নয়া দিল্লি: দীর্ঘদিন ধরে ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েন থাকার পর সেনাবাহিনী যখন ফিরতে শুরু করেছিল তখন অনেকই মনে করেছিলেন রাশিয়া হয়ত ইউক্রেনে আক্রমণ করবে না। কিন্তু যাবতীয় জল্পনা মিথ্যে প্রমাণ করে ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখ অতর্কিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রুশ বাহিনী (Russia-Ukraine War)। ইউক্রেন হামলার পর থেকে রাশিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে গোটা বিশ্বে ধন্দ্ব তৈরি হয়েছে। কারণ রাশিয়া পরমাণু যোদ্ধা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে। রাশিয়া ইউক্রেনে পরমাণু হামলা করতে পারে, এই আশঙ্কাও অনেকেরই রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে, কারণ একবার পরমাণু যুদ্ধ শুরু হলে তার ফল যে মারাত্মক হতে পারে, তা হয়ত সকলেই জানেন। তাই রাশিয়ার হুমকিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে পশ্চিমী দেশ গুলি।
ইউক্রেন হামলার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ ইতিমধ্যেই অনেকগুলি দেশ রাশিয়ার ওপর আর্থিক ও কূটনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমনকী রাশিয়ার থেকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সবথেকে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম সুইফ্টও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ান মুদ্রা রুবেলের দামে রেকর্ড পতন দেখা গিয়েছে, ফলে রাশিয়াতে অর্থনৈতিক মন্দা আসার সম্ভাবনা যে প্রবল তা রুশ প্রশাসনের শীর্ষ মহলও অস্বীকার করেনি। তাসত্ত্বেও পিছিয়ে আসার কোনও লক্ষণ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কার্যকলাপে দেখা যায়নি।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ নিজেদের অবস্থানে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারতের অবস্থা সামান্য হলেও দুর্বল হয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। কারণ ইউক্রেন হামলার প্রতিবাদে রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকা ও তাদের বন্ধু দেশগুলির রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল ভারত। ভারতের এই অবস্থান সম্ভবত ভাল চোখে নেয়নি আমেরিকার। ভারত ছাড়াও সৌদি আরব ও চিন রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরতস ছিল। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের এই অবস্থানের ফলে নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পাওয়ার ভারতের দীর্ঘদিনের দাবি নিয়ে আপাতত আর কোনও আশার আলো নেই। এতদিন মূলত চিনের আপত্তিতেই নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের সদস্যপদের বিষয়টি আটকে ছিল, এবার হয়ত আমেরিকাও ভারতে পক্ষে থাকবে না।
রাশিয়া ভারতের পুরানো বন্ধু। যে কোনও ইস্যুতে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতে পাশে থেকেছে রাশিয়া। ভারত হয়ত মনে করছে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ও চিনের মধ্যে যে সমস্যা চলছে, চিনের বন্ধুর রাশিয়ার হাত ধরেই হয়ত সেই সমস্যার সমাধান হবে। বিজেপি সমর্থকরা ইউক্রেন ইস্যুতে ভারতের অবস্থানের প্রশংসায় গলা ফাটালেও আসলে এই অবস্থান নিয়ে ভারতের ক্ষতির সম্ভাবানই বেশি বলেই মনে করছেন অনেকে। পাকিস্তান চিনের প্রশ্রয়ে ভারত বিরোধিতা আরও জোরালভাবে করতে পারে এই বিষয়টি এখন দিনে আলোর মত স্পষ্ট। এখন চিন ও পাকিস্তান যদি যৌথভাবে ভারতকে আক্রমণ করে, সেক্ষেত্রে আমেরিকা তথা পশ্চিমী দেশগুলির সমর্থন ভারতের পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। রাশিয়া কী তখন বিনা শর্তে নিঃস্বার্থভাবে ভারতকে সমর্থন করবে? সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।