চণ্ডীগঢ়: কৃষক আন্দোলনের আঁচ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল গত বছরের নভেম্বর মাস থেকেই। মাঝে আন্দোলন কিছুটা থিতিয়ে পড়লেও ফের একবার সক্রিয় হয়েছে আন্দোলন। হরিয়ানায় মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের সভা ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল কৃষকরা। তাদের শায়েস্তা করতেই পুলিশকে লাঠি দিয়ে কৃষকদের মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন কর্নালের এসডিএম। এই ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই উঠেছে নিন্দার ঝড়। বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীও এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন।
শনিবার হরিয়ানার কর্নালে একটি দলীয় বৈঠকে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর। উপস্থিত ছিলেন বিজেপ্র রাজ্য সভাপতি ওম প্রকাশ ধনখড় সহ অন্যান্য নেতারাও। সেই বৈঠককে কেন্দ্র করেই বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কৃষকরা। পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে গোটা এলাকা ঘিরে রাখলেও বৈঠক ঘিরে অশান্তির আশঙ্কাতেই ঘটনাস্থানে আসেন কর্নালের সাব-ডিভিসনাল ম্যাজিস্ট্রেট আয়ুষ সিনহা। সেখানেই তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখে পুলিশকে নির্দেশ দেন, কৃষকরা যেন কোনওমতেই ব্যারিকেড টপকে এগোতে না পারে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োয় তাঁকে বলতে শোনা যায়, “খুব সোজা কথা বলছি। যেই হোক না কেন, যেখান থেকেই আসুক না কেন, কাউকে যেন এই ব্যারিকেড টপকে ভিতরে আসতে না দেওয়া হয়। কোনও নির্দেশের অপেক্ষা করতে হবে না, হাতে লাঠি নিন এবং মেরে মাথা ফাটিয়ে দিন। আমি যদি একজন আন্দোলনকারীকেও দেখতে পাই, তবে তার মাথা যেন ফাটিয়ে দেওয়া হয়।” তাঁর নির্দেশ নিয়ে পুলিশবাহিনীর মধ্যে কোনও সংশয় রয়েছে কিনা, তাও জানতে চান তিনি।
I hope this video is edited and the DM did not say this… Otherwise, this is unacceptable in democratic India to do to our own citizens. pic.twitter.com/rWRFSD2FRH
— Varun Gandhi (@varungandhi80) August 28, 2021
এ দিকে, পুলিশকে এই নির্দেশ দেওয়ার কথা জানাজানির পরই অন্যান্য জেলা থেকেও কৃষকরা ওই বৈঠকস্থলে ভিড় জমাতে শুরু করে। আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে জাতীয় সড়কও বন্ধ করে দেওয়া হয়। দিল্লি ও চণ্ডীগঢ় সংযোগকারী রাস্তাগুলিতেও বিপুল যানজট শুরু হয়। আন্দোলনকারীদের হটাতেই লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। ঘটনায় আহত হন কমপক্ষে ১০ জন কৃষক।
পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, কৃষকরা একাধিক জায়গা থেকে পাথর ছোড়া শুরু করলেই লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। তবে খুব বেশি শক্তি প্রয়োগ করা হয়নি বলেই দাবি পুলিশের। এ দিকে, ওই ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক শুরু হতেই সমালোচনায় সরব হয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস নেতা রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা টুইট করে লেখেন, “খট্টর সাহেব, আজ আপনি হরিয়ানভীদের উপর লাঠি চালালেন। রাস্তার উপরে কৃষকদের যেব রক্তপাত হল, তা আগামী প্রজন্মও মনে রাখবে।”
এদিকে, বিজেপি সাংসদ বরুণ গান্ধীও ঘটনার সমালোচনা করে তিনি লেখেন, “আমি আশা করছি এই ভিডিয়োটা যেন এডিট করা হয়। জেলাশাসক ওই কথা বলেননি, এটাই আশা করছি। নাহলে, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে নাগরিকদের প্রতি এইধরনের মন্তব্য কখনওই গ্রহণযোগ্য নয়।”
স্বরাজ ইন্ডিয়া প্রধান তথা সংযুক্ত কিসান মোর্চার অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “পুলিশের পদক্ষেপই আসল চেহারা সামনে এনে দিয়েছে। কৃষকরা কেবল মুখ্যমন্ত্রী খট্টর ও অন্যান্য বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রদর্শন করছিলেন। হরিয়ানা পুলিশের আসল চেহারা আজ সকলে দেখতে পেল।” আরও পডুন: ১৫ অগস্টের পর কৌশল নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে ভারতকে: রাজনাথ সিং