নয়া দিল্লি: পড়ুয়াদের শিক্ষিত করার দায়িত্ব যাঁদের উপর, বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদেরই, এই অভিযোগেই সোনিপতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয় (Ashoka University) থেকে পদত্যাগ করেছেন দুই অধ্যাপক। পরপর দুই অধ্যাপকের এইভাবে ইস্তফায় এবার মুখ খুললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন (Raghuram Rajan)। লিঙ্কডইন(LinkedIn)-র একটি পোস্টে তিনি লেখেন, “যে কোনও ভাল বিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র বা আত্মা হয় বাক স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতার সঙ্গেই সমঝোতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্মাকেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
মোদী সরকারের সমালোচক হিসাবে পরিচিত অধ্যাপক প্রতাপ ভানু মেহতা (Pratap Bhanu Mehta) ২০১৯ সালেই অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। তবে অধ্যাপক হিসাবে পড়াচ্ছিলেন তিনি। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবারই তিনি সেই পদ থেকেও আচমকাই ইস্তফা দেন।
ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর মালবিকা সরকারকে লেখা ইস্তফাপত্রে তিনি লেখেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের সঙ্গে দেখা করার পর এই বিষয়টি স্পষ্ট যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার জড়িয়ে থাকার বিষয়টিকে রাজনৈতিক দায় হিসাবে দেখা হচ্ছে। সকলকে সম্মান করা ও স্বাধীানতার সাংবিধানিক গুরুত্ব নিয়ে আমার লেখনী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধার্থেই আমি অধ্যাপক পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি।”
আরও পড়ুন: মাস্ক না পরায় জরিমানা, টাকার বদলে ঘুসি মারলেন অভিযুক্ত মহিলা
ভানু প্রতাপ মেহতার ইস্তফার দুদিন পরই আরেক অধ্যাপক তথা প্রধানমন্ত্রীর প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতি উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম(Arvind Subramaniam)-ও ইস্তফা দেন। পদত্যাগ পত্রে তিনি স্পষ্টভাবেই জানান অপর অধ্যাপক ভানু প্রতাপের ইস্তফার ঘটনাই তাঁকে প্রভাবিত করেছে এবং সেই প্রেক্ষিতেই তিনি পদত্যাগ করেছেন। ইস্তফাপত্রে তিনি বলেন, “যে পরিস্থিতিতে অধ্যাপক প্রতাপ ভানু মেহতা ইস্তফা দিয়েছেন, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ওনার মতো একজন বিখ্যাত ও সৎ ব্যক্তির বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার ঘটনায় আমি অত্যন্ত চিন্তিত।”
দুই বিখ্যাত অধ্যাপকের ইস্তফার পরই অন্যান্য অধ্যাপক, পড়ুয়া ও প্রাক্তনীরা এই ঘটনায় নিজেদেরমতামত প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম(P Chidambaram)- ঘটনার সমালোচনা করে বলেছিলেন, “বিজেপির এইধরনের চিন্তাধারা গোটা ভারতকেই ধ্বংস করে দেবে এবং দেশের গণতন্ত্রকে স্বৈরাতন্ত্রে পরিণত করবে। দেশের সাধারণ মানুষের উচিত জোর করে এইধরনের চিন্তাভাবনার বিরোধিতা করা।”
এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর, যিনি নিজেও শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক, তিনি লেখেন, “সমালোচকের হাত থেকে মুক্তি পেতে এবং বাইরের চাপে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁকে অপসারিত করা হয়েছে।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “এটি শিক্ষার স্বাধীনতার উপর আক্রমণ।”
আরও পড়ুন: ফের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে মার্চের শেষ প্রহর! আবারও বাড়বাড়ন্ত করোনার