Odisha: যৌনতা এবং ব্ল্যাকমেল, ৪ বছরে ৩০ কোটির বেশি অর্থ আদায় করল ওড়িশার এই যুবতী
Archana Nag: মাত্র ৪ বছরে ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ কামিয়েছে যুবতী। আর এর পিছনে ছিল, যৌনতা, প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ব্ল্যাকমেলিং।
ভুবনেশ্বর: ওড়িশার সবথেকে দরিদ্র অঞ্চলগুলির অন্যতম কালাহান্ডি। এই জেলারই এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম হয়েছিল অর্চনা নাগের। সেখান থেকেই বর্তমানে ২৬ বছরের যুবতী এক প্রাসাদোপম বাড়ির মালিক। মাত্র ৪ বছরে ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের সম্পদ কামিয়েছিল সে। আর এর পিছনে ছিল, যৌনতা, প্রভাবশালীদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং ব্ল্যাকমেলিং। গত সপ্তাহে তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্চনাকে। হত দরিদ্র দশা থেকে তাঁর ধনি হওয়ার কাহিনি প্রায় সিনমার গল্পের মতো। বস্তুত ওড়িয়া চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্রীধর মার্থা অর্চনার কাহিনি নিয়ে একটি ফিল্ম তৈরি করার পরিকল্পনা করেছেন।
কালাহান্ডির লাঞ্জিগড়ে জন্মেছিল অর্চনা। ওই জেলারই কেসিঙ্গাতে বড় হয়েছিল সে। তারপর ২০১৫ সালে সে পাড়ি দিয়েছিল ভুবনেশ্বরে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্চনা প্রথমে একটি বেসরকারী নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ করত। পরে একটি বিউটি পার্লারে যোগ দিয়েছিল সে। সেখানেই তার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বালাসোর জেলার বাসিন্দা জগবন্ধু চাঁদের। ২০১৮ সালে দুজনে বিয়ে করেছিল। পুলিশের মতে, বিউটি পার্লারে কাজ করতে করতেই একটি যৌন চক্র শুরু করেছিল তারা।
জগবন্ধুর একটি পুরোনো গাড়ি বিক্রির শোরুম ছিল। তার দৌলতে রাজনীতিবিদ, নির্মাতা, ব্যবসায়ী এবং চলচ্চিত্র প্রযোজকদের মতো ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় ছিল তার। কয়েকজন বিধায়ক-সহ বেশ এপকম বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে জগবন্ধু এবং অর্চনার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। জগববন্ধুর এই পরিচিতিকেই তারা ধনী হওয়ার কাজে লাগিয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, অর্চনা এবং জগবন্ধু ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বন্ধুত্ব করত। তাদের যৌনচক্রের সদস্য মহিলাদের তাদের কাছে পাঠাত। পুলিশের দাবি, গোপনে প্রভাবশালী ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে মহিলাদের অন্তরঙ্গ ছবি তোলা হত। আর সেই ছবি দেখিয়েই পরবর্তীকালে অর্থের জন্য চাপ দেওয়া হত ওই প্রভাবশালীদের। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো প্রকাশ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে, অর্থ আদায় করত তারা। এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, পুলিশের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে জানা গিয়েছে, এভাবে ২০১৮ থেকে ২০২২ – মাত্র চার বছরেই জগবন্ধু ও অর্চনা ৩০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি অর্জন করেছিল।
এতদিন ধরে এই কারবার চালিয়ে আসলেও, এখনও পর্যন্ত অধরাই ছিল এই ব্ল্যাকমেলার দম্পতি। ভুবনেশ্বরের ডিসিপি প্রতীক সিং জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত অর্চনা ও জগবন্ধুর বিরুদ্ধে মাত্র দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নয়াপল্লি থানায় এক চলচ্চিত্র প্রযোজক অভিযোগ করেছেন, অর্চনা তাঁর সঙ্গে আরেক মহিলার অন্তরঙ্গ ছবি দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩ কোটি টাকা দাবি করেছিল। অর্চনাদের যৌনচক্রের সদস্য আরেক মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাঁকে জোর করে এই র্যাকেটে ব্যবহার করা হয়েছিল। এরপরই গত ৬ অক্টোবর অর্চনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ব্ল্যাকমেলের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা যদি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে, তবে পুলিশ অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আপাতত, পুলিশের পক্ষ থেকে অর্চনার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অর্চনা-জগবন্ধুর কাহিনি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনীতিও। কংগ্রেস বিধায়ক এস এস সালুজার দাবি, ক্ষমতাসীন বিজেডির বিধায়ক-মন্ত্রীদের সঙ্গে অর্চনার যোগসূত্র প্রকাশিত হলে, ২২ বছরের নবীন পট্টনায়েক সরকারের পতন ঘটা অনিবার্য। শাসক দলের বিধায়ক, মন্ত্রী, যুব নেতাদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। বিজেপির পক্ষ থেকেও দাবি করা হয়েছে, ১৮ জন বিধায়ক এবং মন্ত্রী সহ মোট ২৫ জন বিজেডি নেতার সঙ্গে অর্চনার যোগাযোগ ছিল।