‘চিনা শত্রু’র দাপট কলকাতার আকাশে! মরণফাঁদ ঠেকাতে ২০ লক্ষ টাকার ‘ঢাল’
Chinese Manja: মা উড়ালপুলে গত তিনমাসে চিনা মাঞ্জার সুতোয় আহত হয়েছেন ১৩ জন। ক'দিন আগেই এই বিশেষ মাঞ্জা সুতোয় জখম হন কলকাতা পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট।
কলকাতা: বিশ্বকর্মা পুজো মানেই আকাশজুড়ে পেটকাঠি-চাঁদিয়াল-মোমবাতি-বগ্গাদের দাপাদাপির দিন। কিন্তু এই দিনটায় আরও বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে দু’ চাকার সওয়ারিদের। বিশেষ করে, তাঁরা যখন মা উড়ালপুল (Maa Flyover) ধরে যাবেন। বছরের আর পাঁচটা সাধারণ দিনেই প্রাণঘাতী হুমকি হয়ে ওঠে চিনা মাঞ্জা (Chinese Manja)। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এই ‘চিনা’ শত্রু যে আরও দাপট বাড়াবে না, কে বলতে পারে।
দেখা গিয়েছে, ঘুড়ি ওড়াতে চিনা মাঞ্জা সুতোর কদর এখন মারাত্মক। সরকারি ভাবে চিনা মাঞ্জা নিষিদ্ধ হলেও, বাজারে দিব্যি বিকোচ্ছে। শুধু জায়গাটা খুঁজে নিতে হবে। পুলিশের কড়া নজর এড়িয়ে চিনা মাঞ্জার সুতো দেদার বিকোচ্ছে শহর ও শহরতলিতে।
মা উড়ালপুলে গত তিনমাসে চিনা মাঞ্জার সুতোয় আহত হয়েছেন ১৩ জন। ক’দিন আগেই এই বিশেষ মাঞ্জা সুতোয় জখম হন কলকাতা পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। বার বার প্রশ্ন ওঠে, যে চিনা মাঞ্জা সুতোকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা কী ভাবে বিক্রি হয় বাজারে? অভিযোগ, মেটিয়াবুরুজ, এন্টালি, খড়দহে নাকি এই চিনা মাঞ্জার ব্যবসার রমরমা। পুলিশ কর্মী আহত হওয়ার পর নজরদারি বেড়েছে ঠিকই। তবে লুকিয়ে চুরিয়ে চিনা মাঞ্জা সুতো কিন্তু বিক্রি চলছেই বলে অভিযোগ।
যদিও খড়দহের এক ঘুড়ি ব্যবসায়ী মানিক সাউ জানান, সরকার এই সুতো নিষিদ্ধ করার পর থেকে অনেক দোকানই আর তা রাখছে না। মানিক সাউয়ের কথায়, “চিনা মাঞ্জা তো সরকার নিষিদ্ধই করে দিয়েছে। পুলিশও কয়েক বার এসে বিক্রি করতে না করে গিয়েছে। প্রতিটা দোকানেই বারণ করেছে। সে কারণে এই সুতোর বিক্রিটা এখন অনেকই কম।”
চিনা মাঞ্জার বিপদ এড়াতে ইতিমধ্যেই মা উড়ালপুলে বিশেষ গার্ডরেল বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন যে রেলিং রয়েছে তার উপর দিয়ে এই গার্ডরেল বসানো হবে। তা বসাতে খরচ পড়বে ২০ লক্ষ টাকা। মা উড়ালপুলের যে অংশটি পার্ক সার্কাসের দিকে যায়, মূলত সেদিকেই চিনা মাঞ্জার দাপট বেশি। বিপদও এদিকটাতেই বেশি ঘটে। তাই বিশেষ গার্ডরেল বসছে এখানে। অধিক উচ্চতার এই গার্ডরেল বিপদ ঠেকানোর গুপ্তিমন্ত্র হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কী এই চিনা মাঞ্জা
মূলত নাইলনের সুতোর উপর ধাতু ও কাঁচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয় এই চিনা মাঞ্জা। এর মধ্যে সিন্থেটিক আঠাও ব্যবহার করা হয়। ফলে ব্লেডের মতো ধারাল হয়ে ওঠে এই মাঞ্জা। মুহূর্তে প্রাণ পর্যন্ত চলে যেতে পারে। এই চিনা মাঞ্জায় পাখিরও প্রাণের বিপদ হয় নিয়মিত। যেহেতু কাঁচের গুঁড়োর সঙ্গে সিন্থেটিক আঠা, ধাতুও মেশানো থাকে, ফলে জল লাগলেও তা পচে না। জাতীয় পরিবেশ আদালত ইতিমধ্যেই এই চিনা মাঞ্জাকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বলে ঘোষণা করেছে। দেশে এই চিনা মাঞ্জার বিক্রিও আইন বহির্ভূত। তার পরও কী ভাবে খাস কলকাতার বুকে এই মাঞ্জা সুতোর এমন রমরমা, তা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ থাকে।
আরও পড়ুন: Mystery Fever: অজানা জ্বরে কাবু বাংলা, একের পর এক চিঠি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে