নয়া দিল্লি: সুটকেসে ভিতর থেকে আধপোড়া একটি দেহ (Half Birned Body) ঘিরেই রহস্যের সূচনা, একের পর এক পর্দা ফাঁস করে যখন অপরাধের গোড়ায় পৌঁছেছিল পুলিশ, তখন চমকে গিয়েছিলেন। মা-মেয়ের সম্পর্কের সমীকরণ ও টানাটানিতেই ২০১২ সালে খুন হতে হয়েছিল শীনা বোরা(Sheena Bora)-কে। খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁরই মা ইন্দ্রাণী মুখার্জী(Indrani Mukherjea)-কে। ৯ বছর পরে সেই হত্যাকাণ্ডেই আসল নয়া মোড়। সিবিআই(CBI)-র কাছে ইন্দ্রাণী মুখার্জী দাবি করলেন, শীনা বোরা জীবিত রয়েছেন।
সিবিআই প্রধানকে লেখা চিঠিতে ইন্দ্রাণী মুখার্জী দাবি করেছেন, জেলেই এক বন্দি তাঁকে জানিয়েছেন যে শীনা মারা যায়নি, জীবিতই রয়েছে। কাশ্মীরে শীনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ওই বন্দির। সিবিআই যেন কাশ্মীরে গিয়ে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে, তাঁর আবেদনও জানিয়েছেন প্রাক্তন মিডিয়া এক্সেকিউটিভ ইন্দ্রাণী মুখার্জী।
ইন্দ্রাণী মুখার্জীর আইনজীবী সানা খানকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “উনি সিবিআইয়ের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে ওই চিঠিতে কী লেখা রয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা নেই।” তিনি ফের জামিনের জন্য আবেদন করবেন বলেও জানান।
মেয়ে শীনা বোরাকে খুনের অভিযোগে ২০১৫ সাল থেকেই মুম্বইয়ের বাইকুল্লা জেলে রয়েছেন ইন্দ্রাণী মুখার্জী। ২০১২ সালের এপ্রিল মাস থেকে নিখোঁজ ছিলেন শিনা বোরা। পরের মাসেই মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলা থেকে একটি সুটকেস উদ্ধার করা হয়। সেই সুটকেস থেকে উদ্ধার হয় একটি আধ পোড়া দেহ। সূত্র ধরে গ্রেফতার করা হয় ইন্দ্রাণী মুখার্জীর গাড়ির চালক শ্য়াম রাইকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই জানা যায়, গোটা ঘটনার আসল চক্রী ইন্দ্রাণী মুখার্জী।
২০১৫ সালে পুলিশ শিনা বোরার হত্যার অভিযোগে ইন্দ্রাণী মুখার্জীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে জানা যায়, তিনিই শীনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিলেন। শিনা তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান ছিলেন। শিনা ও তাঁর ভাই মিখাইল ইন্দ্রাণীর মা-বাবার কাছেই বড় হয়েছিলেন, ইন্দ্রাণী যে তাঁদের মা, সে কথাও তাঁরা জানত না প্রথমে।
পরে গোটা ঘটনা জানতে পেরেই মুম্বইয়ে ইন্দ্রাণীর কাছে হাজির হয় ২৪ বছরের শিনা। ততদিনে স্টার ইন্ডিয়ার সিইও পিটার মুখার্জীকে বিয়ে করেছেন ইন্দ্রাণী। পিটার ও তাঁর ছেলে রাহুলের কাছে শিনাকে নিজের বোন বলে পরিচয় দেন ইন্দ্রাণী। কিছুদিন সবকিছু ঠিকঠাক চললেও টাকা নিয়ে ঝামেলা হতেই মায়ের আসল পরিচয় ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি।
অন্যদিকে, ইন্দ্রাণী জানতে পারেন পিটার মুখার্জীর ছেলে রাহুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে শিনা। এরপরই তিনি শিনাকে খুন করেন। রাহুল খোঁজ করলে তাঁকে জানান, শিনা বিদেশে পড়াশোনা করতে গিয়েছে। সিবিআই তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করেই গ্রেফতার করে ইন্দ্রাণী মুখার্জীকে। খুনে সাহায্য করার অপরাধে পরের দিনই গ্রেফতার করা হয় দ্বিতীয় স্বামী সঞ্জীব খান্নাকে। তিনমাস পর গ্রেফতার করা হয় পিটার মুখার্জীকেও। জেলে থাকাকালীনই ২০১৯ সালে ইন্দ্রাণী মুখার্জীর সঙ্গে ১৭ বছরের সম্পর্ক শেষ করে বিবাহবিচ্ছেদ করেন পিটার মুখার্জী। ২০২০ সালে জামিনে মুক্তি পান পিটার মুখার্জী।
৯ বছর পরে ইন্দ্রাণী মুখার্জীর নতুন দাবিতে ফের একবার রহস্য তৈরি হয়েছে। তবে সূত্রের দাবি, তদন্তকারীরা ইন্দ্রাণীর দাবিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। এর আগেও ইন্দ্রাণী একাধিকবার মিথ্য়া বয়ান দিয়ে তদন্তকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।