AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

করোনা টিকাকরণ শেষ হলেই সিএএ, মতুয়াদের শাহি আশ্বাস

মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করতে মহাসংঘে দাঁড়িয়ে করলেন কৌশলী প্রচার। জোর গলায় বলে গেলেন, "কথা দিলাম, ভারতের নাগরিক হবে আপনারা..."

করোনা টিকাকরণ শেষ হলেই সিএএ, মতুয়াদের শাহি আশ্বাস
ছবি- টুইটার
| Updated on: Feb 12, 2021 | 10:39 AM
Share

উত্তর ২৪ পরগনা: অনেকটা পথ পেরিয়ে যেন এদিনের শাহি সভা! ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন মতুয়া ভোট তাঁদের পথকে অনেকটাই মসৃণ করেছিল। মতুয়া ভোটের সিংহ ভাগই ছিল বিজেপির ঝুলিতে। নেপথ্যে কাজ করেছিল সিএএ হাতিয়ার। কিন্তু যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাংসদ হয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর, তা এখনও পূরণ করতে পারেননি। ফলে চাপ বাড়ছিল। মতুয়ারা তাকিয়ে ছিলেন অমিত শাহর (Amit Shah) দিকেই। এরই মধ্যে ৩০ জানুয়ারি তাঁর ঠাকুরনগরের সভা, ফের বাতিল, শান্তনু ঠাকুরের মানভঞ্জন ও ড্যামেজ কন্ট্রোলে মুকুল-কৈলাশের রুদ্ধদ্বার বৈঠক- ঘটনা পরম্পরায় মতুয়া মহাসংঘে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছিল। চাপ কমাতেই প্রতিশ্রুতি মতো ঠাকুরবাড়িতে এলেন শাহ, মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক সুদৃঢ় করতে মহাসংঘে দাঁড়িয়ে করলেন কৌশলী প্রচার। জোর গলায় বলে গেলেন, “কথা দিলাম, ভারতের নাগরিক হবে আপনারা…”

পরিসংখ্যান বলছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজ্যের ১০২টি বিধানসভা আসনে মতুয়াদের প্রভাব রয়েছে। যার মধ্যে সরাসরি ৩০টি আসনের নিয়ন্ত্রক তাঁরাই। এমনই সব তথ্য পরিসংখ্যানের কথা মাথায় রেখেই জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহেই বনগাঁর ঠাকুরবাড়িতে আসার কথা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। দিল্লির বিস্ফোরণকাণ্ডের জেরে তা বাতিল হয়ে যায়। দূর দূরান্ত থেকে আসা লক্ষাধিকের বেশি মতুয়ারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। কার্যত হতাশ হতে দেখা গিয়েছিল শান্তনু ঠাকুরকেও। কিন্তু সেদিনই তড়িঘড়ি ঠাকুরবাড়িতে যান কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও মুকুল রায়। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর তাঁরা আশ্বস্ত করেছিলেন, মঞ্চ বাঁধাই থাকবে। ৪-৬ ঘণ্টার নোটিশে এই মঞ্চেই সভা করবেন শাহ। সেটাই হল আজ।

অমিত শাহর বক্তব্যের সিংহ ভাগই জুড়ে ছিল মতুয়া সম্প্রদায়ের কথাই। শুরুতেই ছিল সিএএ প্রসঙ্গ। প্রাসঙ্গিভাবে নিলেন হরিচাঁদ, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামও। অমিত বলেন, “সংবাদ মাধ্যম এবং তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন সিএএ-র বিষয়ে জানতে চান। আমি বুক ঠুকে সে বিষয়ে বলব। কিন্তু তার আগে হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরকে প্রণাম করব। এই দুই মহান পুরুষ মতুয়াদের আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনের রূপে নিয়ে গিয়েছেন।”

তাঁর কথায়, “২০১৮ সালে কথা দিয়েছিলাম, নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ২০১৯ সালে আইন পাশ করেছি। তারপর করোনা চলে এল। তাই দেরি হচ্ছে। কিন্তু আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সেটা করবই। তা নিয়ে ভাববার কিছু নেই। টিকাকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলেও সিএএ কার্যকর হবে।”

এই প্রতিশ্রুতি অবশ্য আগেও দিয়েছেন শাহ। তবে এদিন তাঁর গলায় ধরা পড়েছে আরও বেশি চ্যালেঞ্জের সুর। রাজনীতির কুশীলবদের মতে, আসলে মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক কোনওভাবেই হারাতে নারাজ বিজেপি। গাইঘাটা ঠাকুরবাড়ির চৌহদ্দিতে শাসকশিবিরের দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে শাহ এদিন স্পষ্ট বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, নাগরিকত্ব পাওয়ার ব্যাপারে মতুয়ারা ঠিক কতটা কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হবেন! আর সেক্ষেত্রে যাতে মতুয়া সম্প্রদায়ের মনে কোনও প্রশ্ন না থাকে, তাই স্পষ্ট বললেন, মতুয়ারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেনই। আশ্বস্ত করলেন, “শরণার্থীদের আপন করে নেবে বিজেপি। কোনও মুসলিমের নাগরিকত্ব যাবে না। এই আইনে কারোর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা বলা নেই। বিজেপি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করেছে।”

ভোট রাজনীতির সমীকরণ বোঝাতে শাহ আরও প্রতিশ্রুতি দিলেন। তিনি বললেন, “ক্ষমতায় এলে ঠাকুরনগর রেলস্টেশনের নাম হবে শ্রীধাম স্টেশন। ভোট শেষ হতেই আপনার বিদায় নিশ্চিত। আমি আশ্বস্ত করছি, বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই আয়ূষ্মান ভারত চালু হবে। পিএম কিসান সম্মান নিধির ১২ হাজার বকেয়া এবং চলতি বছরের ৬ হাজার মিলিয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে দেব।

আরও পড়ুন: মানুষ তো ছাড়ুন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে পাখিও ঢুকতে পারবে না বাংলায়: শাহ

শাহ বলে গেলেন, “এপ্রিলের শেষে আর মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না দিদি। আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, দিদিকে না হারানো পর্যন্ত আমি বাংলায় আসবই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতুয়া যেটা শুনতে চেয়েছিলেন, তা খানিকটা ছুঁয়ে গিয়েছেন শাহ। সভা শেষে চওড়া হাসি দেখা গিয়েছে শান্তনু ঠাকুরের মুখেও।

শাহি সভা শেষে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসকে ভাঁওতা বলে দাবি করা হয়েছে। মমতাবালা ঠাকুর তথা বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ জানিয়েছেন, “অমিত শাহ রাজনীতি করেছেন। রাজনৈতিক বক্তব্য রেখেছেন। আসলে নাগরিকত্বের নামে তাঁরা মতুয়াদের ভাওতা দিচ্ছে।” তাই মতুয়ারা তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে বলে তাঁর দাবি। অন্যদিকে অমিতের সভার পর বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের চোখে মুখে প্রশস্তি স্পষ্ট। তিনি বলেছেন, “সিএ এ চালু হবেই। মতুয়াদের নাগরিকত্ব বিজেপিই দিতে পারবে। একটু সময় দিতে হবে।” মতুয়ারা যে সময় দেবে তা আজকের সভা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে দাবি এই বিজেপি নেতার।