নয়া দিল্লি: প্রথম বিশ্বের দেশগুলি পারেনি এখনও, তৃতীয় বিশ্বের দেশ হয়েও টিকাকরণে ১০০ কোটির (100 crore Vaccination) লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে নজির গড়ে দেখাল ভারত (India)। চলতি বছরের শুরুতেই দেশজুড়ে করোনা টিকাকরণের যে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল, তার প্রথম ধাপ পূরণ হল আজ। দেশে ১০০ কোটি করোনা টিকা দেওয়া হল।
ঘড়ির কাঁটা ঘুরিয়ে এক বছর পিছিয়ে গেলে দৃশ্যটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। করোনার একের পর এক ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিল ভারত তথা গোটা বিশ্ব। তবে সেই কঠিন সময়েও মনোবল হারায়নি দেশ, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনার টিকা (COVID Vaccine) তৈরির কাজে লেগে পড়েন তারা। বছর শেষ হওয়ার আগেই সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিকে তৈরি হল কোভ্যাক্সিন (Covaxin)। অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টায় সেরাম ইন্সটিটিউটও তৈরি করল কোভিশিল্ড (Covishield)।
২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি এক নতুন ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে পা দেয় ভারত। শুরু হয় গণটিকাকরণ কর্মসূচি (COVID Vaccination Drive)। মাত্র ৩৪ দিনেই অর্থাৎ ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে ১ কোটি টিকা দেওয়া হয়। এরপর ৮৫ দিনের মাথায় ১০ কোটি টিকাকরণের গণ্ডিতে প্রবেশ করে দেশ। ১৪৮ দিন পার করে ১২ জুন ২৫ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করে কেন্দ্র।
১০০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যে এই পথচলা অতটা সহজ ছিল না। টিকাকরণের প্রথম ধাপেই কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছিল, টিকাকরণের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্যতা পাবেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধারা। তবে করোনা টিকা নিয়ে সকলের মনেই নানা প্রশ্ন ও ধন্দ্ব থাকায় টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়। অনেকেই করোনা টিকা নিতে অস্বীকার করেন। তবে কেন্দ্রের লাগাতার প্রচার ও প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে সেই প্রতিবন্ধকতা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
দেশে ৫০ কোটি টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা পার হয় টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হওয়ার ২০৩ দিনের মাথায়। ৬ অগস্ট এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে দেশ। এরপর ১৩ সেপ্টেম্বর ৭৫ কোটি টিকাকরণের গণ্ডিতে প্রবেশ করে দেশ। ১৭ সেপ্টেম্বর, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে আড়াই কোটি টিকা দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ভারত। সেই সময়ই প্রধানমন্ত্রী দেশের সমস্ত চিকিৎসক, স্বাস্থ্য়কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন,”টিকাকরণের এই গতি ধরে রেখেই ১০০ কোটির মাইলফলক স্পর্শ করতে হবে আমাদের”।
২৬০ দিনের মাথায়, ২ অক্টোবরই ৯০ কোটি টিকাকরণের গণ্ডিতে প্রবেশ করে দেশ। এরপরই শুরু হয় কাউন্টডাউন। চলতি সপ্তাহের মঙ্গলবার ৯৯ কোটির গণ্ডিতে প্রবেশ করে দেশ। দৈনিক টিকাকরণের সংখ্যা দেখেই দেশবাসী অপেক্ষা করতে থাকে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের, যখন ১০০ কোটির গণ্ডি পার করবে দেশের টিকাকরণ। আজ, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ৪৭ মিনিটেই সেই সময় আসে। পূরণ হয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন, দেশে ১০০ কোটি টিকা প্রদান।
তবে লড়াই এখানেই শেষ নয়, এখনও অনেকটাই পথ চলা বাকি। সামনেই রয়েছে আরও বড় দুটি লক্ষ্য। প্রথম লক্ষ্য হল, দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের করোনা টিকা প্রদান। কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ জনগণই করোনা টিকার প্রথম ডোজ় পেয়ে গিয়েছেন। বাকি রয়েছেন ২৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক। এই সংখ্যাটাই পূরণ করার জন্য মোট ১৯০ কোটি টিকা প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে যদি দেশের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের করোনা টিকা দিতে হয়, তবে দৈনিক ১ কোটি টিকা দিতে হবে।
একইসঙ্গে আরও একটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে কেন্দ্রের সামনে, তা হল ১৮ অনুর্ধ্বদের টিকাকরণ। প্রাপ্তবয়স্করা টিকা পেলেও এখনও দেশে শিশু ও নাবালকদের জন্য টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়নি। চলতি মাসের শেষভাগে বা আগামী মাসের শুরুতেই শিশুদের টিকাকরণের অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। অনুমোদন মিললেই দ্বিতীয় পর্যায়ের এই টিকাকরণও জোরকদমে শুরু করা হবে। শিশু ও নাবালকদের মিলিয়ে মোট ২৭০ কোটি টিকা দিতে হবে।
আরও পডুন: 100 Crore Vaccination: সাফল্যের শীর্ষে দেশ! করোনা টিকাকরণে পার হল ১০০ কোটির মাইলফলক