ভারতে এবার জরায়ুর ক্যান্সারের ভ্যাকসিন! সরকারি অনুমোদন পেল সিরাম ইনস্টিটিউট

বুধবার (১৫ জুন) পুনের সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার তৈরি কোয়াড্রিভালেন্ট হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ভ্যাকসিন বা কিউএইচপিভি টিকাকে অনুমোদন দিল ডিসিজিআই-এর সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি। এই টিকা জরায়ুর ক্যান্সার থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ভারতে এবার জরায়ুর ক্যান্সারের ভ্যাকসিন! সরকারি অনুমোদন পেল সিরাম ইনস্টিটিউট
আরও এক টিকা সেরামের ঘর থেকে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 16, 2022 | 7:45 AM

নয়া দিল্লি: বুধবার (১৫ জুন) সার্ভিকাল ক্যান্সার বা জরায়ুর ক্যান্সারের রোগীদের জন্য তৈরি এক ভারতীয় টিকাকে অনুমোদন দিল ‘ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া’ বা ‘ডিসিজিআই’-এর ‘সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি’। পুনের ‘সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার’ তৈরি টিকাটির নাম ‘কোয়াড্রিভালেন্ট হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ভ্যাকসিন’ বা সংক্ষেপে ‘কিউএইচপিভি’। এটিই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ভারতে তৈরি সার্ভিকাল ক্যান্সারের প্রথম টিকা। ৯ থেকে ২৬ বছর বয়সী জরায়ুর ক্যান্সারের রোগীদের জন্য এই টিকা দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, মহিলা-পুরুষ-তৃতীয় লিঙ্গ নির্বিশেষে যে কোনো লিঙ্গের মানুষ এই টিকা নিতে পারবেন। প্রসঙ্গত, বেশিরভাগ সার্ভিকাল ক্যান্সারই হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস থেকেই সৃষ্টি হয়। যৌন সংসর্গের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রামিত হয়।

জরায়ুর সবচেয়ে নিচের অংশকে বলা হয় ‘সের্ভিক্স’। সেখানে কোনও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হলে তাকে বলা হয় সার্ভিকাল ক্যান্সার। তবে এইচপিভি শুধুমাত্র জরায়ুর ক্যান্সারের কারণ নয়। এই ভাইরাস ভালভা, যোনি, লিঙ্গ, মলদ্বার, মুখের পিছনের অংশ এবং গলার উপরের অংশেও ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ‘হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস’ থেকে সৃষ্ট সমস্ত রকম ক্যান্সারের প্রভাব কমাতে পারে। ৯৫ শতাংশের বেশি সের্ভিকাল ক্যান্সারের রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এর কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের মহিলাদের মধ্যেই এই ক্যান্সার বেশি দেখা যায়।

সিরাম ইনস্টিটিউটের দাবি, তাদের তৈরি এইচপিভি ভ্যাকসিন হল ‘টেট্রাভ্যালেন্ট’ বা চতুর্মুখী। এর মধ্যে রয়েছে এল-১ ভাইরাস-সদৃশ কণার সেরোটাইপ ৬, ১১, ১৬, এবং ১৮। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিন চারটি ভিন্ন ধরণের অ্যান্টিজেন রয়েছে। যা, চারটি ভিন্ন ভাইরাস বা অন্যান্য রোগজীবানুর বিরুদ্ধে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে। এল-১ প্রোটিন দিয়ে ভাইরাসের মতো একটি অনু তৈরি করা হয়। এই অণু ভাইরাসটির অনুকরণ করলেও এর কোনও সংক্রামক ক্ষমতা থাকে না। মার্কিন ফুড অ্য়ান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা এফডিএ থেকে গর্ডাসিল ৯ নামে একটি এইচপিভি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেটি ৯টি ভিন্ন ভাইরাস স্ট্রেনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম। এই ভাইরাসটিও পুরুষ ও মহিলা উভয়েই নিতে পারেন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনও মহিলা এই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার আগেই যদি তিনি ভ্যাকসিন নেন, তবে তাঁর জরায়ুর ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়। পুরুষরা এই টিকা নিলে সম্ভাব্য সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে তাদের সঙ্গিনীদের এই ভাইরাস সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-এর মতে, একটি একক ডোজের হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ভ্যাকসিনই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে মজবুত সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। ‘হু স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অব এক্সপার্টস অন ইমিউনাইজেশনের’ প্রধান ডাক্তার আলেজান্দ্রো ক্রাভিওটো বলেছেন, ‘এইচপিভি ভ্যাকসিন এইচপিভি সেরোটাইপ ১৬ এবং ১৮-কে প্রতিরোধ করার জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই দুই ভাইরাল স্ট্রেন ৭০ শতাংশ জরায়ুর ক্যান্সারের কারণ’।