হয়েছে অক্সফোর্ড, সঙ্গী অ্যাস্ট্রাজেনেকা। কিছু দিন আগে জানা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার নতুন স্ট্রেনের বিরুদ্ধে মোটেই কার্যকরী হচ্ছে না অক্সফোর্ডের টিকা। কার্যকারিতার হার মাত্র ১০%!

এই প্রেক্ষাপটে বুধবার খানিকটা অক্সিজেন মিলেছে। মডার্না, ফাইজ়ারের পর তৃতীয় টিকা হিসেবে যাবতীয় ট্রায়াল-তথ্য খতিয়ে দেখে ভ্যাকসিনে সিলমোহর দিয়েছে হু। সঙ্গে আরও একটি সুখবর, ১৮ বছরের উপরে সকলেই টিকা নিতে পারবেন, বিশেষ করে যাদের বয়স ৬৫-র বেশি।

এখানেই হু-র সংযোজন, টিকার দু’টি ডোজের মধ্যে সময়ের ফারাক ৪ সপ্তাহের বদলে ৮-১২ সপ্তাহ করলেই সবচেয়ে ভাল। তাতেই মিলছে বেশি সুরক্ষা। দিনকয়েক আগে ট্রায়ালের নতুন রিপোর্টে অক্সফোর্ডও জানিয়েছিল, দ্বিতীয় ডোজ ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দিলেই কাজ হচ্ছে বেশি। এফিকেসি রেট ৮২.৪%। কিন্তু ৪ সপ্তাহে এফিকেসি রেট ৬৩%। অক্সফোর্ড জানিয়েছে, ব্রিটেনের মতো বেশ কয়েকটি দেশের নিয়ামক সংস্থা ইতিমধ্যেই বুস্টার ডোজের রুটিন বদলে দিয়েছে।

দ্বিতীয় ডোজ পিছিয়ে দিলে অবশ্য যে কোনও দেশেরই সুবিধা। তাতে শুরুতে বেশি লোককে টিকা দেওয়া সম্ভব। সুবিধা পরিকাঠামো এবং পরিকল্পনা ক্ষেত্রেও। একদলকে প্রথম ডোজ দেওয়ার পরই বুস্টারের প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। যেমন, হু-র নীতি মেনে নিলে মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত নতুনদেরই ভ্যাকসিন দিয়ে ফেলতে পারবে ভারত। অনেকটাই এগিয়ে যাবে টিকাকরণ প্রক্রিয়া।

আরও পড়ুন: করোনা টিকাকরণ শেষ হলেই সিএএ, মতুয়াদের শাহি আশ্বাস

যদিও ভারত কী করবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। কোভিশিল্ডের তথ্যে সেরাম ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, ১২ সপ্তাহের ফারাকে বুস্টার ডোজ দেওয়া যাবে। তবে নীতি বদলাবে কিনা, সবটাই নির্ভর করবে ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার উপর।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সের ডিরেক্টর সৌমিত্র দাসের মন্তব্য, “বুস্টার ডোজ কোন সময় দিলে ভাল কাজ করবে, তা নির্ভর করে জিনগত বৈশিষ্ট্যের উপর। ব্রিটেনের ট্রায়ালে ১২ সপ্তাহে ভাল ফল দিলে যে ভারতেও তা-ই হবে, এমনটা না-ও হতে পারে। তাই হু-র রিপোর্ট পেয়ে আমাদের দেশ এখনই বুস্টার ডোজের রুটিন বদলে দেবে, এমন সম্ভাবনা কম।” তাঁর মতে, এই ফর্মুলায় ছোটখাটো ট্রায়ালের পরই নীতি বদলানো সম্ভব।

ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠীও বলছেন, “হু-ই যা বলুক, আমাদের দেশে গাইডলাইন বদলাবে কিনা, সেটা কেন্দ্রীয় সরকার, নিয়ামক সংস্থা ঠিক করবে। আপাতত বর্তমান গাইডলাইন মেনেই চলতে হবে।”

আরও পড়ুন: শুক্রবার অনুপস্থিত হলেই কাটা যাবে বেতন, বনধ ঘোষণার পরই বিজ্ঞপ্তি নবান্নের