
নয়া দিল্লি: বাংলাদেশি সন্দেহে পুশব্যাক করা হয়েছিল। অবশেষে ভারতে ফিরছেন সোনালি খাতুন ও তাঁর নাবালক সন্তান। দীর্ঘ প্রতীক্ষা, দুই দেশের আদালতে কোর্ট-কাছারির পর বাংলাদেশের আদালত জামিন সোমবার, ১ ডিসেম্বর দেয় অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে। কেন্দ্রীয় সরকারও মানবিকতার খাতিরে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজি হল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। শীর্ষ আদালতের তরফে সোনালি ও তাঁর সন্তানের দেখভালের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
বাংলা ভাষা বলার অপরাধেই বাংলাদেশি সন্দেহে ওপার বাংলায় পুশব্যাক করা হয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুনকে। দিল্লি পুলিশ সোনালি সহ ১৬ জনকে চলতি বছরের জুন মাসে আটক করে। এরপরে বিএসএফের মাধ্যমে অগস্ট মাসে বাংলাদেশে পুশব্যাক করা হয়েছিল। ২১ অগস্ট সোনালিদের গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। অনুপ্রবেশের অভিযোগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংশোধনাগারে বন্দি করে রাখা হয়। অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আদালত তাঁদের জামিন দেয়। এবার ভারতে ফেরার পালা। সোজা বীরভূমের বাড়িতেই ফিরবেন সোনালি ও তাঁর সন্তান।
ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সোনালির ভারতে ফেরার খবর পোস্ট করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিজেপিকে ‘বাংলা বিরোধী জমিদার’ বলে আক্রমণ করেছে।
After a long wait, justice has finally prevailed. The Central Government has agreed, on humanitarian grounds, to bring back pregnant Sunali Khatun and her minor son.
She was illegally deported to Bangladesh merely for speaking Bengali, and her ordeal across the border stands as… pic.twitter.com/N9Z2TGLnLO
— Samirul Islam (@SamirulAITC) December 3, 2025
জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সোনালি খাতুনকে দিল্লিতে ফেরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু শীর্ষ আদালতের তরফে তাঁকে সরাসরি বীরভূমে ফেরত পাঠাতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ দিন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী বলেন যে সোনালি খাতুন ভোদু শেখের মেয়ে। তিনি ভারতীয় নাগরিক। যদি ভোদু শেখের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে এবং সোনালি তাঁর মেয়ে হন, তাহলে তাঁর সন্তানরাও নাগরিকত্ব আইনের অধীনে ভারতীয় নাগরিক হবেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তও বলেন যে কখনও কখনও মানবিকতার খাতিরে নমনীয়তা দেখানো উচিত। কেন্দ্রীয় সরকারকে সোনালি ও তাঁর সন্তানের ফেরার জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের তরফে রাজ্য সরকারকেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সোনালির চিকিৎসার ব্যবস্থা করার। বর্তমানে গর্ভাবস্থার অ্যাডভান্সড স্টেজে রয়েছেন সোনালি, ৯ মাসের গর্ভাবস্থা চলছে তাঁর। বীরভূম জেলা প্রশাসন ও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে অন্তঃসত্ত্বা সোনালির যাবতীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা ও দেখভাল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টে সোনালি খাতুনের পুশব্যাক করার মামলায় কড়া ভর্ৎসনা করেছিল প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর বেঞ্চ। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল যে বাংলাদেশি সন্দেহে পুশব্যাকের আগে তাঁকে নাগরিকত্ব প্রমাণের সুযোগ দিতে হবে।
সোনালি খাতুনকে বাংলাদেশে পুশব্য়াকের সিদ্ধান্তের ভর্ৎসনা করে শীর্ষ আদালত তাঁর নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলে। শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে যে যদি সোনালির বাবা ভারতীয় হন এবং তাঁকে বাংলাদেশে পাঠানো না হয়, তাহলে কীসের ভিত্তিতে সোনালিকে বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হল, তা জানতে চাওয়া হয়। যেহেতু সোনালির বাবা ভারতীয়, তাই সোনালিও ভারতীয়।