
নয়া দিল্লি: ভারতের সঙ্গে যে কোনও যুদ্ধে হেরে যাবে পাকিস্তান। সাফ উত্তর মার্কিন প্রাক্তন গোয়েন্দা কর্তার। আগেও দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি, আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক, ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে নানা বিস্ফোরক মন্তব্য করেন প্রাক্তন সিআইএ কর্তা জন কিরিয়াকু। তিনি জানান যে ২০০১ সালে ভারতের সংসদে হামলার পরই সিআইএ ভেবেছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বাধবে।
কিরিয়াকু যখন সিআইএ-তে ছিলেন, সেই সময় পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন ছিল, তা নিয়ে মুখ খোলেন। এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে ইসলামাবাদ ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনও লাভ পাবে না। প্রাক্তন সিআইএ কর্তা বলেন, “ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সত্যিকারের যুদ্ধ হলে, কোনও ভাল কিছু হবে না। পাকিস্তান হেরে যাবে। আমি পরমাণু অস্ত্রের কথা বলছি না। আমি প্রথাগত যুদ্ধের কথা বলছি। ভারতকে ক্রমাগত খুঁচিয়ে কোনও লাভ হবে না।”
লাদেনের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পারভেজ মুশারফের কথাও বলেন। পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন পারভেজ মুশারফ। প্রাক্তন সিআইএ প্রধান তাঁর সম্পর্কে বলেন, “আমাদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সম্পর্ক খুব খুব ভাল ছিল। তখন জেনারেল পারভেজ মুশারফ ছিলেন। সত্যি কথা বলতে আমেরিকা স্বৈরাচারীদের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভালবাসে, কারণ সেক্ষেত্রে জনগণের মতামত নিয়ে ভাবতে হয় না, মিডিয়াকে নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হয় না। আমরা মুশারফকে কিনে নিয়েছিলাম। মিলিটারি ও উন্নয়নের জন্য আর্থিক সাহায্যের নামে লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়েছিলাম। আমরা মুশারফের সঙ্গে নিয়মিত দেখা করতাম। কখনও কখনও সপ্তাহে একাধিকবার। আমরা যা চাইতাম, তাই করতাম। কিন্তু মুশারফের কিছু নিজের লোক ছিল, যাদের সঙ্গে তাঁকে সমঝোতা করতে হত। ওঁকে মিলিটারিকে খুশি রাখতে হত। মিলিটারি আল কায়েদাকে নিয়ে কোনও চিন্তা করত না। ওরা ভারতকে নিয়ে চিন্তা করত। মিলিটারি ও কিছু চরমপন্থীদের খুশি রাখতে দ্বৈত জীবন যাপন করত যেখানে একদিকে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ চালাত, অন্যদিকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমেরিকাকে সহযোগিতা করত।”
লস্করের সঙ্গে আল কায়েদার যোগ নিয়েও মুখ খোলোন কিরিয়াকু। তিনি বলেন, “কয়েক মাস পরই, ২০০২ সালের মার্চ মাসে আমরা লাহোরে লস্কর-ই-তৈবার সেফ হাউসে অভিযান চালাই। ওই বাড়ি থেকে আমরা লস্করের তিন জঙ্গিকে ধরি, যাদের কাছে আল কায়েদার ট্রেনিং ম্যানুয়ালের কপি পাওয়া গিয়েছিল। সেই প্রথম আমরা লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে আল কায়েদার যোগ প্রতিষ্ঠা করি। সেই প্রথম সিআইএ-র ডেপুটি ডিরেক্টর বলেছিলেন যে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে আল কায়েদার যোগ রয়েছে, তা বলা যাবে।”
কেন এই বিষয়টি তখন সামনে আনা হয়নি, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে এই সিদ্ধান্ত হোয়াইট হাউসের ছিল। কিরিয়াকু বলেন, “এই সিদ্ধান্ত ভারত, পাকিস্তানের সম্পর্কের থেকেও বড় ছিল। অন্তত তখনের জন্য। তখন আমাদের পাকিস্তানকে বেশি প্রয়োজন ছিল, যত না পাকিস্তানিদের আমাদের প্রয়োজন ছিল। আমরা পাকিস্তানকে টাকা ছুড়ে দিয়েই খুশি ছিলাম। ওরা ওটাতেই প্রতিক্রিয়া দিত।”
বর্তমান ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক নিয়েও তিনি বলেন যে ইসলামাবাদের এই নীতিতে আসতে হবে যে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে ইতিবাচক কিছু হবে না। ভারতের সঙ্গে যেকোনও যুদ্ধে হারবে পাকিস্তান।