India-Bangladesh: বন্ধ হল ভারতের শুল্ক কেন্দ্র! কেন্দ্রের এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের রফতানিতে হাহাকার
India-Bangladesh: ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতের এই এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ও ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। বিশেষত ঢাকার বস্ত্র রফতানি এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হবে।

একেই বলে স্যাকরার ঠুকঠাক, কামারের এক ঘা। কয়েকদিন আগেই চিনে গিয়ে ভারতের নিন্দা করে এসেছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস। বলেছিলেন, ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি ‘ল্যান্ড লকড’। তাদের সমুদ্রপথের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। ওই এলাকার সমুদ্রপথের একমাত্র অভিভাবক আমরাই (বাংলাদেশ)। ইউনুসের ওই মন্তব্য ভালভাবে নেয়নি ভারত। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে ঢোঁক গিলতে হয় ইউনুসকে। কিন্তু এবার মোদী সরকার যে সিদ্ধান্ত নিল, তাতে বাংলাদেশকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হল বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
কী সিদ্ধান্ত ভারতের?
সহজ করে বললে, ৮ এপ্রিলের পর থেকে ভারতের উপর দিয়ে আর কোনও দেশে পণ্য রফতানির জন্য ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন (LCS) বা শুল্ক কেন্দ্র ব্যবহার করতে পারবে না বাংলাদেশ। এতদিন এই সুবিধার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজস্ব পণ্য ভারতে নিয়ে এসে এখানকার বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পাঠাতে পারত। এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। বাংলাদেশের সামগ্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশে রফতানির জন্য এই ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ সুবিধা প্রত্যাহার করা হল। এর জন্য কেন্দ্রীয় পরোক্ষ কর ও শুল্ক বোর্ড (সিবিআইসি) ২০২০ সালের জুন মাসের একটি নিয়ম বাতিল করল, যা বাংলাদেশের পণ্য ভিনদেশে রফতানির জন্য ভারতীয় বন্দর ও বিমানবন্দরের ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন ব্যবহার করতে দিত। এতে ভুটান, নেপাল, মায়ানমারে পণ্য পাঠাতে ভারতের পরিকাঠামোকে ব্যবহার করে এক ছাদের নিচে সব সুযোগ সুবিধা পেত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। আজকের পর থেকে তা আর মিলবে না। ফলে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের এবার থেকে ওই সব দেশে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়বে। সময়ও বেশি লাগবে। খরচও বেশি হবে।
বাংলাদেশের জন্য কী প্রভাব পড়বে?
বাংলাদেশ এখন আর ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে সহজে নেপাল বা ভুটানে পণ্য পাঠাতে পারবে না।
এতে করে বাংলাদেশের রফতানি খরচ অনেক বেড়ে যাবে, বিশেষ করে বস্ত্রশিল্পে।
বাংলাদেশকে সমুদ্রপথ বা আকাশপথে রপ্তানির বিকল্প ভাবতে হবে, যা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল।
লজিস্টিক সমস্যা ও সময়ে পণ্য পৌঁছতে দেরি, ফলে প্রতিযোগিতায় পিছোবে
বিদেশমন্ত্রক জানিয়েছে, ভারতীয় বিমানবন্দর এবং বন্দরগুলির এলসিএস-গুলিতে বাংলাদেশি পণ্যবাহী ট্রাক-শিপমেন্ট এসে ভিড় জমাত। এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সময় ও টাকা খরচ হচ্ছিল। অ্যাপারেল এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিলের (AEPC) চেয়ারম্যান সুধীর শেখরি বলেছেন, “ভারতীয় ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের নিষ্পত্তি হল। প্রতিদিন ২০-৩০ বাংলাদেশি পণ্য বোঝাই ট্রাক দিল্লিতে এসে অপেক্ষা করত ভিনদেশে যাওয়ার জন্য। এতে আমাদের এক্সপোর্টাররা সমস্যার পড়ছিলেন। কার্গোতে আমাদের পণ্যের পর্যাপ্ত জায়গা হচ্ছিল না।”
ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনের কাজ
আমদানি ও রফতানির জন্য পণ্যের বাছাই
শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর আদায়
নিষিদ্ধ পণ্যের উপর নজরদারি
কাগজপত্র ও ইনভয়েস যাচাই
সীমান্ত দিয়ে বৈধ বাণিজ্যকে উৎসাহ প্রদান
ব্যবসায়ীদের মতে, ভারতের এই এক সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের পণ্য রফতানি ও ব্যবসায় ব্যাপক প্রভাব পড়তে চলেছে। বিশেষত ঢাকার বস্ত্র রফতানি এতে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত হবে। এতদিন ধরে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করে ভুটান, নেপাল ও মায়ানমারে প্রচুর পণ্য পাঠাত বাংলাদেশ, বিশেষত জামাকাপড়। ভারতের মাটি, বায়ুপথ ও বন্দরের LCS ব্যবহার করে অনেক কম খরচ ও কম সময়ে ভিনদেশে পণ্য পাঠাত বাংলাদেশ। কিন্তু এবার সেই সুযোগ বন্ধ হল। গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলছেন, “বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের রফতানি এবার মার খাবে। এতদিন ভারত যে সুবিধা দিত তাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শুধু অনেক টাকাই বাঁচত না, সময়ও বাঁচতে।” তিনি আরও জানান, গত ২০ বছর ধরে বাংলাদেশকে সন্তানসুলভ প্রশ্রয় দিয়ে এসেছে ভারত। পণ্যের উপর শূন্য শুল্ক, অগ্রাধিকার কী না দেওয়া হয়নি। মদ ও সিগারেট ছাড়া নেপাল, ভুটানের মতো দেশে বাংলাদেশে সব পণ্য বিনা শুল্কে এতদিন পাঠিয়ে এসেছে।
ভারত ও বাংলাদেশের কিছু গুরুত্বপূর্ণ LCS —
বেনাপোল (বাংলাদেশ) – পেট্রাপোল (ভারত)
হিলি – হিলি (ভারত)
বুড়িমারি – চ্যাংড়াবান্ধা
আখাউড়া – আগরতলা
কিন্তু সম্প্রতি চিনে গিয়ে নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মেরে এলেন ইউনুস। অনেক বড় বড় কথা বলে এসেছেন! নিজেদের সমুদ্রের অভিভাবক বলে চিনকে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানান। বলেন, বাংলাদেশে আসুন ব্যবসার জন্য। প্রচুর জিনিস বানান। বিক্রির জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত করে রেখেছি। চিনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই দোস্তি শুরু থেকেই ভারত ভাল চোখে দেখেনি। তারপর যখন শিলিগুড়ির চিকেনস নেকের কাছে বাংলাদেশের মাটিতে চিনকে বিমানঘাঁটি তৈরির আহ্বান জানিয়ে বসেন ইউনুস, তখন ভারত আর চুপ করে বসে থাকেনি।
ভারতের এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রফতানিতে কতটা প্রভাব ফেলে সেই উত্তর সময় দেবে।





