থানে: টুকরো টুকরো করা হাত। এর ফাঁক দিয়েই উঁকি দিচ্ছিল বজরংবলীর একটি ট্যাটু। সেই ট্যাটুই চিনিয়ে দিল আসল কালপ্রিটকে। ধরা পড়ল আসল খুনি। নবি মুম্বইয়ের (Navi Mumbai) এই ঘটনা।
নবি মুম্বইয়ের একটি ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হয় প্লাস্টিকে মোড়া দেহের অংশ। তবে সেখানে ছিল না মাথা। ফলে টুকরো টুকরো ওই অংশ থেকে খুন হওয়া ব্যক্তির আসল পরিচয় জানতে প্রথম দিকে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে।
নবি মুম্বইয়ের সিনিয়র পুলিশ অফিসার বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে গোটা ঘটনার বিবরণ দেন। বলেন, মূল অভিযুক্তের নাম হরিশকুমার চৌহান। সাতাশ বছর বয়স। অন্যদিকে নিহতের নাম রবীন্দ্র রমেশ মান্ডতিয়া। তিরিশ বছর বয়স তাঁর।
নবি মুম্বইয়ের পুলিশ আধিকারিক বিপিন কুমার সিং জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তির দেহের বিভিন্ন অংশের টুকরো উদ্ধার হয়। এর মধ্যে দু’টি হাত ও পা ছিল। একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের মধ্যে এই দেহাংশগুলি ভরে কেউ নবি মুম্বইয়ের বশি এপিএমসি এলাকায় ফেলে রেখে যায়। যদিও প্লাস্টিকে মাথাটি ছিল না। পুলিশ এই ঘটনায় খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে।
বিপিন কুমার সিংয়ের কথায়, “নিহত ওই ব্যক্তির হাতে ‘রবীন্দ্র’ লেখা ছিল। সঙ্গে হনুমানজীর একটি ট্যাটু। এর বেশি কিছু তথ্য আমাদের হাতে ছিল না। ফলে দেহটি শনাক্ত করতেও সমস্যা হচ্ছিল। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং কেস ছিল আমাদের জন্যও। একাধিক টিম তৈরি করা হয় এই দেহ শনাক্তকরণের জন্য। অভিযুক্তকেও ধরতে সবরকম চেষ্টা চালানো হয়। ”
পুলিশের বিশেষ টিম থানে, রায়গড়, মুম্বই এবং নবি মুম্বইয়ে তদন্তেও যায়। সেখানে দেখা যায় নবি মুম্বই পুলিশ কমিশনারেটে ১০০ জন নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সেই নামের তালিকা ঘেঁটে রবীন্দ্র নামে একজনকে পাওয়া যায়। তাঁর পুরো নাম ছিল রবীন্দ্র মান্ডতিয়া। তিনি একজন সাফাই কর্মী। বেশ কিছুদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। কোপারখাইরনে পুলিশ স্টেশনে তাঁর পরিবারের লোকজন নিখোঁজ সংক্রান্ত অভিযোগও দায়ের করেন।
এরপরই পুলিশ ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বাড়ির লোকজন এসে হাতের টুকরোতে আঁকা ট্যাটু দেখেই চিনতে পারেন এই সেই রবীন্দ্র। এরপরই তদন্ত গতি পায়। এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। সন্দেহভাজন হরিশকুমার চৌহানকে গ্রেফতারও করা হয়।
জেরার মুখে হরিশকুমার চৌহান পুলিশকে জানান, রবীন্দ্রের সঙ্গে টাকা পয়সা নিয়ে তাঁর বচসা চলছিল। এরপরই রবীন্দ্র মান্ডতিয়ার গলা কেটে তাঁকে খুন করা হয়। দেহ যাতে কোনও ভাবেই পুলিশ চিনতে না পারে সে কারণেই শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো টুকরো করে ফেলে আততায়ী। ৯ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটে। এরপরই দেহাবশেষ একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে ফেলে দেন অভিযুক্ত। ১৪ সেপ্টেম্বর হরিশকুমার চৌহানকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় আদালতে তোলা হলে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘চিনা শত্রু’র দাপট কলকাতার আকাশে! মরণফাঁদ ঠেকাতে ২০ লক্ষ টাকার ‘ঢাল’