নয়া দিল্লি: ২০২১ সালের শেষভাগ থেকে করোনা সংক্রমণের (COVID-19) যে উর্ধ্বমুখী গতি দেখছিল গোটা দেশ, তা নতুন বছরে প্রবেশ করতেই আরও গতি বাড়িয়েছে। রবিবারই দেশে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭১ হাজারের গণ্ডি পার করেছে। এদিকে, বড় বড় মেট্রো শহর, অর্থাৎ দিল্লি(Delhi), মুম্বই (Mumbai) ও কলকাতায় (Kolkata) হঠাৎই নিম্নমুখী সংক্রমণ। করোনার এই অদ্ভুত ওঠানামা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
নতুন বছরের শুরু থেকেই দিল্লি, মুম্বই কিংবা কলকাতার মতো বড় শহরগুলিতে ক্রমশ বাড়ছিল করোনা সংক্রমণ। দিল্লি-মুম্বইতে লকডাউন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে পৌঁছতেই হঠাৎ করে এই শহরগুলিতেই কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ। রবিবারই দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সত্যেন্দর জৈন জানান, হঠাৎ করে আক্রান্তের সংখ্যায় এই পতন সংক্রমণের একটি সমতল পর্যায়েরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। যদিও বর্তমানে করোনা পরীক্ষার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার কারণে সংক্রমণের হারেও পতন হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে. বর্তমানে সংক্রমণের যে ঢেউ চলছে, তাতে মেট্রো শহরগুলি হঠাৎ করেই সংক্রমণ বৃদ্ধি ও হ্রাস দেখতে পাবে। কেমব্রিজ ট্রাকারের শেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে বাকি রাজ্যগুলিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
কেমব্রিজ ট্রাকারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকেই বিহার, চণ্ডীগঢ়, কর্নাটক, পঞ্জাব, রাজস্থান ও পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণ এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। দৈনিক সর্বোচ্চ আক্রান্তের খোঁজ মিলতে পারে এই রাজ্যগুলি থেকে। অন্যদিকে, জানুয়ারি মাসের চতুর্থ সপ্তাহ থেকে অরুণাচল প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, ওড়িশা, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকবে। এরমধ্যে উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে আবার বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে, সেই কারণে সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনাও বেশি।
বিজ্ঞানী-গবেষকদের পূর্বাভাস ছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যের জেলা প্রশাসনগুলিও আলাদাভাবে সংক্রমণ মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যেমন, ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে ইন্দোরে জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের তরফে বিধিনিষেধ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসা সামগ্রী ও হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পুণে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, তারা সংক্রমণের গতির নিরিখে মুম্বইয়ের থেকে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ পিছিয়ে রয়েছে। যেহেতু বিগত দুই সপ্তাহ ধরে মুম্বইয়ে সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী ছিল, সেই হিসাবে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে পুণেতে করোনা সংক্রমণ শিখরে পৌঁছবে।
সংক্রমণ কোন গতিতে এগোচ্ছে বা তার বিস্তার কতটা, তা বোঝা যায় আর নট ভ্য়ালুর (R naught value) মাধ্যমেই। আর ভ্যালু (R Value) ০.৯৫ হওয়ার অর্থ হল, প্রতি ১০০ জন করোনা আক্রান্ত গড়ে আরও ৯৫ জনকে সংক্রমিত করেন। যদি আর ভ্য়ালু ১ শতাংশের নীচে থাকে, তবে বোঝা যায় নতুন করে আক্রান্তদের সংখ্যা বর্তমানে সক্রিয় রোগীর তুলনায় কম। এর বিচারেই বলা হয় যে দেশে সংক্রমণ কমছে।
জানুয়ারি মাসের শুরুতেই জানানো হয়েছিল, দেশের আর ভ্যালু ৪-এ পৌঁছেছে। তবে ৭ থেকে ১৩ জানুয়ারির মধ্য়েই ফের সেই আর ভ্য়ালুর পতন হয়।