Global warming: হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়ের কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা
Disaster: সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হল, বর্ষার সময়ে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে দীর্ঘসময় শুষ্ক কাটে এবং মাঝে-মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এই সবকিছুই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফল এবং তার জেরেই হিমাচল ও উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয় নেমে আসছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

নয়া দিল্লি: প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত দেবভূমি! টানা মেঘভাঙা বৃষ্টি ও ভূমিধ্বসে হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রাণ গিয়েছে প্রায় শ’খানেক মানুষের। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে বহুতল। মন্দির, রাস্তা, ব্রিজ ভেসে গিয়েছে। একই অবস্থা উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand)। কেবল চলতি বছর নয়, সাম্প্রতিককালে গত কয়েক বছর ধরেই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ধ্বস্ত হিমাচল, উত্তরাখণ্ডের মতো হিমালয়ের কোলের অঞ্চলগুলি। হঠাৎ করে কেন এই অভিশাপ নেমে এল হিমালয়ের কোলে? প্রতি বছরই কেন এভাবে দুর্যোগের কবলে পড়েছে পার্বত্য অঞ্চলগুলি? এখন এই সমস্ত প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন বিজ্ঞানীরা। অনেকের মতে, ধারণ ক্ষমতা পরিমাপ না করেই পাহাড়ের কোলে অতিরিক্ত হোটেল, বহুতল তৈরি হয়েছিল এবং জনসংখ্যা থেকে পর্যটকের সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ওই এলাকার ধারণ ক্ষমতার বাইরে। সেজন্যই এই বিপর্যয়। আবার বিজ্ঞানীদের আরেক অংশের মতে, সাম্প্রতিককালে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য আবহাওয়ার চরম পরিবর্তনই দায়ী। তাঁদের মতে, আবহাওয়ার চরম বদল ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming)।
আবহবিদদের মতে, হঠাৎ করে সৃষ্ট নিম্নচাপের জেরেই হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আর এই নিম্নচাপের কারণ অতিরিক্ত তাপমাত্রার বৃদ্ধি। মৌসম ভবনের নয়া দিল্লির অধিকর্তা কুলদীপ শ্রীবাস্তবের কথায়, এটিকে দুটি শক্তিশালী সিস্টেমের সংঘর্ষ হিসাবে মনে করুন।” তিনি আরও বলেন, “এটি অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা মেঘ বিস্ফোরণ ঘটায় … আমরা গত কয়েক বছরে লক্ষ্য করছি, স্বল্প সময়ের জন্য বৃষ্টিপাত হলেও তার তীব্রতা অত্যধিক। এটার প্রধান কারণ হল আবহাওয়ার পরিবর্তন অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রার বৃদ্ধি। ফলে বছরের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঘটনা বাড়ছে।”
আবহাওয়া অফিসের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে জানা যায়, এক দশকের মধ্যে হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ঘটনা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। ২০১১ সালে এই দুই রাজ্যে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছিল ৭৪টি, ২০২০ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১১৮। এবছর জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত সরকারি তথ্য অনুসারে বৃষ্টি ও ধসের জেরে হিমাচল প্রদেশে ১৬৬ জন এবং উত্তরাখণ্ডে ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ জিওম্যাগেটিসম-এর অধিকর্তা ভই.পি ডিমরি বলেন, “সাধারণত জুন ও অক্টোবরে, গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময়ে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর সীমান্ত দিয়ে বয়ে যায়। কিন্তু এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সেটি কিছুটা দক্ষিণে সরে এসেছে। তিনি আরও বলেন, সমুদ্রতলের উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আরও শক্তি পাচ্ছে, একইভাবে হাওয়ার অভিমুখ ও গতি বদল হচ্ছে, যা গোটা বিশ্বের কাছে সতর্কতা-স্বরূপ।”
আবার বর্ষাকালের বৃষ্টির প্রকৃতিও বদলে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটারোলোজি-র গবেষক রক্সি ম্যাথিউ কোল। তিনি বলেন, “সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন হল, বর্ষার সময়ে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পরিবর্তে দীর্ঘসময় শুষ্ক কাটে এবং মাঝে-মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হয়।” এই সবকিছুই গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফল এবং তার জেরেই হিমালয়ের কোলের দুই রাজ্য, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয় নেমে আসছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
