নয়াদিল্লি : তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের একবার ডেকে পাঠাল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। কয়লাকাণ্ডের তদন্তে এই নিয়ে তৃতীয়বার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমন পাঠাল ইডি।
দ্বিতীয় সমন অনুযায়ী, কয়লাকাণ্ডের তদন্তে শনিবারই ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তৃণমূল সাংসদের। কিন্তু তিনি আগেই চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে এদিন উপস্থিত থাকতে পারবেন না। ইডি সূত্রে খবর, পুনরায় ২১ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এর আগে প্রথমবার যখন অভিষেককে ডেকে পাঠানো হয়েছিল, তখন দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল ডায়মন্ডহারবারের সাংসদকে। টানা ১১ ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন ইডির আধিকারিকরা। তারপর ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতে ফের ডেকে পাঠানো হয় অভিষেককে। এরপর ফের তৃতীয়বার তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে ডেকে পাঠানো হল।
১১ ঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পরেও কেন এত ঘন ঘন ইডির দফতরে ডাক পড়ছে তৃণমূল সাংসদের? ইডি সূত্রে খবর, প্রথম দিনে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার সঙ্গে অনুপ মাঝি ওরফে লালা এবং বিনয় মিশ্র কীভাবে যুক্ত, সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আরও বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই আবারও তলব করা হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কয়লাকাণ্ডের তদন্তে অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল ইডির দফতরে। এর পাশাপাশি, লন্ডন ও থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়েও আরও গভীর তদন্তে প্রবেশ করতে চাইছেন ইডি আধিকারিকরা।
উল্লেখ্য, ইডির দফতরে এর আগে হাজিরা দিয়ে বেরিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কার্যত গর্জে উঠেছিলেন অভিষেক। ইডি যে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই বিরোধী কণ্ঠকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করছে, তাও নাম না করে বুঝিয়ে দেন অভিষেক। কিছুটা অভিযোগের সুরেই তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, “যাঁদের ক্যামেরার সামনে হাত বাড়িয়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তদন্তকারী সংস্থা। তাঁরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত। তাই তাঁদের সব দোষ মাফ।” ইডির সঙ্গে বিজেপির এই আঁতাতে যে তৃণমূল একেবারেই ভীত নয়, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন অভিষেক। তিনি বলেছিলেন, “আমরা আরও লড়াই করব। প্রয়োজন হলে যেখানে যেখানে বিজেপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, সেই সব রাজ্যে যাব। লিখে রাখুন, আগামী নির্বাচনে বিজেপিকে হারাবে তৃণমূল। যা করার করে নিন।”
কয়লা-কাণ্ডে ইডি ফের সক্রিয় হওয়ার পর ১ সেপ্টেম্বর অভিষেকের স্ত্রী রুজিরা এবং ৬ সেপ্টেম্বর স্বয়ং অভিষেককে দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে একাধিকবার সরব হতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাদের। মুখ খুলেছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
ইডি-র এই ঘন ঘন তলব প্রসঙ্গে কেন্দ্রকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় বলেন, রাজনৈতিকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পেরে প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। একই সঙ্গে সিবিআই, ইডি-র বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের গলাতেও একই কথা শোনা গিয়েছে। অভিযোগ, অভিষেক ও তাঁর স্ত্রীকে তো বটেই, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কলেজের বন্ধুদের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে সিবিআই এবং ইডি। তিনিও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা তত্ত্ব সামনে এনেছেন।
একই সঙ্গে আইনজীবী-সাংসদ সুখেন্দু শেখরের অভিযোগ, একাধিক ফৌজদারি মামলা থাকা সত্ত্বেও অসমের হেমন্ত বিশ্বশর্মা বা বাংলার শুভেন্দু অধিকারীর মতো বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
আরও পড়ুন : ত্রিপুরায় অভিষেক পা দিতেই উঠল ‘গো ব্যাক’ স্লোগান, ‘বহিরাগত’ তকমা জয়প্রকাশের