জ্যোতির্ময় রায়: ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণের কাছে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেকটাই পঙ্গু এবং অসহায় হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার জেরে মানব জীবন আজ প্রভূত সঙ্কটের মুখোমুখি, বিশেষ করে সেই সঙ্গীন সময় যখন শতাব্দীর সব থেকে বড় সঙ্কট করোনা মহামারির জন্য বিশ্বের কোনও দেশ, সরকার, উদ্যোগপতি বা চিকিৎসা পদ্ধতি, কেউই আগে থেকে প্রস্তুত ছিল না।
করোনাকালে দেশের চিকিৎসা পরিকাঠামো যখন অস্তিত্বের লড়াই লড়ছে, সেই সময় কৃষ্ণ ছত্রাক বা মিইকরমাইকোসিসের আক্রমণ নিয়ে বাড়তি চাপের মুখে পরে সরকার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা। এই অবস্থায় রোগীদের শুশ্রুষার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সরঞ্জাম চাহিদা অনুযায়ী জোগান দেওয়ার জন্য একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের জন্য।
মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্ট সাধারণ মানুষের প্রাণ রক্ষার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় সরকারকে মিউকরমাইকোসিসের চিকিৎসার জন্য অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি ওষুধটি বিতরণের বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করার শুনানি করে। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্যকর অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি ওষুধের আকালের বিষয়টি নিয়ে আদালত কেন্দ্রীয় সরকারকে বলে, এই রোগে আক্রান্ত প্রবীণদের চেয়ে যুবকদের বাঁচাতে আমাদের আরও বেশি জোর দিতে হবে।
বিচারপতি বিপিন সংঘী ও বিচারপতি জস্মিত সিংয়ের একটি বেঞ্চ বলেছে, একই পরিবারের দু’জন অসুস্থ হলে যদি একজনের বয়স ৮০ এবং অন্যজন ৩৫ হয়, এবং যদি ওষুধের মাত্র একটি ডোজ় থাকে, তবে আমারা কাকে বাঁচানোর চেষ্টা করব এটা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আদালতের পর্যবেক্ষণ, আমরা যদি এই পরিস্থিতিতে কাউকে বেছে নিতে চাই তবে আমাদের যুবকদেরই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর সিদ্ধান্ত। তবে এ দেশের ভবিষ্যৎ যুবসমাজের উপর নির্ভর করে। এ জন্য প্রথমে তাঁদের প্রাণ রক্ষা করা আবশ্যক।
আরও পড়ুন: প্রত্যেক দিন দেওয়া হবে এক কোটি ভ্যাকসিন, আশার কথা শোনালেন আইসিএমআর প্রধান
ইতিমধ্যেই আইসিএমআর ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসায় লাইপোসোমাল অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি, প্লেইন অ্যামফোটেরিসিন-বি এবং পোসাকোনাজল ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছে। আদালত বলেছে যে, যাদের ৮০ বছর বয়স তাঁরা ইতিমধ্যেই জীবন উপভোগ করেছেন। তাঁরা এই দেশকে আর এগিয়ে নিয়ে যাবেন না। তাই কোনও একজনকে বাঁচানোর প্রশ্ন এলে আমাদের যুবকদের বেছে নিতে হবে। আমরা এটা বলছি না যে কারও জীবন বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কারও কম। প্রতিটি একক জীবন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে পরিস্থিতি বুঝে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, কার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি তা আমাদের দেখতে হবে। সেই অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে।
তবে ওষুধের ঘাটতির মধ্যে কাকে বাঁচানো উচিত বা কাকে বঞ্চিত রাখা হবে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব কঠিন। সরকার তার সর্বশক্তি দিয়ে প্রয়োজনীয় ঔষধের উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। এখন সময়ের অপেক্ষা ছাড়া কিছুই করার নেই।
আরও পড়ুন: ‘আক্রান্ত হওয়া ৬ সপ্তাহ পরও জ্বর আসছে শিশুদের’, বিশেষ পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য মন্ত্রকের