জনজোয়ারে ভাসল ‘মহাপঞ্চায়েত’, গাজিপুর সীমান্তে জারি থাকবে আন্দোলন

দুপুরে মহাপঞ্চায়েত শুরু হতেই জড়ো হন বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা। সেখানেই নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিকেইউ নেতা রাকেশ তিকাইত জানান, গাজিপুর সীমান্তে আন্দোলন বজায় রাখবে কৃষকরা।

জনজোয়ারে ভাসল 'মহাপঞ্চায়েত', গাজিপুর সীমান্তে জারি থাকবে আন্দোলন
মহাপঞ্চায়েতে যোগ দিতে উপস্থিত হয়েছেন কৃষকরা। ছবি:ANI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 29, 2021 | 8:28 PM

মুজাফ্ফরনগর: বিপুল সাড়া মহাপঞ্চায়েত-এ। আন্দোলনকারী কৃষকদের গাজিপুর সীমান্ত ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরই দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিল কৃষকরা। তল্পি-তল্পা গুটিয়ে একদল রওনাও দিয়েছিল বাড়ির উদ্দেশে। কিন্তু ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের মুখপাত্র রাকেশ তিকাইতের আবেদনেই ফিরে এসেছেন তাঁরা। শুক্রবার দুপুরেই আয়োজন করা হয় মহাপঞ্চায়েত(Mahapanchayat)-র। বৈঠকের পর কৃষক নেতা রাকেশ তিকাইত (Rakesh Tikait) বলেন, “গাজিপুরে আন্দোলন বজায় থাকবেই”।

আন্দোলনস্থল থেকে কৃষকদের উৎখাত করতে গতকাল রাতেই বিশাল সংখ্যক পুলিশবাহিনী পাঠায় উত্তর প্রদেশ প্রশাসন। রাতারাতি সীমান্ত খালি করে কৃষকদের ট্রাক্টর ও বিভিন্ন ট্রাকে চেপে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিতেও দেখা যায়। তবে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা রাকেশ তিকাইত বলেন, “ওরা কৃষকদের শেষ করে ফেলতে চাইছে। আমরা সেটা হতে দেব না” । হয় আইন প্রত্যাহার করা হবে, নয়তো আমি আত্মহত্যা করব। কৃষকদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।”

এরপরই রাতে সাংবাদিক বৈঠকে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাকেশ তিকাইত। চোখের জল মুছে তিনি বলেন, “কৃষকদের লাঠি দিয়ে মারা হয়েছে, তাঁদের মেরে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি তা হতে দেব না। কিছুতেই পিছু হটব না আমি”। এরপরই আন্দোলনকারীরা গাড়ি ঘুরিয়ে ফের গাজিপুর সীমান্তের উদ্দেশেই রওনা দেন। রাকেশ তিকাইতের ভাই তথা ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের প্রধান নরেশ তিকাইত জানান, আগামিকাল মুজাফ্ফরপুর(Muzaffarnagar)-এ মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করা হয়েছে। সকল কৃষকদের সেই বৈঠকে যোগ দিতে বলা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হরিয়ানা থেকে কৃষকরাও এই বৈঠকে যোগ দিতে রওনা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: পুলিশের চাকরি ছেড়েছেন, ৪৪ বার জেল খেটেছেন, সবই কৃষক আন্দোলনের জন্য

আজ সকাল থেকেই মুজাফ্ফরনগরে কৃষকদের জনজেয়ার লক্ষ্য করা যায়। দুপুরে মহাপঞ্চায়েত শুরু হতেই জড়ো হন বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা। সেখানেই নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর বিকেইউ নেতা রাকেশ তিকাইত জানান, গাজিপুর সীমান্তে আন্দোলন বজায় রাখবে কৃষকরা। সরকার চাপ দিলেও তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার না হওয়া অবধি তাঁরা কোথাও যাবেন না।

অন্যদিকে, উত্তর প্রদেশ (Uttar Pradesh)-র এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “গতকাল বিকেলে সীমান্তে যে বিশাল সংখ্যক পুলিশবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, তা কৃষকদের উৎখাত করতে নয়, বরং আন্দোলনের মাঝে যাতে কোনও সমাজবিরোধী কার্যকলাপ যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতেই পুলিশরা নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কিছু মানুষ সেই বিষয়টিকেই ভুলভাবে প্রদর্শন করেছেন।” তিনি জানান, গতকাল যে সমস্ত কৃষকরা আন্দোলনস্থল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের উৎখাত করতে পুলিশ কোনও শক্তি প্রয়োগ করেনি। তাঁরা স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন।

প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন ট্রাক্টর মিছিল (Tractor Rally) ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তারপরই সীমান্তের আশেপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও কৃষকদের আন্দোলনস্থল ছেড়ে চলে যাওয়ার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, বিগত দুই মাস ধরে কৃষক আন্দোলনের জেরে বিদ্যুৎ, পানীয় জলের অভাবের মতো নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আজ দুপুরেও সিংঘু সীমান্তে প্রায় ২০০ জন স্থানীয় বাসিন্দারা কৃষকদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন এবং তাঁদের উপর পাথর ছোড়েন। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঘটনাস্থল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে।

আজকের ঘটনার পরই হরিয়ানা (Haryana) সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, অম্বালা, যমুনা নগর, কুরুক্ষেত্র, কার্নাল, পানিপত, ফতেহাবাদ, রোহতক, সিরসা সহ বিভিন্ন জায়গায় আগামিকাল বিকেল অবধি যাবতীয় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। একমাত্র ভয়েস কলই চালু রাখা হবে।

আরও পড়ুন: দিল্লির ইজরায়েল দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণ, ঘটনাস্থলে যুগ্ম কমিশনার