
নয়া দিল্লি: নিউজিল্যান্ড সরকার তামাক শিল্পের উপর সবচেয়ে কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে। শুধু নিউজিল্যান্ডই নয়, বিশ্বজুড়ে বেশকিছু দেশ তামাক ব্যবহারের ফলে হওয়া ক্ষতি আর হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপর এর ক্রমবর্ধমান বোঝা কম করার জন্য তামাকজাত পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা বাড়াচ্ছে। ভারতেও বেশকিছু স্তরে তামাকজাত পণ্যের বিক্রি কম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে এর মধ্যেই সিগারেট কোম্পানিগুলির আয় বাড়তে দেখা গিয়েছে। কেনও এমনটা দেখা যাচ্ছে যেখানে একদিকে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহরা কম করার উপায় খোঁজা হচ্ছে অন্যদিকে কোম্পানিগুলির উপর এর কোনও প্রভাব পড়ছে না।
বিশ্বজুড়ে কড়া হচ্ছে তামাক ব্যবহারের নিয়ম
নিউজিল্যান্ড সরকার ঠিক করেছে ২০২৭ এর পর থেকে ১৪ বছর বা তার চেয়ে কম বয়সীরা সিগারেট কিনতে পারবে না। অন্যদিকে সরকার রিটেলারদের সংখ্যা কম করতে আর তামাকজাত পণ্যে নার্কোটিক্সের স্তর কম করার জন্য কড়া নিয়ম তৈরি করার কথাও বলেছে। অন্যদিকে ভারতও লাগাতার সিগারেট আর তামাকের চাহিদা কম করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকার সিগারেট আর তামাকজাত পণ্যের উপর সতর্কবার্তার সাইজ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত অনেক আগেই নিয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার সমস্ত তামাকজাত পণ্যের উপর সবচেয়ে বেশি ট্যাক্স বজায় রেখেছে। বর্তমানে তামাকের পাতা বাদ দিয়ে বাকি সমস্ত তামাকজাত পণ্য ২৮ শতাংশের সবচেয়ে উঁচু ট্যাক্স স্লাবে রাখা হয়েছে। গত মাসেই সরকার সমস্ত তামাকজাত পণ্যের উপর ট্যাক্সের ব্যাপারে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছে। যার মধ্যে স্বাস্থ্য, জিএসটি, নীতি আয়োগ, সিবিআইসির সদস্যরা শামিল হবেন। ট্যাক্স বসানোর সময় তামাকজাত পণ্যকে সিন গুডস (sin goods) মনে করা হয়, অর্থাৎ এগুলি সেই পণ্য, যার উপর আয়ের জন্য নয়, বরং তার বিক্রি সীমিত করার জন্য কর বসানো হয়।
সিগারেট কোম্পানিগুলির উপর পড়ছে না প্রভাব
সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সিগারেট কোম্পানিগুলির আর্থিক অবস্থার উপর কোনও প্রভাব দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফলাফল প্রকাশ করার সময় এই ক্ষেত্রের সবচেয়ে বড় কোম্পানি আইটিসি জানিয়েছে তাদের সিগারেট ভলিউম আবারও কোভিড স্তরের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। এই ত্রৈমাসিকে সিগারেট সেগমেন্টের আয় গত বছরের এই সময়সীমার তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়ে ৫৬৪২ কোটি টাকায় পৌঁছে গিয়েছে। যা কোম্পানির মোট স্ট্যান্ড অ্যালোন আয়ের ৪০ গুন বেশি। এই ত্রৈমাসিকে কোম্পানির লাভ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৩৭০০ কোটি টাকা হয়েছে। আইটিসি সিগারেট ব্যবসায় সবচেয়ে বড় কোম্পানি আর তার বাজারের ৭৮ শতাংশের উপর কব্জা রয়েছে।
সরকারের কড়া নীতি সত্ত্বেও বাড়ছে সিগারেট কোম্পানি
সিগারেট কোম্পানিগুলির ক্রমবৃদ্ধিমান আয়ের পেছনে তাদের পরিবর্তিত রণনীতি আর গ্রাহকদের পছন্দ অপছন্দই প্রধান কারণ। করোনা আর সরকারের কড়া পদক্ষেপের কারণে সিগারেট কোম্পানিগুলি নিজেদের বিক্রির স্ট্রাটেজি বদলে দিয়েছে। আইটিসি মুদিখানার দোকানগুলির উপর নজর বাড়িয়ে দিয়েছে। আসলে দক্ষিণ আর পূর্ব ভারতে মুদিখানার দোকানের মাধ্যমে সিগারেটের বিক্রি ১০ শতাংশেরও কম। আইটিসি এখন এই স্টোরগুলিতে পৌঁছতে চাইছে। অন্যদিকে কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সাক্ষাতে জানিয়েছে যে তারা নতুন ব্র্যান্ড লঞ্চ করছে। যেখানে পরিবর্তিত সময়ের প্রয়োজনগুলিকে মাথায় রাখা হয়েছে। এতে বিক্রির উপর প্রভাব দেখতে পাওয়া গিয়েছে, সেই সঙ্গে গ্রডফ্রে ফিলিপস দেশের বাইরে নতুন বাজারের সন্ধান করে বিক্রি বাড়ানোর উপর নজর দিচ্ছে। অন্যদিকে এস্কর্টস সিকিউরিটিজের রিসার্চ হেড আসিফ ইকবালের বক্তব্য অনুযায়ী, ২৮ শতাংশ জিএসটি ট্যাক্স যতই অতিরিক্ত হিসেবে বড় প্রভাব দেখাক, কিন্তু ট্যাক্স সবসময় বেশিই থেকেছে, তাতে গ্রাহকদের পকেটে এত বেশি প্রভাব পড়ে না যে তারা সিগারেট একেবারেই ছেড়ে দেবেন। অন্যদিকে সহজ প্রাপ্যতা আর অভ্যেসের মতো বেশকিছু কারণ রয়েছে, যার ফলে সিগারেট বিক্রির উপর বিশেষ কোনও প্রভাব পড়ছে না।
বিশ্বজুড়ে তামাক ব্যবহার কমেছে ধীর গতিতে
সচেতনতা বাড়ায় আর সরকারের পদক্ষেপে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার কম হওয়ার সংকেত রয়েছে, তবে এর গতি ভীষণই কম। ডব্লিউএইচওর রিপোর্ট অনুযায়ী, তামাক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ২০১৫-য় ১৩২কোটি থেকে কমে ২০২০-তে ১৩০ কোটিতে নেমেছে। অন্যদিকে এই রিপোর্টে অনুমান করা হয়েছে যে ২০২৫ পর্যন্ত এই সংখ্যাটি ১২৭ কোটিতে নামতে পারে। বর্তমানে তামাক ব্যবহার করার হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এখানের মোট জনসংখ্যার ২৯ শতাংশ অংশ তামাক সেবন করে। পুরো বিশ্বে এটি ২২.৫ শতাংশের সমান।