
নয়া দিল্লি: কথায় আছে, রাখে হরি, মারে কে! দিল্লির লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণ (Delhi Blast) কেড়েছে বহু প্রাণ। আহতও অনেকে। তবে কপালজোরে রক্ষা পেয়েছেন লালকেল্লা চৌকির দুই পুলিশ কনস্টেবল। এখনও চোখ বন্ধ করলেই কানে বাজছে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ। চোখের সামনে দেখেছিলেন পরপর গাড়িতে জ্বলছে আগুন। ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে রয়েছে মানুষের দেহ। বিস্ফোরণের এত কাছে থেকেও এই দুই কনস্টেবল কীভাবে রক্ষা পেলেন?
লালকেল্লা পুলিশ চৌকির হেড কনস্টেবল থান সিং। ওই দিন অর্থাৎ সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যাবেলায় তাঁর স্ত্রীর ফোন এসেছিল। বলেছিলেন, রাস্তার ওপারে থাকা গৌরীশঙ্কর মন্দিরের একবার ভিডিয়ো কলে দর্শন করানোর জন্য। স্ত্রীর আবদারে সেইমতোই লালকেল্লা পুলিশ চৌকি থেকে বেরিয়ে এক মিনিটের জন্য রাস্তার ওপারে যান হেড কনস্টেবল থান সিং। আর ঠিক তখনই বিস্ফোরণ হয়।
দ্বিতীয়জন হলেন হেড কনস্টেবল অজয় কুমার। পুলিশ চৌকি থেকে মাত্র ৩০ ফুট দূরে হঠাৎ একটা চিৎকার শুনে ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। তাতেই রক্ষা পান, কারণ যেখানে বিস্ফোরণ হয়, তার থেকে মাত্র তিন হাত দূরে অবস্থিত এই চৌকি। অর্থাৎ সাক্ষাৎ মৃত্যু অপেক্ষা করছিল সেইদিন।
এখনও যেন গোটা ঘটনাটা বিশ্বাস হচ্ছে না। এই দুই হেড কনস্টেবল, অজয় কুমার ও থান সিং জানিয়েছেন, সোমবার দীর্ঘক্ষণ চাঁদনী চক মার্কেটের উল্টোদিকে লালকেল্লা গেটের কাছে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। যে মুহূর্তে সরে যান, তখনই ঘটে যায় দিল্লির বুকে লালকেল্লা গেটের কাছে বিস্ফোরণ।
নিজেরা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু সেদিকে তাঁদের ভাবার সময় নেই। দুই হেড কনস্টেবল ছুটে এসে দেখেন, রাস্তার উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় ছড়িয়ে-ছিটে পড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন। রক্তাক্ত অবস্থায় কোলে তুলে অটোয় বসিয়ে ওই দুইজন হেড কনস্টেবল তখন একের পর এক আহতদের লোকনায়ক জয় প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালে পাঠাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইতিমধ্যেই দিল্লি পুলিশ এই দুই কনস্টেবলকে কুর্নিশ জানিয়েছে তাদের সাহস ও কর্তব্যপরায়ণতার জন্য।
তবে এতকিছুর পরও, সেই দিনের ছবি তাঁরা এখনও ভুলতে পারছেন না। চোখ বন্ধ করলেই কানে ভেসে আসছে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ, মানুষের আর্তনাদ। তবে তাঁরাই সেই দুই জন, যাঁদের জন্য বেঁচে গিয়েছে একাধিক প্রাণ, কারণ সেই সময় না ছিল অন্য কোনও পুলিশ, না এসেছিল অ্যাম্বুল্যান্স। তাঁরা জানান, অ্যাম্বুল্যান্স এবং প্রশাসনের কথা যদি তখন ভাবতেন, তাহলে এতগুলো মানুষকে বাঁচানো সম্ভব হত না।
এই বিস্ফোরণের জেরে তাদের পুলিশ চৌকির অবস্থা ভয়াবহ। চৌকির বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখে বোঝা গেল বিস্ফোরণের ভয়াবহতা কতটা ছিল। একাধিক অংশ ভেঙে পড়েছে। একাধিক জায়গায় ফাটল ধরেছে। এই জায়গাগুলির বর্তমানে মেরামতের কাজ চলছে।