কিয়েভ: যুদ্ধের মাঝেই শহর ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন, কতক্ষণে সীমান্তে পৌঁছবেন, তাও জানা ছিল না। সেই কারণেই শেষ মুহূর্তে কিছু শুকনো খাবার কিনতে গিয়েছিলেন। সবে দোকানে ঢুকতে যাবেন, সেই সময়ই পিছনে বিস্ফোরণ হয়। ওই বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয় ভারতীয় পড়ুয়া নবীন শেখরাপ্পা গ্যানাগৌড়া( Naveen Shekharappa)-র। ২১ বছরের ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী(Narendra Modi)-ও। বিদেশমন্ত্রকের তরফেও শোক প্রকাশ করা হয়েছে। আটকে থাকা ভারতীয়দের দ্রুত ফিরিয়ে আনার জন্য ৪৬টি বিমানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ থেকে আগামী দুইদিনের মধ্যেই ২৬টি বিমান ইউক্রেন(Ukraine)-র পার্শ্ববর্তী দেশ রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড ও স্লোভাক ইউনিয়নে পাঠানো হবে।
খারকিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ছাত্র নবীন গত বৃহস্পতিবার যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাকি কয়েকজন পড়ুয়ার সঙ্গে খারকিভে আটকে ছিলেন, সেখানেই একটি বাঙ্কারে তারা লুকিয়ে ছিলেন বিগত কয়েকদিন ধরে। বিদেশ মন্ত্রক ও ইউক্রেনে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসের তরফে দ্রুত দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পরই তারা স্থির করে ট্রেন ধরে কোনও একটি সীমান্তে পৌঁছবেন। সেখান থেকে সীমান্ত পার করে ভারতীয় বিমানে দেশে ফিরে আসবেন। কিন্তু একটা বোমাই তছনছ করে দিল সমস্ত পরিকল্পনা।
কর্নাটকের বাসিন্দা নবীন ডাক্তারির শেষবর্ষের পড়ুয়া ছিলেন। সোমবার বাঙ্কার ছেড়ে বেরনোর আগেই তাঁর বাবা শেখর গৌড়ার সঙ্গে কথা হয়েছিল। সেই সময় নবীন জানিয়েছিল, তাদের সমস্ত খাবার, জল ফুরিয়ে গিয়েছে। খারকিভ ছেড়ে বেরনোর আগে তাদের কিছু খাবার কিনতেই হবে। সেইমতোই বাঙ্কার থেকে বেরিয়ে সামনেরই একটি মুদি দোকানে গিয়েছিল নবীন। সেখানে লাইন থাকায়, নবীন দোকানের বাইরে অপেক্ষা করছিল। ওই দোকানের উল্টোদিকেই একটি সরকারি বিল্ডিং ছিল। রুশ সেনা সেই বিল্ডিংকেই নিশানা করে বোমা ফেলে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে ছিটকে যায় নবীন। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
With profound sorrow we confirm that an Indian student lost his life in shelling in Kharkiv this morning. The Ministry is in touch with his family.
We convey our deepest condolences to the family.
— Arindam Bagchi (@MEAIndia) March 1, 2022
খারকিভের স্টুডেন্ট কো-অর্ডিনেটর পুজা প্রহারাজ বলেন, “নবীন খাবার কিনতেই বেরিয়েছিল। যারা এতদিন হস্টেলে থাকছিল, তাদের জন্য আমরাই খাবারের ব্যবস্থা করছিলাম। কিন্তু নবীন খারকিভের গভর্নরের বাড়ির পিছনেই একটি ফ্ল্যাটে থাকত। সোমবার খাবার কিনতে বেরিয়েছিল ও, প্রায় এক-দু’ঘণ্টা ধরে দোকানের বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময়ই গভর্নরের বাড়ির উপর হামলা হয়, ওই বিস্ফোরণেই মৃত্যু হয় নবীনের। বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়ার পরই ক্রমাগত নবীনকে ফোন করা হচ্ছিল। বেশ অনেকক্ষণ পর একজন ফোন ধরেন, তিনিই জানান যে ফোনের মালিকের মৃত্যু হয়েছে, তাকে মর্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।”
অন্যদিকে, নবীনেরই আরেক বন্ধু শ্রীধরন গোপালকৃষ্ণান অন্য বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, হামলার দিন নবীন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ ঘর থেকে বেরিয়েছিল। সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আচমকা এলাকায় হাজির হয় বন্দুকধারী রুশ সেনা। তারাই ওই মুদি দোকানে স্থানীয়দের ভিড় দেখে এবোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। গুলি লেগেই নবীনের মৃত্যু হয়। নবীনের দেহ এখন কোথায় রয়েছে, সেই সম্পর্কেও বাকিরা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন।